আরেকটি ধোঁকাবাজির সংসদ নির্বাচন

  • আবুল কালাম মানিক
  •  ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৫৮
আরেকটি ধোঁকাবাজির সংসদ নির্বাচন। – ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বীকৃতি কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের দাবির ওপর নির্ভর করে না। এটি মূলত নির্ভর করে নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতির ওপর। বাস্তবতার নিরিখে অনেক সময় সমসুযোগের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অভিন্ন দাবি সত্ত্বে ও ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে-বিদেশে স্বীকৃতি কিংবা বৈধতা কোনোটিই পায়নি। এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও একই পরিণতি লাভ করবে। শেষ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আওয়াল এই সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। তবে আশার কথা, তিনি নির্বাচনকেন্দ্রিক বিবাদ ও বিতর্ককে রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘নির্বাচনে যদি বড় দলগুলো একবারেই অংশগ্রহণ করল না, নির্বাচনের লিগ্যালিটি নিয়ে কোনো সঙ্কট হবে না। কিন্তু লেজিটিমেসি শূন্যের কোটায় চলে যেতে পারে।’ তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেন সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান করে ভোটের পরিবেশ তৈরি করে দেয়। তার এই আবেদনই প্রমাণ করে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও বৈধ নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের সাধ্যের অতীত।

তবে নির্মম বাস্তবতা এই যে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অতীতের সব একতরফা, বিতর্কিত ও জালিয়াতির নির্বাচনের নির্লজ্জ সাফাই গেয়েছে। আউয়াল কমিশন তার ব্যতিক্রম কিছু একটা জাতিকে উপহার দেবে এমনটি কল্পনা করা নিতান্তই কষ্টকর। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যে নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ উপর্র্যুপরি তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসীন হয়েছে তা মোটেও অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। দিবা-নিশির কলঙ্কিত নির্বাচন প্রসঙ্গটি এমন সময়ে আবারো সামনে এলো যখন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র জনমনে ক্রমেই সন্দেহ, সংশয় ও আতঙ্ক দানা বাঁধছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের আস্ফালন ও হুমকির বিপরীতে আন্দোলনরত প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে। বিএনপি এমনকি নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। এতে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষীণ আশাও ক্রমেই তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে।

এটি স্বতঃসিদ্ধ যে, নির্বাচন সংক্রান্ত বর্তমান বিরোধ পরিপূর্ণ রাজনৈতিক সঙ্কট। পারস্পরিক আস্থা, সংলাপ ও সমঝোতাই তার একমাত্র সমাধান। চতুরতা, একগুয়েমি কিংবা বল প্রয়োগে এই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। সংবিধান ও আইনের দোহাই দিয়ে জালিয়াতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা সঙ্কট আরো ঘনীভ‚ত করবে। অতীতে এমনিতর পরিস্থিতিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের হঠকারিতায় জানমালের প্রভ‚ত ক্ষতি হয়েছে। দেশের মানুষ আজো তার রেশ টানছে। চলমান ঘটনাপ্রবাহে প্রতীয়মান হচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্মম এই বাস্তবতায় মোটেও বিশ্বাসী নয়। বাস্তবতা কিছুটা উপলব্ধি করলেও নির্বাচন কমিশন এতে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নয়। জনগণের ভোটাধিকার হরণের পাশাপাশি গণতন্ত্রের পতন ও স্বৈরতন্ত্রের উত্থানে সরকার ও নির্বাচন কমিশন মোটেও বিচলিত নয়। তারা উভয়েই সংবিধান ও আইন-কানুনের দোহাই দিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের কাঁধে বন্দুক রেখে জালিয়াতির নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকারের এই অশুভ পরিকল্পনায় সায় দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে আউয়াল কমিশন। অতীতের ব্যর্থ ও গণধিকৃত কমিশনগুলোর পদাঙ্কই অনুসরণ করছে তারা। রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সরকারের ওপর কাক্সিক্ষত চাপ প্রয়োগে কমিশনারদের অনীহা আরেকটি অশুভ নির্বাচনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের অব্যাহত ব্যর্থতায় বাংলাদেশের নির্বাচনে সরকারি দলের নিরন্তর বিজয় এবং বিরোধী দলের স্থায়ী পরাজয় একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারই সুবাদে জাতীয় সংসদ থেকে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির নির্বাসন ত্বরান্বিত হয়েছে বেশ আগে। এখন নতুন করে শুরু হয়েছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁবেদার বিরোধী দলীয় প্রার্থী সংগ্রহের কাজ।

