আওয়ামী লীগ দুর্বল হলে পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য

স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি, পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা এখনও তৎপর রয়েছে পরাজয়ের বদলা নিতে। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানবে। তাদের সামনে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে-কৌশলে নিশ্চিহ্ন বা দুর্বল করতে পারলেই পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য। কাজেই কাণ্ডারি হুঁশিয়ার।

গতকাল সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাঙালি বীরের জাতি। যুদ্ধ করে আমরা এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’– জাতির পিতা নির্দেশিত এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেই আমরা দেশ পরিচালনা করি। আমাদের কোনো প্রভু নেই, আছে বন্ধু। তাই কারও রক্তচক্ষু বাঙালি জাতি কোনোদিন মেনে নেবে না। প্রয়োজন হলে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সম্মান রক্ষা করবে।

১৮ মিনিটের ভাষণের শুরুতে দেশ ও দেশের বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং রমজানের শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার এবং পঁচাত্তরের পর পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করেছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ তাঁকে (শেখ হাসিনা) পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব দিয়েছে। দেশবাসীর প্রতি কর্তব্য পালন এবং তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজ আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার এ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি সবার সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটাবার। স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকীতে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমরা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটা কোনো অসার বাগাড়ম্বর দাবি নয়। বাংলাদেশ আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আমরা প্রমাণ করেছি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদ দিয়েও একটি দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সরকার পরিচালনা করছে। এই ১৫ বছরের অভিযাত্রা একেবারেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, মহামারি, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি দেশি-বিদেশি শক্তির নানা ষড়যন্ত্র আমাদের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করেছে বারবার।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। সে ধকল কাটতে না কাটতেই ২০২২ সালের গোড়ার দিকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ আরোপের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো চরম সংকটে পড়েছে। নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন ব্যাহত হচ্ছে। এসব পণ্যের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এর সঙ্গে গত বছরের শেষে যুক্ত হয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ ও ২০১৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসন্ত্রাস ও অগণিত মানুষ হত্যার মতো নৃশংসতা এখনও জনমনে গভীর দাগ কেটে আছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও তার মিত্ররা এবারও হরতাল-অবরোধ ও অগ্নসংযোগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সূচনা করেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে এবার তাদের পিছু হটতে হয়। তবুও তাদের হাতে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়।

তিনি বলেন, এসব অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এক সময়ের দারিদ্র্য-জরাক্লিষ্ট বাংলাদেশ আজ উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হবে।

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা এ বছর সরকারি ও দলগতভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন নিরুৎসাহিত করেছি। আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠন নির্দেশ মতো তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গরিব-দুস্থদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করছে।

তিনি বলেন, রমজান মাসের শুরুত খেজুর, আমদানি করা ফল, লেবু, তরমুজ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা চড়া ছিল। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই দাম স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের কষ্ট লাঘবের।
দৃঢ়কণ্ঠে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, হাজারও শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ কখনও ভূলুণ্ঠিত হতে দেবে না। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ আমরা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছি। দেশের সব গণতান্ত্রিক দল এবং সাধারণ মানুষকে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, দেশের সংবিধানই গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া ও সমুন্নত রাখার সর্বোচ্চ রক্ষাকবচ। সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে বা পদদলিত করে কোনো কিছু করার চেষ্টার অর্থ হচ্ছে গণতন্ত্রকে খর্ব করা। আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই সংবিধানকে সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। জাতীয় সংসদকে আমরা রাষ্ট্রের সব কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। স্থানীয় সরকারের সব স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকীতে আসুন, সব কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।

SAMAKAL