অভিভাবকহীন আবাহনী ক্লাব

অভিভাবকহীন আবাহনী ক্লাবলুট হয়েছে ক্লাবের ৫২ বছরের অমূল্য ট্রফিগুলোও

ক্লাব প্রাঙ্গণে বিকেলের আড্ডাটা কেউ ‘মিস’ করেন কিনা, জানা নেই। তাসের টেবিলের উত্তেজনা, প্রিয় প্রাঙ্গণে খেলোয়াড়দের আনাগোনায় মুখর সন্ধ্যার স্মৃতি নাড়া দেয় কি? উত্তর যদি আবেগে ছুঁয়ে যায় সবাইকে, তবে ক্লাবের গেটে কেন তালা ঝুলে? কতগুলো সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল আলোহীন– কেউ তো এলো না বাতি জ্বালাতে। কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে যে পরিচালকরা ক্লাব গরম করে রাখেন দিনের পর দিন, তাদের কারও টিকিটি পর্যন্ত দেখা যায়নি গত পাঁচ দিন। অভিভাবকহীন হয়ে পড়া ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আবাহনী ক্লাব এখন ভূতুড়ে বাড়ি!

দুর্বৃত্তরা একটি চেয়ারও রেখে যায়নি ক্লাবঘরে। ‘ওয়াশ রুমে’র হাইকমোড পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন (৫ আগস্ট) ক্লাবে যে লুট হলো, তার প্রতিবাদ জানিয়ে কেউ একটি বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দেয়নি। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির দারোয়ান মো. শাহাবুদ্দিন আক্ষেপ করে আরও অনেক কিছুই বলে গেলেন।

ঢাকা আবাহনী লিমিটেড ক্লাব। সালমান এফ রহমান, কাজী নাবিল আহমেদ, এরশাদুল বাড়ি, নাজমুল হাসান পাপনদের মতো ধনাট্য ব্যক্তিরা ক্লাবটির শেয়ারের মালিক। কোটি টাকা বিনিয়োগে পরিচালক পদ পেয়েছেন তারা। বাকিরা সমর্থক গোষ্ঠী বা সাবেক খেলোয়াড়। কেউ বা সংগঠক হিসেবে কাউন্সিলরশিপ পেয়ে ফেডারেশন কর্মকর্তা হয়েছেন। পাপন, মল্লিকরা ক্রিকেট কমিটির দখল নেওয়ার আগে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, জালাল ইউনুসরাই ছিলেন মূল কর্মকর্তা। পোড়খাওয়া এই সংগঠকদের একটু একটু করে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই হয়তো সাজ্জাদুল আলম ববিরা ক্লাবের এই খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। তারা হয়তো সাহসটাই হারিয়ে ফেলেছেন।

তবে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, কিংবদন্তি ফুটবলার শেখ আসলাম ছুটে গিয়েছিলেন ক্লাব লুট হওয়ার পর। নিজেদের অর্জিত ট্রফিগুলো দেখতে না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন তারা। আবেগ জড়ানো কণ্ঠে আসলাম বলেন, ‘ক্লাবে গিয়ে কান্না পেয়েছিল। আমাদের কষ্টার্জিত একটি ট্রফিও নেই। এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি। আবাহনী তো একটি স্পোর্টস ক্লাব। কাল (আজ) বিকেল ৩টায় আমরা সাবেক খেলোয়াড়রা আবাহনী ক্লাবে যাব। মানববন্ধনে আহ্বান জানাব, নিঃশর্তভাবে ট্রফিগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য।’

গতকাল বিকেলে আবাহনী ক্লাবে গিয়ে দেখা মেলে ৩০ বছর ধরে কর্মরত দারোয়ান মো. শাহবুদ্দিনের। তিনিই জানালেন, গত পাঁচ দিনে পরিচালকদের কেউই ক্লাব গেটে পা রাখেননি। ফোন করে পর্যন্ত খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি তারা। কেবল ক্রিকেট দলের ম্যানেজার শেখ মামুন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রফিগুলো উদ্ধারের। পাঁচ-ছয়টি ট্রফি ফেরত পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। বাকিগুলো ফেরত পাওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী মামুন, ‘যারা সব নিয়ে গেল, আমাকে মারল, শেখ কামাল ভাইয়ের ম্যুরালে আগুন ধরিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিল, তাদের সবাই অপরিচিত। বেশির ভাগ মানুষ ক্লাবের আশেপাশেই থাকেন। কয়েকটি ট্রফি পেয়েছি, বাকিগুলো পাব। কোথায় ট্রফি আছে, সেটা জানতে পেরেছি। একজন বলেছেন, তিনি এনে দেবেন। আবাহনীর লোগো-সংবলিত ৯টি ব্যাগ, মেয়েদের ব্যাট নিয়ে গেছে। ল্যাপটপ, কম্পিউটারও নিয়ে গেছে। এগুলো হয়তো ফেরত পাব না। ট্রফিগুলো পেলেই হবে।’

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব থেকেও সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে, ট্রফিগুলো ফেরত দিতে। ফেরত পেলে সেগুলো আবার শোকেসে শোভা বাড়াবে গৌরবের সাক্ষী হয়ে।

samakal