প্রতিমায় আগুন, যুবলীগের মূল হোতা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

2015_09_10_21_19_30_DE3jQwIj2213s8Pr8E4oVtkVwBxIeF_original

৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। রাত ১২টা। বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়া এলাকায় রেল লাইন সংলগ্ন লক্ষ্মী প্রতিমা হাউজে হামলা চালায় যুবলীগ নামধারী কয়েক দুর্বৃত্ত। পুড়িয়ে ফেলে ৫টি সর্প প্রতিমা ও প্রতিমা তৈরির বেশকিছু কাঠামো। এ সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে আটক করে ২ জনকে। পরদিন শনিবার প্রতিমা তৈরির কারিগর গনেশ চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিমা পুড়িয়ে ফেলার নেপথ্যে ছিলেন যুবলীগ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত বাপ্পী কুমার চৌধুরী। তিনি এর আগে শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। শহরের উত্তর চেলোপাড়া রেললাইন এলাকার বস্তি ও আশপাশের এলাকায় যার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট বাসিন্দারা। সেই বাপ্পীকেই মামলা থেকে অদৃশ্য কারণে বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে যুবলীগ নামধারী ক্যাডার বাপ্পী কুমার চৌধুরী রয়েছে এখন পর্যন্ত ধরা ছোয়ার বাইরে। যদিও পুলিশ বলছে, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি গেল ৬ দিনেও দেখা যায়নি।

এছাড়া, ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইতিমধ্যেই মামলার বাদীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা আপোষ করার উদ্দেশ্যে এফিডেভিট করে নেয়া হয়েছে। প্রতিমা পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় পুজা উদযাপন পরিষদ এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। বরং তাদের ভুমিকাও রহস্যময় বলে অভিযোগ স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের।

স্থানীয়রা জানায়, বকেয়া তিন হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে গত শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে শহরের উত্তর চেলোপাড়া এলাকায় রেল লাইন সংলগ্ন লক্ষ্মী প্রতিমা হাউজে হামলা চালায় যুবলীগ নামধারী কয়েক যুবক। তারা সেখানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ৫টি সর্প প্রতিমা এবং বেশ কিছু প্রতিমা তৈরির কাঠামো পুড়িয়ে ফেলে। খবর পেয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিভিয়ে ফেলে এবং সুরুজ এবং জাকির নামের যুবলীগ নামধারী দুই যুবককে হাতে নাতে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় পরদিন শনিবার প্রতিমা তৈরির কারিগর গনেশ চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা গ্রেপ্তার দু’জন ছাড়াও রতন নামের আরও একজনকে আসামি করা হয়। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ রতনকেও গ্রেপ্তার করে।

এদিকে, একটি প্রভাবশালী মহল আসামিদের পক্ষ নিয়ে মামলার বাদী গনেশ চন্দ্র সরকারকে ভয়ভীতি দেখিযে বুধবার আদালতে  নিয়ে গিয়ে মামলা আপোষের উদ্দেশ্যে এফিডেভিট করে নেয়।

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী কারিগর রেল লাইনের পার্শ্বে বস্তিতে বসবাস করেন। আসন্ন দুর্গাপুজা উপলক্ষে প্রতিমা তৈরির জন্য তেমন কোনো জায়গা পাচ্ছিলেন না। গত দুই মাস আগে চেলোপাড়ার যুবলীগ নামধারী ক্যাডার বাপ্পী চৌধুরী জায়গা করে দেয়ার জন্য তার কাছে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এরপর ২০ হাজার টাকায় চুক্তি হলে বাপ্পী চৌধুরী রেল লাইনের পার্শ্বের বস্তিতে একজনের ঘর ভেঙে দিয়ে গনেশ চন্দ্রকে প্রতিমা তৈরির জায়গা করে দেয়। ওই সময় বাপ্পী চৌধুরীকে ১৭ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। বকেয়া ৩ হাজার টাকার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে চাঁদা দিয়ে আসছিল বাপ্পী চৌধুরী ও তার সহযোগিরা।

বকেয়া এ ৩ হাজার টাকা না পেয়েই শুক্রবার রাতে হামলা চালায় তারা। ঘটনার পরপরই প্রভাবশালীরা তদবির করে এজাহারে বাপ্পী চৌধুরীর নাম দিতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো নেতাও ভুক্তভোগী করিগরের খোঁজ নেননি। এমনকি কোনো প্রতিবাদও জানান নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

এ ব্যাপারে বগুড়া শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক উদয় কুমার বর্মন বাংলামেইলকে বলেন, ‘শুনেছি প্রতিমা তৈরির কিছু ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তারা যুবলীগের কোনো পদে নেই।’

তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদার বিনিময়ে ওই জায়গায় প্রতিমা বানানোর সুযোগ করে দেয়া বাপ্পি যুবলীগের কোনো পদে না থাকলেও সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরব থাকেন। যুবলীগের পরিচয় দিয়েই তিনি ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করছেন দীর্ঘ দিন ধরে।

প্রতিমা তৈরি কাঠামো আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় পুজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার ভূমিকা কি? এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সভাপতি দিলীপ কুমার দেব বাংলামেইলকে বলেন, ‘আসামি গ্রেপ্তার করতে আমি পুলিশকে সহযোগিতা করেছি। উত্তর চেলোপাড়ায় রেল লাইনের পার্শ্বের বস্তিতে অনেক গরিব হিন্দু বসবাস করে। তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয় বলে শুনেছি। কিন্তু তারা কোনোদিন প্রতিবাদ জানায় না। এছাড়া বিভিন্ন কারণে অনেক ঘটনার প্রতিবাদ করাও যায়না।’

মামলা আপোষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাদী আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ করেনি। পরামর্শ করলে আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের উপর মহলে কথা বলতাম।’

Source: Bangla Mail

1 COMMENT

  1. Golden boys of Hasina can get away with murder and terrorism. RAB and Police cannot get them. They cannot be indicted as they represent the faith and direction of the Awami League and the present rulers. The Awami student organizations have created more havoc during Hasina’s rule then any other time in the history of Bangladesh. They (with the help of DGFI) threw the firebombs into busses and blamed BNP. That is why Hasina showed crocodile tears and loud mouthed the burning of people. She showed the whole world something that was her doing. She is the best. She will eventually get the lesson of her life.

Comments are closed.