আবারও রাজপথে আ’লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

আবারও রাজপথে আ’লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

প্রায় দুই মাস পর ফের রাজপথে মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আজ শনিবার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে দুই দল। আওয়ামী লীগ প্লাটিনাম জয়ন্তীর আলোচনা সভা এবং বিএনপি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশের মাধ্যমে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ক্ষমতাসীন এবং রাজপথের সরকারবিরোধী প্রধান দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সব মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ ব্যানারে সমাবেশ হবে। বিএনপি ঘোষিত সারাদেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে তিন দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই আয়োজন করা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা এতে বক্তব্য দেবেন।

অন্যদিকে একই সময়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে আলোচনা সভা হবে। দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অর্থাৎ প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে সারাদেশে চলমান বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সভা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা এতে বক্তব্য দেবেন।

গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর ২৭ জানুয়ারি রাজধানীতে বিএনপি কালো পতাকা মিছিল করে।  ওইদিন আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ এবং সতর্ক অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন-পরবর্তী প্রথম রাজপথে মুখোমুখি হয় দুই দল। সর্বশেষ মহান মে দিবসে শ্রমিক সমাবেশের মাধ্যমে দল দুটি রাজধানীতে শোডাউন করে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ব্যানারে সমাবেশ হয়।

এর আগে ২০২২ সালের জুলাই বিএনপি ও তার মিত্রদের সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়। ওই সময় থেকেই তাদের রাজপথের কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ এবং সতর্ক অবস্থানের কর্মসূচি পালন করে আসছিল। গত বছর ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক নাশকতা-সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও হয়। সহিংসতায় একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এরপর থেকে কয়েক দফায় হরতাল-অবরোধের ডাক দিলেও ব্যাপক ধরপাকড়, মামলা ও নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের কারণে নামকাওয়াস্তে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি পালন ছাড়া বিএনপি জোরালোভাবে মাঠেই নামতে পারেনি। বিরোধীদের বর্জনের মুখে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

ব্যাপক শোডাউন করতে চায় আওয়ামী লীগ
নির্বাচন-পরবর্তী বিরোধী দলের রাজপথের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়লেও আজকের আলোচনা সভাকে ঘিরে রাজধানীতে আবারও বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য ঢাকা মহানগর বিশেষ করে দক্ষিণ অংশের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে সভাস্থলে সমবেত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীকে এতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। মহানগরীর সরকারদলীয় এমপি ও জনপ্রতিনিধিদেরও সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আলোচনা সভা ছাড়াও বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে মহানগরের সর্বত্র সতর্ক অবস্থানে রাখা হবে নেতাকর্মীকে।

দলের নেতারা বলছেন, আন্দোলন ও নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ বিএনপি ও তার মিত্ররা এখনও সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সারাবিশ্ব থেকে এই নির্বাচন ও নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন জানানোর পরও বিএনপি একের পর এক কর্মসূচি দিচ্ছে। দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নস্যাতে বিএনপির কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হবে না। কোনো সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়া মাত্রই তা মোকাবিলায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মী মাঠে থাকবেন।

তবে বরাবরের মতো এবারও কর্মসূচিকে পাল্টাপাল্টি আয়োজন বলতে নারাজ আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সাইকেল শোভাযাত্রায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে না। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচি আগেই ঘোষিত হয়েছে। কেন্দ্রের পর মহানগর ও আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনও অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম সমকালকে বলেন, নির্বাচন শেষেও বিএনপির ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আবারও আন্দোলন কর্মসূচির নামে রাজপথে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাস করতে চাইলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন তারা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা করছি। সমাবেশের নামে বিএনপি ও তার মিত্ররা সন্ত্রাস করতে চাইলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।’

ফের রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজকের সমাবেশের মাধ্যমে ফের রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের মাধ্যমে বড় শোডাউন করতে যৌথ সভা, কর্মিসভাসহ নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা। সমাবেশ সফল করতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বিএনপিকে আজকের সমাবেশ করার জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে গত বুধবার বিএনপি ডিএমপি কমিশনারের দপ্তরে চিঠি পাঠায়। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।

দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ও হতাশ নেতাকর্মীকে রাজপথে ফিরিয়ে আনতে চায় বিএনপি। এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় দল। এ ছাড়া বেনজীর-আজিজ, ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমানসহ সরকারঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি-লুটপাট এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ অন্যান্য ইস্যুতেও আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে তারা। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি-সমঝোতাগুলোকে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেবে দলটি।

একই সঙ্গে বিএনপির সমমনা অন্যান্য দল ও জোট মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ আগামী ৫ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভারতের সঙ্গে ‘সার্বভৌমত্ববিরোধী-অসম চুক্তি’র প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এ ছাড়া ১২ দলীয় জোট এবং বিএনপির মিত্র বাম ঘরানার দলগুলোকেও সক্রিয় করা হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন থেকে তারা সরে যাননি। গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে আলাদা করা যাবে না। এ কারণেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সামনে রেখে রাজপথে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলবেন তারা। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছেন বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক সমাবেশ হবে।

samakal

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here