এ মুহূর্তে ভারতকে ট্রান্সশিপমেন্ট প্রদানে প্রবল আপত্তি তুলে নৌ মন্ত্রণালয়। আশুগঞ্জ ও শেরপুর বন্দরে এই ট্রান্সশিপমেন্টের উপযোগী অবকাঠামোগত সুবিধা এখনো সৃষ্টি হয়নি। এ কারণেই এ আপত্তি। নৌ মন্ত্রণালয়ের এ আপত্তি সত্ত্বেও শিগগিরই ভারতকে দেয়া হচ্ছে ট্রান্সশিপমেন্ট। তবে কবে নাগাদ এটা চালু হবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে নারাজ। তারা জানিয়েছেন, এটা সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিষয়। অবকাঠামো সুবিধা না থাকলেও পণ্য পরিবহন সুবিধা দেয়ার েেত্র ট্রান্সশিপমেন্ট প্রদানের দাবি দীর্ঘ দিন ধরে জানিয়ে আসছে ভারত। এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারতের সাথে বিদ্যমান প্রটোকলে আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আখাউড়া ও শেরপুর থেকে সুতারকান্দি পর্যন্ত ট্রাকে পণ্য পরিবহনে কোনো বাধা না থাকলেও কখনোই সুতারকান্দি রাস্তায় ভারতীয় পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করেনি। বিশেষ করে সুতারকান্দি পর্যন্ত ট্রাকে পণ্য পরিবহনের প্রয়োজনীয় সড়ক অবকাঠামো নেই। কর্মকর্তারা জানান, অবকাঠামো সুবিধা সৃষ্টি না করে ভারতকে এভাবে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়া অব্যাহত থাকলে বন্দর ও সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তারা জানান, সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের এক বৈঠক থেকে ভারতের এ দাবিকে ‘না’ বলা হয়েছিল।
কর্মকর্তারা জানান, ভারতের প থেকে দাবি থাকলেও এখনই নিয়মিত নৌ ট্রানজিট দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয় নৌ মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং মাশুল নির্ধারণ ছাড়া নিয়মিত নৌ ট্রানজিট চালু করা সম্ভব নয় বলে নৌ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে আশুগঞ্জ বন্দর দিয়ে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক চালু করা নৌ ট্রানজিট পরিচালনায় নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। নৌ ট্রানজিট দেয়ার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো আশুগঞ্জে এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে অবকাঠামো তৈরির প্রস্তুতি এখনো চলছে।
ওই দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পক্ষ থেকে ভারতকে ট্রান্সশিপমেন্ট প্রদান প্রসঙ্গে এক চিঠিতে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, আশুগঞ্জ বন্দর ও আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো ‘ট্রায়াল রান’ চালানো যাবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প থেকে নৌ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, নৌ প্রটোকল চুক্তি অনুসারে আশুগঞ্জ বা শেরপুর থেকে সুতারকান্দি পর্যন্ত ভারতীয় পণ্য পরিবহনে কোনো বাধা নেই। তবে দেখতে হবে ট্রান্সশিপমেন্ট উপযোগী অবকাঠামো রয়েছে কি না। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এনবিআর-এর পক্ষ থেকে অবকাঠামো সুবিধার বিষয়ে জানতে চাওয়া চিঠির জবাবে বিআইডব্লিউটিএ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
অন্য দিকে নতুন করে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় ভারতের ব্যাপক ট্রানজিট দাবি পূরণের বিষয়ও বিবেচনা করছে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। শুধু নৌপথ নয় ট্রানজিটের জন্য স্থল-বন্দর, নৌবন্দরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান ব্যবহার করতে চায় ভারত। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারে দেশটি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দাবি করে আসছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে ভারত। এ প্রসঙ্গে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। এ কারণে বিষয়টিতে বাংলাদেশের সায় রয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ভারত ব্যবহার করলে তাতে বাংলাদেশের লাভ হবে। তিনি বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের ছয়টি নৌরুট রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি রুট অব্যবহৃত থেকে গেছে। এগুলো ব্যবহার করতে চায় ভারত। এগুলো হচ্ছে ভারতের করিমগঞ্জ থেকে শেরপুর এবং আসামের দৈ খাওয়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত। এ দুই রুট চালু করতে ভারতের বয়া, মার্কা, পাইলটিংসহ সরঞ্জামাদি স্থাপন বাবদ বাংলাদেশকে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ভারতের চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারে আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন। নতুন নৌরুট চালু হলে সরকারের কত টাকা আয় বাড়বে এর কোনো হিসাব-নিকাশ এখনো হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিষয়টি এড়িয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের সব ধরনের মাশুল আদায় করে এনবিআর। এটা তাদের বিষয়।
Source: Naya Diganta
Sk.Hasia and AL handed over sovereignty of Bangladesh to India