বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় শত্রু কেন শেখ হাসিনা?

ফিরোজ মাহবুব কামাল     2 April 2023

www.drfirozmahboobkamal.com/blog/বাংলাদেশীদের-সবচেয়ে-বড়-শ/

কে বাংলাদেশের জনগণের সবচেয়ে বড় শত্রু? প্রতিটি বাংলাদেশীর কাছে এটিই হলো আজকের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। একটি দেশে রাজনীতির লড়াই এবং সে লড়াইয়ের চরিত্র নির্ধারিত হয় -সে শত্রুকে চেনার পর। কোন লোকালয়ে বসবাস কালে সেখানকার সবচেয়ে হিংস্র পশু ও বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু ও পোকামাকড়গুলিকে অবশ্য জানতে হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানের চেয়েও সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি হলো বেসিক লাইফ স্কিল। সে জ্ঞান জানা না থাকলে সেখানে বসবাস নিরাপদ হয় না। তেমনি কোন দেশের জনগণকে অবশ্যই জানতে হয় তাদের সবচেয়ে ভয়াল শত্রুকে। এবং বাঁচতে হয় সে শত্রুর বিরুদ্ধে বিরামহীন যুদ্ধ নিয়ে। যে শত্রুটি জনগণের সর্বাধিক স্বার্থহানী ঘটায়, যে জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, যে জনগণের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয় এবং অসম্ভব করে ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচা -সেই তো হলো জনগণের প্রধান শত্রু। এবং সে ক্ষতিটি যে সবচেয়ে বেশী পরিমাণে করে সেই তো হলো সবচেয়ে বড় শত্রু। হাসিনাই যে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় শত্রু -সে দলিল তো প্রচুর। এ নিবন্ধের আলোচনা তা নিয়েই।

প্রশ্ন হলো, কে বাংলাদেশী জনগণের সবচেয়ে বড় স্বার্থহানীটি ঘটাচ্ছে? সেটি কি সাধারণ চোরডাকাত? সেটি তো খোদ হাসিনা সরকার। কে জনগণের কথাবলার অধিকার ও ভোটদেয়ার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে? সেটিও কি কোন চোর ডাকাত বা রাস্তার গুন্ডা-বদমায়েশেরা? না, সেটি অপরাধের সংঘটকও হলো শেখ হাসিনা। হাসিনার পক্ষ থেকে সে অপরাধগুলি ঘটিয়ে চলছে সরকারের পুলিশ, প্রশাসনের কর্মচারী ও তার দলীয় নেতাকর্মী। এরা সবাই আজ আযাব প্রয়োগের হাতিয়ার।

হাসিনার প্রথম অপরাধ: জনগণের অধিকারের উপর ডাকাতি

বাংলাদেশের ন্যায় প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্বের মালিক মহান স্রষ্টা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালা। জনগণ হলো তাঁর খলিফা। আল্লাহতায়ালা জনগণকে অধিকার দিয়েছেন তাঁর খলিফা রূপে এবং তাঁর বিধান অনুসরণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করার। তাই রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার ও দায়িত্ব একমাত্র জনগণের -হাসিনার ন্যায় কোন স্বৈরাচারি শাসকের নয়।  জনগণ দেশ পরিচালনার সে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। সে কাজের জন্য জরুরি হলো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচন।  কিন্তু হাসিনার অপরাধ হলো, সে ডাকাতি করেছে আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত জনগণের সে অধিকারের উপর। যেমনটি করেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে। জনগণের রায়কে হাসিনা ইজ্জত দেয়নি। বরং জনগণের রায় দেয়ার অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজে দেশের সার্বভৌম অধিকারী হয়েছে। অথচ ইসলামে সার্বভৌম হওয়াই হারাম। যুদ্ধ এখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর বিরুদ্ধে। সে দেশ চালাচ্ছে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী। তাই হাসিনা আবির্ভুত হয়ে জনগণের স্বাধীনতার শত্রু রূপে। এটি যেমন ইসলামবিরোধী, তেমনি সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী।

দ্বিতীয় অপরাধ: অসম্ভব করেছে জনগণের পূর্ণ ইসলাম পালন ও পূর্ণ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা।

নিজের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, ইজ্জত ও ঈমান নিয়ে বাঁচার জন্য শুধু মজবুত গৃহ নির্মাণ করলে চলে না,  শক্তিশালী রাষ্ট্রও নির্মাণ করতে হয়। তাই রাষ্ট্র নির্মাণ নবীজী (সা:)‌’র অতি গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত। তিনি ১০টি বছর সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। শত শত সাহাবী সে কাজে শহীদ হয়ে গেছেন। কিন্তু হাসিনা নিজের শাসন বাঁচানোর প্রয়োজনে নবীজী (সা:)‌’র যে পবিত্র সূন্নত ও ইসলামের ফরজ বিধান পালন অসম্ভব করে রেখেছে। এভাবে সে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটি ব্যর্থ করে দিচ্ছে।

