‘র্যাবের ভূমিকা পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে’
-
১৭ জানুয়ারি ২০১৭
ছবির কপিরাইট Focus Bangla বাংলাদেশে বিশ্লেষকরা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবের সাবেক তিনজন কর্মকর্তাসহ ১৬জন সদস্যের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় বাহিনীটির ভূমিকা পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে।
তারা মনে করেন,পুলিশের এই বিশেষ বাহিনী র্যাব তাদের দায়িত্ব থেকে সরে গেছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা সেটাই প্রমাণ করেছে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তা মানতে রাজী নন। তিনি বলেছেন,কতিপয় ব্যক্তির বিচ্যুতি পুরো বাহিনীর ওপর কোন প্রভাব ফেলেনি।
তিন বছর আগে যখন নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণের পর শীতলক্ষ্যা নদীতে একের পর এক তাদের মৃতদেহ ভেসে উঠছিল। সেই প্রেক্ষাপটে এক ধরণের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে র্যাব বহুদিন নিজেদের মধ্যেই গুটিয়ে ছিলো বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এখন সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবেরই সাবেক কর্মকর্তা এবং সদস্য মিলিয়ে ১৬জনের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় বাহিনীটির ভূমিকা আবারও আলোচনায় এসেছে।
মানবাধিকার সংগঠক সুলতানা কামাল বলেছেন, র্যাব তাদের মুল দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ায় এর সদস্যদের অনেকের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণেও অনেক বিচ্যুতির ঘটনা ঘটছে।
“র্যাব তাদের উদ্দেশ্যের প্রতি কখনই একনিষ্ঠ থাকতে পারেনি। কারণ শুরু থেকেই র্যাবকে অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছি যে, যেহেতু রাষ্ট্র তাদের দিয়ে নানা ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করাচ্ছে এবং হত্যাকাণ্ডগুলোর বৈধতা দিচ্ছে। ফলে কখনও না কখনও এরা নিজের স্বার্থে হত্যাকাণ্ড ঘটাবে। সেখানে তাদের নিষেধ করার রাষ্ট্রের কোনো অধিকার থাকবে না।নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় এটা অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে ধরা পরে গেলো।”
ছবির কপিরাইট Getty Images তবে পুলিশের সাবেক একজন আইজি নুরুল হুদা বলেছেন, যখন জঙ্গি তৎপরতা বা সন্ত্রাস দমনে কোনো বাহিনী কাজ করে, সেখানে বিচ্যুতি ঘটতে পারে। তাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা, সেটাই বড় বিষয় বলে তিনি মনে করেন।
যদিও জঙ্গি সংগঠন জেএমবির উত্থান যখন হয়েছিল,তখন শায়খ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাই নামে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলামসহ মুল জঙ্গিদের গ্রেফতারের বিষয়কে র্যাবের সাফল্য হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু র্যাব প্রতিষ্ঠার ১৩ বছরে বিভিন্ন সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের অনেক ঘটনা বাহিনীটিকে বিতর্কে ফেলেছে।
সুলতানা কামাল মনে করেন, র্যাবের ভূমিকা আসলে কি হবে, তা এখন ভাববার সময় হয়েছে।
“র্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল একটা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। কিছু নিয়ম-কানুন তাদের ক্ষেত্রে শিথিল থাকবে। তারা হয়তো এমন কিছু অ্যাকশন নিতে পারবে, সেটা পুলিশ নিলে প্রশ্ন উঠতে পারে। তারা সেই অ্যাকশন নিলে সেই প্রশ্ন আসবে না। কিন্তু সেটা তারা টেনে গিয়ে গেলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত।সেখানেই বিপদটা ঘটিয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জের সাতখুনের ঘটনার পর র্যাব বলেছিল, তারা তাদের দায়িত্বের বাইরে কাজ করবে না।সেই প্রেক্ষাপটে জঙ্গি দমনে পুলিশের ভূমিকা সামনে আসে। সেজন্য পুলিশে একটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটও গঠন করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, র্যাবের সুনির্দিষ্ট কাজ আসলে কি, সেটাও অস্পষ্ট মনে হয়।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দাবি করেছেন, র্যাব শক্ত অবস্থানে থেকেই সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করছে।
ছবির কপিরাইট Getty Images “জঙ্গি তৎপরতা এবং সন্ত্রাস দমনে বা মাদক বিরোধী অভিযানে র্যাবের অনেক সুনাম এবং সফলতা রয়েছে।র্যাবের ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে। কাজেই কেউ একটা অন্যায় করলেই বাহিনীটি বন্ধ করে দেবো বা পুরো র্যাব কলঙ্কে জড়ালো, এমন প্রশ্নই আসে না।”
কিন্তু র্যাবের ভূমিকা নতুন করে ভাববার যে প্রশ্ন এখন উঠেছে, তা নাকচ করে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, র্যাব দায়িত্বের বাইরে কোনো কাজ করছে না।
র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, তাদের ওপর মানুষের আস্থা আছে বলে তারা বিশ্বাস করেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের ঘটনা তাদের ভাবমূর্তিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও তারা মনে করেন।








