Who are these joyous people alongside the fundamentalists

মৌলবাদের ‘অ্যালংসাইডে’ উৎফুল্ল এরা কারা?

এ দেশে কার হাসিটি সবচেয়ে দামি ও প্রাণোচ্ছল জিজ্ঞেস করলে যে ক’জনের নাম আসবে তার মধ্যে শাকিলা জাফর অন্যতম। সেই সঙ্গীতশিল্পী নরেন্দ্র মোদির পাশে তার সবচেয়ে সুন্দর একটি হাসি দিয়ে একটা ছবি তুলেছেন। এ জন্য পুরুষ হিসেবে মনে তেমন কোনো ঈর্ষা নয়, একজন নগণ্য পর্যবেক্ষক হিসেবে কৌতূহল জমেছে।
আমার এক প্রিয় জুনিয়র তার দাম্পত্য জটিলতা নিয়ে আমার কাছে আসে। তাকে জিজ্ঞেস করি, বল তো তোমার মূল সমস্যাটি কোথায়? তার জবাব, ‘ও’ তার অন্যান্য বন্ধুদের সাথে যেভাবে হাসিমুখে কথা বলে, আমার সাথে কখনই তেমনভাবে বলে না। বেচারা স্বামীর রক্তক্ষরণের সেই গল্পটিও এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেছে। বেচারা জাফর সাহেবের কপাল কখন পুড়েছে মালুম করতে পারিনি। মিডিয়ার খবর, শাকিলা জাফর সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন, তার নামের শেষে আর যেন জাফর শব্দটি যোগ না করা হয়।
স্বামীদের যন্ত্রণা নানা কিসিমের। এক স্বামী জাহাজের কাপ্তান। জাহাজে ‘নাইয়র’ বা চাকরি শেষে বেশ কিছু দিন পরপর বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এসেও জাহাজের কিছু পরিভাষা ব্যবহার না করে বেচারা থাকতে পারেন না। ভদ্রলোকের স্ত্রী আবার এটা একদম বরদাশত করতে পারেন না। এ অপছন্দের একটা সূক্ষ্ম রাজনৈতিক কারণ রয়েছেÑ যা একটু পরে জানানো হবে।
ডাঙ্গার মানুষ যেটাকে বাম দিক বা লেফট সাইড বলেন, জাহাজের মানুষ সেটাকে বলেন পোর্ট সাইড। ডান দিকের জাহাজি পরিভাষা হলো স্টারবোর্ড সাইড। কোনো কিছু ওপরে তোলাকে বলা হয় ‘হাফিজ’, নিচে নামানো বা লোয়ার করাকে বলা হয় ‘আরিয়া’। রিক্রিয়েশন রুম হলো জাহাজের ‘স্মোকরুম’। খাবারের জায়গা হলো ‘সেলুন’। জাহাজ যখন বন্দরে ভিড়ে এবং বার্থের সাথে লাগে তখন বলা হয় জাহাজটি জেটির সাথে অ্যালংসাইড হয়েছে। নোঙরের চেইনকে শক্তভাবে আটকে রাখার নির্দেশ দিতে গিয়ে বলা হয়, Screw her tight। অর্থাৎ পাগলীকে শক্তভাবে বেঁধে রাখ।
এবার বাড়িতে পা রাখার পরপরই কাপ্তানের স্ত্রী একটা সাদা কাগজ মুখের সামনে তুলে ধরলেন। তাতে লেখা- জাহাজের কোনো ভাষা বা স্ল্যা-এর ব্যবহার বাড়িতে চলবে না।
এই লিখিত নির্দেশ দেখে কাপ্তান মশায় একটু অবাক হলেন। কিছুটা ভয়ও পেলেন। জাহাজকে স্ক্রুড করে রাখলেও বাসায় এসে বেচারা নিজেই স্ক্রুড হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া দিনকালও খুব সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। শালা-সম্বন্ধিরা আঙুল ফুলে একেকটা শুধু কলাগাছ নয়- রীতিমতো বটগাছ হয়ে গেছে। এসব শ্যালকের সাথে কথা বললেই জাহাজের স্ল্যাংগুলো বেশি বেশি চলে আসে। স্ত্রীর অপছন্দের এটা একটা বড় কারণ। যে শ্যালকদের জাহাজে চাকরি করে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন তারা এখন বলে, দুলাভাই ভাবছি, দু-চারটা জাহাজ কিনে ফেলব। আর আপনাকে সেই জাহাজের কাপ্তান বানাব। এ কথার জবাব তো জাহাজের স্ল্যাং ছাড়া দেয়া সম্ভব নয়।
এ কারণেই জাহাজি স্ল্যাং-এর দোহাই টেনে কায়দা করে গিন্নি তার মুখটি বন্ধ করে দিতে চাচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে স্বামী নির্যাতিত পুরুষদের নিয়ে একটা সমিতি করবেন বলে মনস্থ করেছেন। সংগঠনের সভাপতির পদটি একজন মরহুম নির্যাতিত পুরুষের জন্য রিজার্ভ রেখে তিনি আজীবন সাধারণ সম্পাদক থাকবেন।
