আইপিএল নিলামে সাকিবের দল পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু

সাকিব আল হাসান

গত আইপিএলের নিলামের ঘটনা। নিলাম কমিশনার ভারতের সুরেশ রায়নার নাম তুললেন। ডাকলেন বারবার। তবে একবারও সেই আওয়াজ চেন্নাই সুপার কিংসের টেবিল পর্যন্ত গেল না। যেন কোনো সম্পর্কই নেই! অথচ আইপিএলে চেন্নাইয়ের যে সাফল্য, তাতে মহেন্দ্র সিং ধোনির পর রায়নার অবদানই সবচেয়ে বেশি।

মি. আইপিএলখ্যাত সেই রায়নার পরিণতিই হয়েছে ‘কে সে’ ধরনের। সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি রান করা রায়নার ক্ষেত্রে এমন হয়ে থাকলে সামর্থ্য তলানির দিকে থাকাদের কী অবস্থা হতে পারে, ভেবে দেখুন তো একবার!

বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্য বিষয়টি আরও কঠিন। এবারের নিলামে সেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের বয়স ৩৭। এর চেয়ে বড় বিষয়, বর্তমানে সময়ে ক্রিকেটার সাকিবের পারফরম্যান্স।

ছন্দে নেই সাকিব
ছন্দে নেই সাকিববিসিবি

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া সাকিব সর্বশেষ ২৪ ইনিংসে ফিফটি করেছেন মাত্র ১টি। সেটা চলতি বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া বিশ্বকাপে কন্ডিশন ছিল স্পিনারদের জন্য সহায়ক। সেখানে ৭ ম্যাচে বল হাতে নিয়ে সাকিবের অর্জন ৩ উইকেট।

এবার দেখা যাক, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ছাড়াও আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে আর কী দেখে।

সর্বশেষ আইপিএল ছিল রানবন্যার। ওভারপ্রতি রান উঠেছে ৯ রানের বেশি করে। যা আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ। স্বাভাবিকভাবেই ফ্র্যাঞ্চাইজির চোখ থাকবে কোন ক্রিকেটার ঘন ঘন সীমানা পার করতে পারবেন। নিশ্চয়ই এই বিবেচনায় সাকিব তালিকার ওপরের দিকে থাকবেন না।

সেটা সাকিবের ক্যারিয়ারের সেরা সময় হলেও থাকতেন না। সাকিবের বোলিংয়েও আসলে সেই পুরোনো ধার নেই। সর্বশেষ যেবার সাকিব আইপিএল খেলেছেন, সেই ২০২১ সালে ৮ ম্যাচে উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ৪টি।

এখন বাংলা টাইগার্সের হয়ে টি–টেনে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাকিব
এখন বাংলা টাইগার্সের হয়ে টি–টেনে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাকিববাংলা টাইগার্স

আইপিএলে ব্যাটসম্যানদের কাছে খুব বেশি পাত্তা পান না তিনি। আর এখন তোর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ! এরই মধ্যে অভিষেক শর্মা, ট্রাভিস হেডদের মতো ‘হাতুড়িপেটা’ ব্যাটসম্যানদের উত্থান ঘটে গেছে। এ ছাড়া আছে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটারের নিয়ম। এই নিয়মে বদলি হিসেবে নেমে ব্যাটিং-বোলিং দুটিই করেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার।

এটি মূলত ভারতীয়দের মধ্যে থেকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিদেশি খেলোয়াড় নামানো যাবে, যদি শুরুর একাদশে চার বিদেশির জায়গায় তিনজনকে রাখা হয়ে থাকে। বেশির ভাগ দলই এই ঝুঁকিটা নেয় না। সেই ঝুঁকিটা নিলেও এই জায়গায় দ্রুতগতির কোনো পেসার, রহস্য স্পিনারের কদরটাই বেশি।

আর সাকিব যে স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে থাকেন, সেই একই স্ট্রাইক রেটে ভারতীয় কোনো ব্যাটসম্যানও ব্যাটিং করতে পারেন। বাঁহাতি স্পিনেও যে খুব ভয়ংকর, তা-ও নয়। ক্রিকেটের বাইরের জীবন নিয়ে সাকিবের পাহাড়সম চাপ তো আছেই। যদিও ক্যারিয়ারের প্রথম দিকের কয়েক বছর বাদ দিলে বাকি সময় মাঠের বাইরের নানা চাপ নিয়েই খেলে গেছেন তিনি।

