অর্জন হয়নি বেসরকারি ঋণের লক্ষ্য

Dhaka Post

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৯ জুলাই ২০২৩, ০৯:০২ পিএম

অর্জন হয়নি বেসরকারি ঋণের লক্ষ্য

লাগামহীন বাড়ছে খেলাপি ঋণ। বেশি করে গচ্ছিত রাখতে হচ্ছে নিরাপত্তা সঞ্চিতি। ব্যাংক পাচ্ছে না আশানুরূপ আমানত। তাই ব্যাংকে নগদ অর্থের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বাড়তি খরচ মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণ লক্ষ্য অনুযায়ী দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ১০ শতাংশে নেমেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বাড়ায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি বেশি রাখতে হচ্ছে। সুদ কম দেয়ায় আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে না ব্যাংক। অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সংকটে দেশে উৎপাদন কমেছে। বিনিয়োগের জায়গা সংকুচিত হওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রয়োজনেও ভাটা পড়েছে। ফলে অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে যা এখনও চলমান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বেসরকারি খাতে। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ব্যাপক হারে কমে গিয়ে ২০২০ সালের মে মাসের শেষে প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২০২২-এ প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম।

এদিকে অর্থের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে সরকার। অর্থবছরের শুরু থেকেই এই ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ, তারল্য সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকে তেমন একটা ঋণ দিতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

ব্যাংকারদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজারে টাকা ছাড়ার ফলে নোটের পরিমাণ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১ টাকা বাজারে ছাড়লে তা ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। মার্চে ভোক্তা মূল্য সূচক ৭ মাসের সর্বোচ্চ বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হওয়ায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে আসে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত বছরের মে মাসে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। তা ২৮ শতাংশ কমে গত মাসে ৩০ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ডলারের দর বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি, বাজারে পণ্য সংকট, মূল্যস্ফীতি ও টাকার সরবরাহ সবই একটা অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত।

চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এতে করে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ হাজার কোটি টাকা। খেলাপির এ অংক এযাবতকালের সর্বোচ্চ।