ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গত কয়েকদিনে দেশব্যাপি কয়েকজন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার ক্রসফায়ারে মৃত্যূর পর আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও সন্ত্রসীদের মাঝে এক ধরণের ভয়াবহ ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরী হয়েছে।
অথচ এতোদিন পর্যন্ত বহু বিরোধী নেতাকর্মী বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে তথা ক্রুশফায়ারে নিহত হলেও এরা তাতে কর্নপাত করেননি বরং সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছিলো।এবার নিজেদের লোকজন হতাহত হওয়া শুরু হলে তাদের টনক নড়েছে।
বিনা বিচারে হত্যার প্রতিবাদে সরকার সমর্থক বিভিন্ন মহল সোচ্চার হলেও সাধারণ অনেক মানুষই এই ক্রসফায়ারকে সমর্থন করছে। দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাস নির্মূলে সরকারের সামনে এর কোন বিকল্প ছিলো না বলেও অনেক মনে করেন।
আর সরকার যে কঠোর অবস্থানে রয়েছে তা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট করেই বলেছেন। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অবুঝ শিশু হত্যা ও অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর হামলাকারীরা কোনভাবেই রেহাই পাবে না। অপরাধী যে দলেরই হোক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে-অপরাধী কাউকে যাতে ছাড় দেওয়া না হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এসম্পর্কে বলেন, দল ক্ষমতায় থাকতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা ক্রসফায়ারে মারা যাবে, এটা ঠিক না। রাজনৈতিকভাবে এর সমাধান করতে হবে। সমস্ত সংকটের সমাধান ক্রসফায়ার নয়। ছাত্রলীগকে সাবধান করতে হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শবান হিসেবে তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে আর ছাত্রলীগকে ক্রসফায়ারে মারবে এটা কাম্য নয়।
অথচ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারকে বারবার বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এবিষয়ে দলীয় হাইকামান্ড থেকে বারবার সতর্ক করেও কোন ফল আসছে না। বরং এসব কারণে সরকারের অর্জনগুলো অনেক সময়ই প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে।
সম্প্রতি দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মাগুরায় মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ ও বৃদ্ধ খুন, হাজারীবাগে শিশুকে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনাগুলো ঘটে। শিশু হত্যার মতো বিষয়গুলো যখন দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে সেসময় দলীয় কর্মীদের দ্বারা এসব ঘটনা সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। তবে সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে দলীয় কর্মীদের ক্রসফায়ারের মতো বিষয়গুলোও মানতে পারছে না নেতারা।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- , ক্রসফায়ার বা গণপিটুনি কোনোটাই আমরা সমর্থন করি না। দেশে আইন, আদালত আছে। কেউ অপরাধ করলে তাদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি হবে। কিন্তু ক্রসফায়ার দিয়ে মারবে, বা গণপিটুনি দিয়ে মারবে এটা সমর্থনযোগ্য নয়। ক্রসফায়ারের ঘটনাগুলো শুধু কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নয় ছাত্রলীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মাঝে আতঙ্ক তৈরী করেছে।
ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ নেতা রুবেল হোসেন বলেন, যে কোনো হত্যাকেই সমর্থন করি না। তবে কথিত ক্রসফায়ারের নামে বাড়ি থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য শুভ সংবাদ না। দল ক্ষমতায় থাকবে, আর আমাদেরই বিনাবিচারে হত্যা করা হবে, বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে।
ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকের বিরুদ্ধেই পুরনো মামলা আছে। কিন্তু ক্রসফায়ারের মতো ঘটনায় তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শশধর বলেন, ক্রসফায়ারে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা ক্রসফায়ারে পড়বে না। জানাগেছে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অপরাধীদের জন্য মন্ত্রী-দলীয় নেতাদের তদবির করতে নিষেধ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনার পর দুই ছাত্রলীগ ও এক যুবলীগ নেতা ইতিমধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড সরকারকে বিব্রত দারুন করেছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনার পর এসব ব্যাপারে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তের বিষয়টি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়েও এরই মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে নেমে পড়ে। অনেকেই মনে করেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।
তবে সভ্য সমাজে বিচার বহির্ভত হতাকান্ড কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় ন বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।
Source: prothombangladesh.net