ভদ্রলোক অনেক কষ্ট করে স্ত্রীর এই নির্দেশটি মেনে চললেন। রাত একটু গভীর হলে একটু অধিক খাতিরের আশায় বললেন, দেখো তানিয়া, আমি কেমন বদলে গেছি। তোমার নির্দেশটি আজ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। এখন পর্যন্ত একটিও জাহাজের শব্দ বা কোনোরূপ স্ল্যাং ব্যবহার করিনি। কারণ অনেক দিন পর আমি তোমার অ্যালংসাইডে এসেছি। তাই যেকোনো কঠিন নির্দেশ পালন করতে পারছি।
যে জাহাজের শব্দকে দুই চোখে দেখতে পারে না স্ত্রী, সে ধরনের একটি শব্দকে কেন যেন তেমন খারাপ লাগল না তার। বরং অত্যন্ত মধুর বলে মনে হলো।
আধুনিকা এই সারেং বউটির মতোই দশা হয়েছে এ দেশের চিহ্নিত বলয়ের বুদ্ধিজীবীকুলের। মৌলবাদের সাথে তারা সবাই জীবনের তরে আড়ি পেতেছেন। মৌলবাদকে তাদের ভাবের জেটিতে ভিড়তে দেয়া (অ্যালংসাইড হওয়া) তো দূরের কথা, দূরবর্তী উপকূলে কোথাও নোঙরও করতে দিতেন না। কিন্তু মৌলবাদী মোদি সফরে এলে বা ইনাদের অ্যালংসাইড হলে আগের সব প্রতিজ্ঞা ও শপথ ভুলে গেলেন!
ধর্মীয় মৌলবাদকে সমূলে ধ্বংস করতে এদের অনেকেই নিজের জীবন-যৌবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করতে এদের অনেকেই রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেছেন। এ জন্য স্বাধীনতার পর এ দেশে যত সাহিত্য রচিত হয়েছে, যত নাটক সিনেমা বানানো হয়েছে, তার অধিকাংশেই মূল সুর ছিল, মৌলবাদের উৎখাত।
বাবরি মসজিদ ভাঙার পরপর ‘নিজামী-আদভানি ভাই ভাই’ স্লোগান দিয়ে এদের অনেকে গলা ফাটিয়ে ফেলেছেন। উপমহাদেশে মৌলবাদের হুমকি নিয়ে এরা জ্ঞানগর্ভ কলাম লিখে পত্রিকার পাতা ভরে ফেলেছেন। শত শত সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করেছেন। এ দেশের স্বনামধন্য এক প্রফেসর মাত্র কিছু দিন আগে একটি ছাত্র সংগঠনের উদ্দেশ্যে তার এক বিশেষ নসিহতনামায় উল্লেখ করেছেন,
‘আজ থেকে কয়েক যুগ আগেও এই পৃথিবী যে রকম ছিল, এখন সেই পৃথিবী নেই। এই পৃথিবী অনেক পাল্টে গেছে। নতুন পৃথিবী তালেবান বা লস্কর-ই-তাইয়েবার পৃথিবী নয়। জামায়াতে ইসলামী বা শিবসেনার পৃথিবীও নয়। নতুন পৃথিবী হচ্ছে মুক্তচিন্তার পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক একটা পৃথিবী। এই নতুন পৃথিবীর মানুষেরা অসাধারণ, তারা একে অন্যের ধর্মকে সম্মান করতে শিখেছে, একে অন্যের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে উপভোগ করতে শিখেছে, একে অন্যের চিন্তাকে মূল্য দিতে শিখেছে। এই নতুন পৃথিবীতে মানুষে মানুষে কোনো বিভাজন নেই। দেশ-জাতির সীমারেখা পর্যন্ত ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। তাই এই নতুন পৃথিবীতে যখন কেউ ধর্ম দিয়ে মানুষকে বিভাজন করে রাজনীতি করতে চায়, পৃথিবীর মানুষ তখন তাকে পরিত্যাগ করে। জামায়াতে ইসলামীর মতো বা শিবসেনার মতো রাজনৈতিক দল তাই হচ্ছে বাতিল হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দল। নতুন পৃথিবীতে এই দলগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’
জাতির অন্যতম এই ভবিষ্যৎ দ্রষ্টার কথা মতো এই ধরনের ‘ভবিষ্যৎহীন’ একটি দল থেকেই নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। মৌলবাদী এই মোদি যখন আমাদের ক্রুসেডারদের ‘অ্যালংসাইড’ হলেন তখন ওপরের সারেং বউয়ের মতোই তারা আগের সব কথা ও পণ ভুলে গেলেন। মৌলবাদী এই মোদিকে নিয়ে তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট আহ্লাদে আটখানা। তখন তাদের বিরুদ্ধে একটি লাইনও লিখেননি মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এসব ক্রুসেডার। সবচেয়ে লজ্জাকর ঘটনাটি হলো, এ দেশে মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনের সেনাপতিদের কেউ কেউ স্বনামে মোদিকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে পত্রিকায় আর্টিক্যাল লিখেছেন।