মহাসড়কে বা রেলপথে যারা অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবে, তাদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দলের হরতাল এবং দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বনানীর বাসভবনে জরুরি এ বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, হরতালের সময় যারা ভাঙচুর করবে, গাড়ি পোড়াবে, রেললাইন উপড়ে ফেলবে শুধু তাদেরই নয়, যারা হরতাল ডেকেছে এবং যারা এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে। এ জন্য সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, যারা হরতালের নামে মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে, জানমালের ক্ষতি করবে, মহাসড়ক ও রেলপথে আগুন দেবে, ভাঙচুর করবে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি, ফৌজদারি ব্যবস্থাসহ কঠোর পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের দেখামাত্র গুলি করা হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে কি না—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না। তিনি বলেন, ‘তারা হরতাল দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, মানুষ মারবে আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বসে থাকবে, তা তো হবে না। আমরা মহাসড়ক, রেলপথ উন্মুক্ত রাখতে চাই। যারা বাধা দেবে, রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দেখামাত্র গুলির সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি এমন সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আমি একমত নই। সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, নানা কৌশলে তাদের প্রতিহত করা যেতে পারে। কিন্তু গুলি করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।’ তিনি বলেন, সরকার চাইলে তাদের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে আটক করে রাখুক। কিন্তু চরম বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
গতকালের বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়েও আলোচনা হয়। রাজধানীতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য এসব নেতাকে দায়ী করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা ও বেআইনি সমাবেশ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী শক্তির ত্রাস সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কৌশল প্রয়োগের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। সম্পদ এবং ব্যক্তির প্রাণ রক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকু ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোনো ব্যক্তির ধ্বংসাত্মক কাজ নিবৃত্ত করার জন্য আইনগত প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে, এরপর সতর্ক করা যাবে। কিন্তু জীবনহানি করা যাবে না। কোনোভাবেই বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়া যাবে না।
Source: Prothom Alo