চলমান গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ওপর পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের একটি সংসদ নির্বাচন করার আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের পুনঃবিজয় অবধারিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো কমিশনই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল ও তার সহযোগীরা এই ঐতিহাসিক বাস্তবতা পাশ কাটিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নীতি-নৈতিকতা ও বিবেক বিসর্জন দিয়ে তারা সরকারকে বিপজ্জনক পথে হাঁটতে কার্যকর সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

নিকট অতীতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দু’টি একতরফা ও বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের কলঙ্ক কমিশনাদের বিবেকে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করেনি। তাদের ভাবভঙ্গি, কথাবার্তা ও সার্বিক কর্মকাণ্ড স্পষ্ট আভাস দিচ্ছে, তারা দেশবাসীকে আওয়ামী লীগের ভাষায় একটি ‘নিউ মডেল’ জাতীয় নির্বাচন উপহার দিতে উদগ্রীব। আউয়াল কমিশনের প্রযোজনায় সম্পতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে কাক্সিক্ষত মডেলটির একটি মহড়াও হয়ে গেছে। এতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে উপহাসের নিমিত্তে বিতর্কিত এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মাঠে হাজির করা হয়। সব যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে হাওয়া করে দেয়া হয়। নামমাত্র ভোটারের অংশগ্রহণে এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগের সমর্থনে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করা হয়। অনেকে ব্যঙ্গ করে নির্বাচনটিকে ‘ছাত্তার মডেল’ হিসেবে অবহিত করেছে। কিন্তু আউয়াল কমিশন চোখ বন্ধ করে নির্বাচনের নামে এই প্রহসন মেনে নিয়েছে।

আরেকটি কলঙ্কিত ও অশুভ জাতীয় নির্বাচন পরিহারের একমাত্র উপায় হলো বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতা। আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য এই সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে কমিশনের অনীহা প্রমাণ করে, তারা জনগণের অধিকার সুরক্ষায় বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে রাজি নন। কমিশন সরকারের প্রত্যাশা পূরণে অধিক যত্নশীল। পূর্ববর্তী কমিশনগুলোর মতো তারাও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষায় চরমভাবে উদাসীন। তাদের আচরণে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা শতভাগ আশ্বস্ত যে, আগামীতে একটি নিউ মডেল নির্বাচন উপহার দিতে আউয়াল কমিশনের তেমন বেগ পেতে হবে না। অতি সম্প্রতি সরকারপন্থীরা দেশের সচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কাক্সিক্ষত নিউ মডেলটির একটি প্রায়োগিক প্রদর্শনী মঞ্চস্থ করেছে। পুলিশ বেষ্টনীর এক তরফা নির্বাচনে তুমুল প্রতিবাদ, হাঙ্গামা ও ধস্তাধস্তির মধ্য দিয়ে সবকটি পদ সরকারপন্থী আওয়ামী লীগ প্যানেল দখল করে নিয়েছে। দেশের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এটিকে নজিরবিহীন লজ্জা হিসেবে আখ্যায়িত করলেও নতুন এই মডেলটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

এই নির্বাচনে পুলিশের একপেশে ও মারমুখি ভূমিকা আউয়াল কমিশনকে সরকারের মিশন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা জোগাবে। অনুগত কমিশনের সুবাদে আওয়ামী লীগ অতীতে প্রতিটি নির্বাচনকে মডেলে উন্নীত করে নিজস্ব বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে এবং বিরোধী দলকে কার্যত নির্মূল করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১৯৭৩, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির সাফল্য নজিরবিহীন। ওই মডেল নির্বাচনগুলোতে বিনাভোটে ফলাফল নির্ধারিত হওয়ায় দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতাকে ভোট দিতে হয়নি। ব্যালট গ্রহণ ছাড়াই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ভোটের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভরাট করা হয়। এটি নিশ্চিত বলা যায়, শুধু সংবিধান ও আইনের দোহাই দিয়ে আউয়াল কমিশন যদি একতরফা নির্বাচনের পথে পা বাড়ায় তাহলে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আরো অনেক কলঙ্কজনক উপাদান যুক্ত হবে।