পূর্ণ ইসলাম পালন ও পূর্ণাঙ্গ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার জন্য শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত  পালনের স্বাধীনতা থাকলে চলে না, থাকতে হয় কুর’আন-হাদীসসহ সর্ববিধ ইসলামী জ্ঞানার্জনের স্বাধীনতা এবং থাকতে হয় সে জ্ঞান দানের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা। শুধু কৃষি ও শিল্পকরখানার উৎপাদন বাড়ালে চলে না, জ্ঞানদানের আয়োজনও বাড়াতে হয়। শুধু লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য শস্য উৎপাদন করলে চলে না, লক্ষ লক্ষ বইয়ের প্রকাশনা ঘটাতে হয়। কিন্তু বইয়ের প্রকাশনার উপর রয়েছে হাসিনার কঠোর নিয়ন্ত্রন। বিশেষ করে যে বইয়ে তার স্বৈরাচারি শাসনের বিরুদ্ধে বয়ান রয়েছে সে বইয়ের প্রকাশ নিষিদ্ধ। বাজেয়াপ্ত করছে জিহাদ বিষয়ক বই।

বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষাব্যবস্থায় বিলুপ্ত করা হয়েছে কুর’আন-হাদীসের শিক্ষা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র তার শিক্ষালাভ শেষ করছে কুর’আন-হাদীসের উপর গভীর অজ্ঞতা নিয়ে। অথচ সে অজ্ঞতার দূর করাই হলো মুসলিমের জ্ঞানার্জনের মূল লক্ষ্য। সে জ্ঞানার্জন ইসলামে ফরজ তথা বাধ্যতামূলক। এমন কি শিক্ষাঙ্গণের বাইরে কুর’আনের তাফসির এবং জুম্মার খোতবার উপর প্রতিষ্ঠা করেছে কড়া নজরদারী । অথচ একমাত্র কুর’আনী জ্ঞান থেকেই ঈমান পুষ্টি পায়। নইলে ঈমান মারা যায। কিন্তু হাসিনা ঈমানে পুষ্টিদানের সকল মাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এভাবে বাধাগ্রস্ত করছে জান্নাতের পথে চলাকে। এবং সহজ করেছে জাহান্নামের পথে চলাকে। হাসিনা এভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছে শয়তানের একনিষ্ট এজেন্ট ও ইসলামের শত্রু রূপে। এজন্য নরেন্দ্র মোদির ন্যায় হিন্দুত্ববাদীর কাছে সে এতো প্রিয়।

তৃতীয় অপরাধ: ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকে নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধে পরিণত করেছে।

ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো রাষ্ট্রের বুকে  আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠার জিহাদ। এই জিহাদই হলো মুসলিমের রাজনীতি। মুসলিম জীবনে এ জিহাদ না থাকলে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ও তাঁর শরিয়তী বিধান স্রেফ কিতাবে থেকে যায়। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে।

কম্যুনিস্টগণ যেমন কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক লড়াই করে, তেমনি মুসলিমগণ লড়াই করে ইসলামের বিধানকে প্রতিষ্ঠা দিতে। সে লড়াই হলো ইসলামের পবিত্র জিহাদ। কোটি কোটি মানুষের নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত এবং লক্ষ লক্ষ  মসজিদ-মাদ্রাসা মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী বিধান প্রতিষ্ঠা পায় না। সে জন্য চাই জিহাদের রাজনীতি। সেটিই তো ইসলামের ফরজ বিধান। কিন্তু হাসিনা সে জিহাদের রাজীতিকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বলে  এবং সেটিকে দণ্ডনীয় অপরাধে পরিণত করেছে। এমন ইসলামী এজেন্ডা নিয়ে কাজ করলে হাসিনার নির্বাচনি কমিশন নিবন্ধন দেয়না। এটি হলো ইসলামের বিরুদ্ধে হাসিনার যুদ্ধ। এটি হলো তার হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা যা খুশি করছে ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের।

চতুর্থ অপরাধ: দেশকে চুরিডাকাতির মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়েছে।

হাসিনার শুধু ভোটের উপর ডাকাতি করেনি। ডাকাতি করেছে জনগণের সম্পদ তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপরও। হচ্ছে ব্যাংক ডাকাতি। একমাত্র ইসলামী ব্যাংক থেকে ডাকাতি হয়ে গেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ডাকাতির শিকার হয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলি। ডাকাতি করা সে অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিবিদদের মতে প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ডাকাতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসছে -যেমনটি হয়েছিল শেখ মুজিবের শাসনামলে। মুজিবের সৃষ্ট সে দুর্ভিক্ষ প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। বাংলাদেশ এখন তেমনি এক দুর্ভিক্ষের মুখে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে কোটি কোটি মানুষ এখন দুবেলা খাবার খেতে পারে না। দুর্ভিক্ষের সে খবর ছাপানোও এখন অপরাধ।