কলকাতার হয়ে দুবার আইপিএল জিতেছেন সাকিব
কলকাতার হয়ে দুবার আইপিএল জিতেছেন সাকিবছবি : বিসিসিআই

এমন পরিস্থিতিতে সাকিব নিজের ভিত্তিমূল্য কমিয়ে ১ কোটিতে নামিয়ে এনেছেন। তবে এরপরও কি দল পাবেন এই তারকা ক্রিকেটার? উত্তরটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদি না কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি সাকিবকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা করে। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্যারিয়ারের সেরা সময়েই সাকিবকে ঘিরে কোনো দল বিশেষ পরিকল্পনা করেনি, নিলামে কাড়াকাড়ি হয়নি, এবার কেন হবে?

হ্যাঁ, সাকিব একটা সময়ে আইপিএলে ভালো খেলেছেন। তবে নিজেকে ওই অর্থে বড় আইপিএল তারকা হিসেবে কখনোই প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। সুযোগ যে পাননি তা নয়, ৯ মৌসুমে কখনো না কখনো সুযোগ তো আসেই। কয়েকটি আসরে পুরো মৌসুমের জন্য অনাপত্তিপত্র না পাওয়া, ২০২০ সালে নিষিদ্ধ থাকা সাকিবকে আইপিএলে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে, এটাও ঠিক।

আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সীমিত সুযোগ পেয়ে ভালোই খেলেছিলেন সাকিব। ২৪ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ২০১১ মৌসুমে খেলার সুযোগ পান মাত্র ৭ ম্যাচে। সেই মৌসুমে জ্যাক ক্যালিস, গৌতম গম্ভীর, মনোজ তিওয়ারিদের ভিড়ে সাকিব ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগই পাননি। ৭ ম্যাচে ব্যাটিং করেছিলেন মাত্র ৩ ইনিংসে, সব মিলিয়ে করেছিলেন ২৯ রান। তবে বল হাতে দলের প্রত্যাশা ঠিকই মিটিয়েছিলেন। ৬.৮৬ ইকোনমিতে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট।

আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সীমিত সুযোগ পেয়ে ভালোই খেলেছিলেন সাকিব
আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সীমিত সুযোগ পেয়ে ভালোই খেলেছিলেন সাকিববিসিসিআই

পরের মৌসুমে খেলেন ৮ ম্যাচে। উইকেট নিয়েছিলেন ১২টি, ইকোনমি ছিল মাত্র ৬.৫০। ৭ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে তুলেছিলেন ৯১ রান। সংখ্যাটা ছোট হলেও ফাইনালে শেষ দিকে সাকিবের ৭ বলে অপরাজিত ১১ রানের ইনিংসের ভূমিকা ছিল কলকাতার প্রথম শিরোপা জয়ে। ২০১৩ সালে সাকিব চোটের কারণে খেলতে পারেননি একটি ম্যাচও। সাকিব আইপিএলে নিজের সেরাটা দেন ২০১৪ সালে। ১৩ ম্যাচে ১১ ইনিংসে ব্যাট করে ৩২.৪৩ গড়ে করেছিলেন ২২৭ রান। সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনে ১১ উইকেট।

৩২.৪৩
২০১৪ আইপিএলে সাকিবের ব্যাটিং গড়

এরপর আর সাকিব আইপিএলে নিজের সেরাটা তেমন একটা দিতে পারেননি। সবচেয়ে বড় সুযোগ মিস করেন ২০১৮ সালে। সানরাইজার্সের হয়ে সেই মৌসুমে সাকিব নিয়মিত মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান। ওই মৌসুমে খেলা ১৪ ম্যাচের মধ্যে ৯ ম্যাচেই ব্যাট করেন ৫ নম্বরে। তবে এই পজিশনে সাকিবের ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৭.২২, স্ট্রাইক রেটও ১১০-এর কম। সব মিলিয়ে ২১ গড়ে ২৩৯ রান—সানরাইজার্সের প্রত্যাশা খুব একটা পূরণ করতে পারেনি। যদিও বল হাতে নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট।

তবে এসবই এখন অতীত। যা রোমন্থন করা যাবে, ফেরানো যাবে না।

prothom alo