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি অ্যালার্জি বরাবরই আওয়ামী ঘরানার পলিটিশিয়ান ও বুদ্ধিজীবীদের বেশি। বিপরীতক্রমে বিএনপি তাদের উদার গণতান্ত্রিক মতবাদ ও উদারনৈতিক অবস্থানের কারণে এদের প্রতি তুলনামূলক সহনশীল। এ জন্য ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের অনেক গালি ও বদনাম বিএনপিকে শুনতে হয়েছে। কাজেই মোদি এ দেশে এলে মৌলবাদের প্রতি অ্যালার্জিক গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে মিডিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া নিয়ে। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটি।
মৌলবাদী দলটির ক্ষমতারোহণ ঠেকাতে বিশেষ অর্থ সাহায্যের কথাও শোনা গেছে। কিন্তু মোদির নেতৃত্বে সেই দলটি অগত্যা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় চলে আসার পর কিছুটা বেকায়দায় পড়ে যায়। আগের কর্মের কাফফারা হিসেবে একলাফে এ দেশটিকে অর্ধ ব্যাচেলর মোদির ‘দ্বিতীয় ঘর’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। পরম আকাক্সিক্ষত মেহমান অফারমতো ‘দ্বিতীয় ঘর’ হিসেবে গ্রহণ না করে বিশতম ঘর হিসেবে কবুল করেছেন। অর্থাৎ উনিশতম বিদেশ সফর হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছেন। ওদিক থেকে একধরনের তাচ্ছিল্য, এ দিক থেকে সব কিছু খুলে দেয়ার মানসিকতা!
তাকে বহন করা ইন্ডিয়ান বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানটি ঢাকায় অবতরণ করে ৬ জুন শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে এবং ঢাকা ত্যাগ করে পরদিন রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। অর্থাৎ তিনি বাংলাদেশের মাটিতে অবস্থান করেন সর্বমোট চৌত্রিশ ঘণ্টা তিরিশ মিনিট। মিনিটের হিসাবে অবস্থান হয় দুই হাজার সত্তর মিনিট। সেকেন্ড হিসাব করলে দাঁড়ায় এক লাখ চব্বিশ হাজার দুই শ সেকেন্ড। এই এক লাখ চব্বিশ হাজার দুইশ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুম ও বাথরুমের প্রয়োজনীয় কিছু মুহূর্ত ছাড়া (অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছিল, সম্ভব হলে তা-ও রিপোর্ট করে দিতেন) প্রতিটি মুহূর্তের প্রত্যেকটি উচ্চারণ, শ্বাস-প্রশ্বাস ও প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি আমাদের গোচরে নিয়ে এসেছে মৌলবাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্ত অবস্থান নেয়া এ দেশের উৎফুল্ল মিডিয়া। মোদি কখন কী খেয়েছেন, কখন কার দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করেছেন, কখন কোন্ শিল্পীকে গোপনে ডেকে কী কথা বলেছেন এসব তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনাও প্রচার করা হয়েছে। চল্লিশ দশকের শেষদিকে তখনকার গভর্নর জেনারেল জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দুতে বক্তব্য রাখতে সাহস করেননি। কিন্তু আধুনিককালের বড় লাট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে (আন্তর্জাতিক ভাষা না হওয়াতেও) হিন্দিতে বক্তব্য রেখেছেন।
সেই বক্তৃতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ আমাদের মিডিয়াসহ বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, আমরা এখন আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করব না। বরং আধিপত্য বরণ করতে আমরা যেন প্রস্তুত। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে খোদা নাখাস্তা, একদিন হয়তো লড়তে হবে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য। কাগজে সব থাকবে, বাস্তবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কিছুই থাকবে নাÑ এমনটা কি আমরা চাইতে পারি?