 পঞ্চম অপরাধ: দেশকে পরিণত করেছে ভারতের অধীনত পরাধীন রাষ্ট্রে।

ভারতের যে কোন প্রদেশের ন্যায় বাংলাদেশও আজ দিল্লির মুক্ত বাজার। বাস, ট্রাক, স্কুটার, মটর সাইকেল, সাইকেল,বস্ত্র থেকে শুরু করে ভারতীয় পণ্যের প্লাবন বইছে বাংলাদেশে। পশ্চিম বাংলা, বিহার, আসাম, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ -এরূপ ৫টি রাজ্যজুড়ে ভারতীয় পণ্যের যতবড় বাজার তার চেয়ে বড় বাজার হলো বাংলাদেশ। এক কোটি প্রবাশী বাংলাদেশীর পাঠানো রিমিটান্সের কারণে বাংলাদেশীদের ক্রয়ক্ষমতা ভারতীয়দের চেয়ে অধিক। আর তা থেক ফায়দা নিচ্ছে ভার।

তবে হাসিনা শুধু বাজার দেয়নি। ভারতকে দিয়েছে পদ্মা, তিস্তাসহ বহু নদীর পানি, দিয়েছে করিডোর, এবং দিয়েছে দেশের বন্দর। ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান শঙ্কর রায় চৌধুরীর দাবী, বাংলাদেশকে বাঁচতে হবে ভারতীয় রাডারের নজরদারীতে। সে কথা সে পাকিস্তান ও নেপালকে শোনাতে পারেনা। তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোথায়? পাকিস্তান আমলে ২৩ বছরে কি পূর্ব পাকিস্তানের উপর এরূপ ভারতের দখলদারি ছিল? এই পরাধীনতাই কি তবে একাত্তরের অর্জন। মুজিব কি তবে এ পরাধীনতার জনক?

হাসিনার দাবী করেছে, ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রয়ের মুচলেকা দিয়ে নাকি খালেদা জিয়া অতীতে ক্ষমতায় এসেছিল। হাসিনা তাই মেনে নিয়েছে, বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় কে বসবে -সেটিও নির্ধারিত হয় দিল্লির শাসক মহল থেকে। এ থেকে প্রমাণ মেলে হাসিনাও ক্ষমতা এসেছে দিল্লির কাছে মুচলেকা দিয়ে। ভারতকে করিডোর ও বন্দর দেয়া এবং নরেন্দ্র মোদির বন্ধু আদানী‌’র কোম্পানীর হাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য লক্ষ্য কোটি টাকার অধিক অর্থের প্রকল্প তুলে দেয়া কি সে মুচলেকার অংশ?

হারাম হলো আত্মসমর্পণ এবং ফরজ হলো শত্রুনির্মূলের জিহাদ

প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগণ কি হাসিনার ন্যায় তাদের সবচেয়ে বড় শত্রুর শাসনকে মেনে নিবে? বাঁচবে কি তার কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে? নিজ গৃহে ডাকাত পড়লে বা আগুন লাগলে ফরজ হলো ডাকাত তাড়ানো ও আগুন থামানো। সে মুহুর্তে নামাজ কাজা করা চলে, কিন্তু ডাকাত তাড়ানো ও আগুন থামানোর কাজে কোন কাজা করা যায় না। তেমনি কাজা নেই দেশে বুক থেকে হাসিনার ন্যায় সবচেয়ে ঘৃণ্য শত্রু ও সবচেয়ে বড় অপরাধীর শাসন নির্মূলের কাজ।

মহান আল্লাহতায়ালা হারাম করেছেন শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচা এবং ফরজ করেছেন শত্রুনির্মূলের কাজ। উম্মাহর ভাগ্য তো এ জিহাদের মাধ্যমেই পরিবর্তীত হয়। কে মুসলিম, আর কে মুনাফিক -সে ফয়সালাটি হয় ইসলামের শত্রু নির্মূলের এ জিহাদে অংশ নেয়া থেকে। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদত ঘুষখোর ও সূদখোর দুর্বৃত্ত এবং জালেম ফ্যাসিস্টও করতে পারে। কিন্তু এরূপ দুর্বৃত্তদের জীবনে ইসলামের শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ থাকে না। নবীজী (সা:)’‌র আমলে যাদের জীবনে সে জিহাদশূণ্যতা ছিল তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের জীবন থেকে ক’জন বাংলাদেশী শিক্ষা নিচ্ছে? ০২/০৪/২০২৩।