যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা লুট হয়ে যাওয়ার পর এর দায় নিতে চাচ্ছে না ব্যাংকটি । অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগের তির ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের ক্রটির দিকে। এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগে খোয়া যাওয়া ৮০০ কোটি টাকা উদ্ধার নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক পদ্ধতিগত ক্রটির কথা অস্বীকার করেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ফেডারেল ব্যাংক এর দায় এড়াতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, যেকোন বড় লেনদেনের ক্ষেত্রে হিসাবধারীর কাছে জানতে চাইতে হয়। এটা ব্যাংকিং কালচার। ফেডারেল ব্যাংক সেটি করেনি। এখানে ক্রটি আছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকও এর দায় এড়াতে পারে না। সন্দেহের তালিকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও রাখতে হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এএফএম আসাদুজ্জামান জানান, আমরা চেষ্টা করছি আগে অর্থ উদ্ধারের। তারপর দায় কার সেটি দেখা হবে। এখন দোষারোপের সময় নয়।
এদিকে সূত্র বলছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক জানিয়েছে তারা যথাযথ কোড ও প্রটোকল রক্ষা করে অর্থ লেনদেন করেছে। এখানে তাদের কোনো ত্রুটি নেই। তবে ই-মেইলে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংককে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানায়।
জানা গেছে, হ্যাকাররা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নোট ও প্রটোকল পর্যবেক্ষণ করে। সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে নিখুঁতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লুট করে হ্যাকাররা।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার ৬ কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে। ধারণা করা হচ্ছে ওই ৬ কর্মকর্তা কোনোভাবে জড়িত থাকতে পারেন। অথবা তাদের দুর্বলতাকেই ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, ‘হ্যাক’ করে এ অর্থ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি ধামা চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে তা প্রথমে প্রকাশ পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী ব্যবস্থা সুইফটের (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন-এসডব্লিউআইএফটি) বাংলাদেশ ব্যাংকের অংশে প্রবেশ করে দীর্ঘদিন ধরে পুরো ব্যবস্থাটিকে নজরদারিতে রেখেই অর্থ লুটের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের কী পরিমাণ অর্থ চলতি হিসাবে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ছিল, সেই তথ্যও নেয়া হয়েছে। কী কী উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চলতি হিসাবের অর্থ লেনদেন বা স্থানান্তর করা হতো, এসব বিষয়ও পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর। সে দেশে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
তবে ফরাসউদ্দিনের মত, বাংলাদেশের নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে। এখানে আরো উন্নয়ন করতে হবে। এমন ব্যক্তিদের দায়িত্বে দিতে হবে যারা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার থেকে অনুমতি পাবেন।
Source: amardeshonline