স্মৃতির হার্ডডিস্কে অন্য কারো সফর নিয়ে মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী ঘরানার এই মাত্রার আহ্লাদ স্মরণে আসছে না।
তবে আশির দশকে রানী এলিজাবেথ যখন ঢাকায় পদধূলি ফেলেছিলেন, তখন ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলের টয়লেটটিও শাহী বা রাজকীয় ব্যবহারের উপযোগী বলে গণ্য করা হয়নি। যতটুকু মনে পড়ে, বাথরুমটিকে নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল। এ বাবদ খরচের পরিমাণ মনে পড়ছে না। তবে তা দিয়ে এ দেশের অনেকের পুরো পরিবার নিয়ে ভদ্রভাবে থাকার জন্য মাথাগোঁজার ঠাঁই হয়তো বা হয়ে যেত। বিষয়টি নিয়ে প্রাক্তন প্রজাকুলের মধ্যে বেশ ঔৎসুক্য সৃষ্টি হয়েছিল, প্রচণ্ড আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল।
রানী এলিজাবেথের সেই সফরের অনেক দিন পর চা বিক্রেতা থেকে দিল্লির সিংহাসনে সমাসীন নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে প্রায় সমধরনের মিডিয়া সেনসেশন তৈরি করা হয়েছে।
পুরো পরিস্থিতি দেখে একজন ফেসবুকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘একদল সিজদায় গিয়ে শুয়ে পড়েছেন, অন্যদল রুকুতে পড়ে গেছেন। দেশের রাজনীতিবিদদের ডিজিটাল দেয়ালের এসব লেখন পড়া উচিত।’
গত জরুরি সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা একবার মন্তব্য করেছিলেন, ‘তিনি দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে এমন পর্যায়ে রেখে যাবেন যে, এরপর এখান থেকে ভারত বিরোধিতার কোনো সুযোগ কারো থাকবে না।’ কাজেই আজকের এ ‘রুকু-সিজদা’ সেই দিনেরই বপন করা শস্যের অনিবার্য ফল।

জাতির এই মহা ক্রান্তিলগ্নে
বিএনপির কিছু অতি উৎসাহী নেতাও নিজেদের ন্যায্য ও প্রকৃত অবস্থান তুলে না ধরে সহজপথেই রওনা হয়েছেন। বিএনপির নিজস্ব রাজনীতি ‘বাংলাদেশ প্রেম’ ছেড়ে তারাও ভারতপ্রেমিক সাজার কোশেশ শুরু করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কখনই ভারতবিদ্বেষের রাজনীতি করেননি; বরং বলা যায় তিনি ভিন্ন কোনো দেশ নয়, সর্বাগ্রে নিজের দেশকে ভালোবাসার দীক্ষা দিয়ে গেছেন। যেমন আমার নিজের দেশকে ভালোবাসব; অন্যকেও একইভাবে নিজের দেশকে ভালোবাসতে দেবো। পুরো উপমহাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধের তাগিদ থেকেই জিয়া সার্ক গঠনের প্রস্তাব রেখেছিলেন। সমগ্র উপমহাদেশ ও এ দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য এটিই সঠিক রাজনীতি।
মৌলবাদী রাজনীতির ধারক-বাহক হওয়ার পরও পুরো বিশ্ব নরেন্দ্র মোদির প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে তার এ ধরনের কিছু উচ্চারণের কারণে। মুখে যাই বলুন, কাজে মনে হচ্ছে তিনি তাদের পুরনো বৃত্ত থেকে বের হতে পারছেন না।
সময়টি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য কঠিন। সুরঞ্জিত বাবুরা হুমকি দিয়েছেন, বাংলার মাটিতে আর কখনোই ভারত বিরোধিতার রাজনীতি চলবে না। কিন্তু সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা, ফারাক্কা, তিস্তা, টিপাইমুখ প্রভৃতি নিয়ে কথা বললেও কি তা ভারত বিরোধিতা বলে গণ্য হবে?
যতই কষ্ট বা জটিল হোক, এ কথাটিই আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশীকে বোঝাতে হবে। ইন্ডিয়া বড় শক্তি, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরাও ক্ষুদ্র বা নগণ্য নই। ছোট হোক বড় হোক, কোনো প্রতিবেশীকে অসন্তুষ্ট রেখে কেউ নিজের শান্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। এই বোধ ও চেতনাটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া এই ভূখণ্ডের মানুষের মনে গেঁথে দিয়েছিলেন। সাহসহারা জাতিকে সাহসও দিয়ে গেছেন।
যারা আজ শহীদ জিয়ার বিশুদ্ধ রাজনীতির ধুয়া তুলে ভাঙনের আওয়াজ তুলেছেন, তাদের নিজেদের অবস্থান আবারো তলিয়ে দেখা দরকার। শহীদ জিয়া জাতির কঠিন সময়ে বারবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়েছেন তবুও মাথা নিচু করে অধীনতামূলক মিত্রতা বা আপসের চেষ্টা করেননি। জিয়ার এই বোধ ও চেতনাই এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার একমাত্র গ্যারান্টি।
জাতিকে জিয়ার বিশুদ্ধ রাজনীতি শেখানোর আগে নিজেদের একটু ভালো করে তা শিখে নেয়া দরকার।

minarrashid@yahoo.com