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেশবাসীর প্রতি নৈতিক ও সাংবিধানিক দায় শোধ করতে হলে কমিশনকে অবশ্যই নিকট অতীতের ব্যর্থতাগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে কঠোর হতে হবে। একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারি চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সংসদ নির্বাচনে ইতোমধ্যে সংঘটিত কলঙ্কজনক ঘটনাগুলোর নির্মোহ পর্যালোচনা করতে হবে। তাদের মোটেও ভুলে গেলে চলবে না যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীন ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি ছিল একটি জঘন্য উদাহরণ। ভারতীয় পত্রিকা দ্য হিন্দু এটিকে বলেছিল ‘পোকায় খাওয়া নির্বাচন’ আর দ্য স্টেটসম্যান বলেছিল ‘একদলীয় ধোঁকাবাজির নির্বাচন’। তা ছাড়া বিখ্যাত ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ২০১৮ সালের নির্বাচনী পর্যালোচনায় বলেছিল, ‘শেখ হাসিনা কলঙ্কিত বিজয়ের পথে হাঁটছেন’। ওই কলঙ্কিত নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালটবাক্সে ব্যালটপেপার পূর্ণ করা, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান, জাল ভোট প্রদান, বিধি লঙ্ঘন করে ভোটকেন্দ্রে লম্বা সময়ের বিরতি পালন ও বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধাসহ শতাধিক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট গ্রহণ এবং প্রায় অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে বিরোধী দলের প্রার্থীর শূন্য ভোট রেকর্ড করা হয়েছিল। আউয়াল কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্বশীলরা নির্বাচনের নামে এই অনাচারকে কিভাবে মূল্যায়ন করবে।

এটি বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী আচরণ সম্পর্কে গাফেল থাকলে আউয়াল কমিশন দেশের মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র সুবিচার করতে পারবে না। বিগত ব্যর্থ রাকিব ও হুদা কমিশনই তার জ্বলন্ত উদাহরণ। বর্তমান কমিশনকে এটি ভুলে গেলে চলবে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস পেয়েই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি পুরোপুরি ভঙ্গ করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে উচ্চ মাত্রার সহিংসতা এবং বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর সরকারি দল ও পুলিশের অব্যাহত হামলা দেশের মানুষসহ সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা অনেকটা বাধ্য হয়েই নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলা এবং বিভিন্ন জেলায় প্রাণহানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে ২৭ ডিসেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার স্বল্পসময়ের নোটিশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার সাথে সাক্ষাৎ করে তার দেশের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।

অতীতে পুলিশের ছত্রছায়ায় সরকারদলীয় নির্বাচনী সন্ত্রাস ও অনিয়মের ঘটনাগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ, উপায়-উপকরণ সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় না করে বিএনপিসহ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিক্ষুব্ধ বিরোধী দলগুলোকে আসন্ন দ্বাদশ নিউ মডেল নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো একটি প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হলে আগের রাকিব ও হুদা কমিশন সেই সুযোগ মোটেও হাতছাড়া করত না। মাঠপর্যায়ের নির্মম বাস্তবতা অস্বীকার করে আউয়াল কমিশনের কেউ কেউ বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারলে তারা পদত্যাগ করবেন। একতরফা, বিতর্কিত ও জালিয়াতির নির্বাচনে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগের বিষয়টি বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করেছিলেন সাবেক স্পষ্টভাষী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ব্যর্থ নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি বিতর্কিত সংসদ ও অবৈধ সরকার প্রতিষ্ঠার পর আউয়াল কমিশনের কমিশনাররা পদত্যাগ করবেন এটি পাগলেও বিশ্বাস করে না।

দেশের সমূহ ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর এ ধরনের পদত্যাগে দেশের কিই-বা কল্যাণ হবে? অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ২০১৪-২০১৮ সালের পোকায় খাওয়া ও কলঙ্কিত নির্বাচনের পথ ধরে দেশে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ইতিহাসে প্রমাণ রয়েছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো কমিশনই জাতিকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যে নির্বাচন উপহার দিতে পারেনি। এমনি বাস্তবতায় আউয়াল কমিশন ক্ষমতাসীন সরকারের অনুকূলে একটি ধোঁকাবাজির নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া ভিন্ন কিছু করবেন বা করার ইচ্ছা পোষণ করে, এমনটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।