পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের বড় জয়

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  •  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৯, আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:১০
পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের বড় জয় – ছবি : সংগৃহীত

চোখ কচলে আনমনে বলে উঠতেই পারেন, এইটাই কি গত রাতের সেই পাকিস্তান? তবে বোধদয় হলে মনে হবে, অবাক হবার কী আছে! এইটাই তো তাদের চিরচেনা চরিত্র। পাকিস্তানের আকাশে কখন যে সূর্য হাসে, কখন আবার ছেয়ে যায় মেঘে, কে বলতে পারে?

একই মাঠ, একই সময়, একই প্রতিপক্ষ। বলা যায় লক্ষ্যটাও প্রায় একই। তবুও কত পার্থক্য, কতো বৈপরীত্য। গতকাল যেখানে প্রায় বিশ ওভার বল করে ২০৩ রান দিয়েও একটা উইকেটেরও সন্ধান পায়নি ইংল্যান্ড, সেখানে পাওয়ার প্লেতেই মাত্র ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান যেন কাঁপতে থাকে। যদিও কাঁপন থেকে মুক্তি মিলেছে শান মাসুদে। তবে পারেনি বড় হার এড়াতে।

বাবর-রিজওয়ানের রেকর্ড জুটির আমেজ এখনো গিয়ে সারেনি। এরই মাঝে সাত ম্যাচের ঐতিহাসিক টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে আজও করাচীতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় সফরকারী ইংল্যান্ড। রান তাড়ায় গড়ে রেকর্ডের পাতা উলট-পালট করা বড় জয় পাবার পর, আজও টস জিতে ফিল্ডিং নিতে ভুলেননি পাক অধিনায়ক বাবর আজম। প্রথম দুই ম্যাচে এক-এক জয়ের সমতা নিয়ে মাঠে নামে দুই দল। উজ্জীবিত পাকিস্তানের একাদশে কোনো পরিবর্তন না থাকলেও, একাধিক পরিবর্তন থ্রি-লায়ন্স শিবিরে। ইংল্যান্ড মাঠে নেমেছে ৩ পরিবর্তন নিয়ে।

গত ম্যাচের ব্যর্থতায় ডেভিড উইলির পরিবর্তে দলে রিচি টপলি আর এই সিরিজেই অভিষেক হওয়া, প্রথম ম্যাচের ম্যাচ সেরা লুক উডের জায়গায় এসেছেন আরেক উড; মার্ক উড। তবে সব থেকে বড় চমকের নাম উইল জ্যাকস। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পুরো বিশ্ব কাঁপিয়ে বেড়ানো এই অলরাউন্ডার জায়গা পেয়েছেন এলেক্স হেলসের জায়গায়। বিপিএলের শেষ আসরে চট্টগ্রামের হয়ে খেলা উইল জ্যাকস দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পরে অবশেষে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে জড়ালেন।

ফিলিপ সল্টের সাথে ইনিংসের উদ্বোধন করতে নামেন উইল জ্যাকস। যদিও খানিকটা পরই হাসনাইনের পেসের ধাঁধায় পড়ে ফিলিপ সল্ট ফিরে যান। মাঠে আসেন ডেভিড মালান। পাকিস্তানের বিপক্ষে বরাবরই ব্যর্থ এই ইংলিশ ক্রিকেটার আজও ছিলেন নিষ্প্রাণ। তবে রান আটকে থাকেনি ইংল্যান্ডের, পাওয়ার প্লে শেষে স্কোরবোর্ডে ৫৭ রান। যেখানে ১৭ বলে ৩৬ উইল জ্যাকসের অবদান। পাওয়ার প্লেতে নিজের খেলা শেষ সাত বলের ছয়টিতেই বল করেছেন সীমানা পার। কে বলবে আজই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে এই ওপেনার!

তবে ইনিংস আর বড় হয়নি। উসমান কাদিরের বলে ২২ বলে ৪০ করে ফিরে যান এই হার্ডহিটার। এদিকে বেন ডাকেট যেন রূপকথার ডাকাত হয়ে উঠেছেন। হ্যারি ব্রকই কম কিসে, আজ যে আরো এক পা এগিয়ে। বল যেন তার কথা শুনে, যখন যেভাবে বলেন সেভাবেই চলে। ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক ছুঁলেন মাত্র ২৪ বলে। দুজনের আক্রমণে যেন ভড়কে যায় পাকিস্তান। আর কোনো আঘাতই করতে পারেনি তারা ইংল্যান্ডের দূর্গে। ৪২ বলে ৭০ রান করে অপরাজিত থাকেন বেন ডাকেট। হ্যারি ব্রকের সংগ্রহ আট চার আর পাঁচ ছক্কায় ২৩১.৬৫ স্ট্রাইকরেটে ৩৫ বলে অপরাজিত ৮১। দুজনের ৬৯ বলে ১৩৯ রানের হার না মানা জুটিতে ২২১ রান করে ইংল্যান্ড যেন পাহাড়ে।

আগের ম্যাচে বড় রান তাড়া করে রেকর্ড জুটিতে জয় পাওয়ায় আজও সবার আশা ভরসা ছিল বাবর-রিজওয়ানে। তবে গত ম্যাচে হার না মানা ২০৩ রানের জুটির কারিগরদের আজকের জুটির স্থায়িত্ব মাত্র ১৬ বল। দলীয় ১৭ রানেই ফেরেন বাবর। আট বল পরে রিজওয়ানও হাঁটেন একই পথে। দুজনই আউট হন ব্যাক্তিগত ৮ রানে। হায়দার আলীও ফেরেন পরের বলে। ৬ রান করে ইফতেখারও সাজঘরে। দলীয় ২৮ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ শব্দটা ফের ফিরিয়ে আনে পাকিস্তান।

তবে তাসের ঘরের মতো আর ধ্বসে পড়েনি। বলা যাত ধ্বসতে দেননি শান মাসুদ। প্রথমে খুশদিল শাহকে নিয়ে ৬২ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় এড়ান শান মাসুদ। ২১ বলে ২৯ করে খুশদিল ফিরে গেলে ৫২ রানের জুটি গড়ে তোলেন নাওয়াজের সাথে। নাওয়াজ ফিরেন ১৯ রানে। ১৮তম ওভারে নাওয়াজের বিদায়ের সময়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ মাত্র ১৪২ রান। ১২ বলে তখন জিততে প্রয়োজন ৮০ রান। অর্থাৎ শুধু অঘটনই জেতাতে পারে পাকিস্তানকে। তবে অঘটন কি আর বলে কয়ে আসে?

মাত্র দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা শান মাসুদের ব্যাটিংই হয়তো আজকের দিনে পাকিস্তানের বড় প্রাপ্তি। প্রথম অর্ধশতকের দেখা পেয়ে যান দ্বিতীয় ম্যাচেই। তিন চার আর চার ছক্কায় ৪০ বলে শান মাসুদ খেলেন ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। পাকিস্তান হেরে যায় ৬৩ রানের বড় ব্যাবধানে। ব্যবধান আরো বড় হতে পারতো, শান মাসুদের ব্যাটে অল আউট হওয়া থেকে রক্ষে, এই বা কম কিসে? এই জয়ের ফলে ৭ ম্যাচ সিরিজে দুই-একে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।