চাকরি পাচ্ছেন না ৪০০ ক্যাডেট
সরকারি-বেসরকারি একাডেমি থেকে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করেও চাকরি পাচ্ছেন না ক্যাডেটরা। মেরিন একাডেমি এবং বেসরকারি একাডেমিগুলোর অন্তত ৪০০ ক্যাডেট পড়াশোনা শেষ করে এখন সমুদ্রগামী জাহাজে ওঠার অপেক্ষায় দিন গুনছেন।
নিয়মানুযায়ী ক্যাডেট হিসেবে এক বছর সমুদ্রগামী জাহাজে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এরপর ক্যাডেটরা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরে পরীক্ষা দিয়ে অফিসার হিসেবে জাহাজে কর্মজীবন শুরু করতে পারেন। না হলে এ পেশায় কর্মজীবন শুরুর সুযোগ নেই। অথচ আট মাস ধরে অপেক্ষা করেও সুযোগ পাচ্ছেন না ক্যাডেটরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশীয় জাহাজগুলোতে এখন বছরে ২০০ ক্যাডেটের প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে। কিন্তু মেরিন একাডেমি থেকে গত ব্যাচে (গত বছরের ডিসেম্বরে) প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন ৩০৫ শিক্ষার্থী। গত আট মাসে জাহাজে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন প্রায় ১০৬ জন। এর আগে ৪৭তম ব্যাচের পাঁচজন ক্যাডেট এখনো জাহাজে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি।
এ ব্যাপারে মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টিকে সমস্যা হিসেবে না দেখে ক্যাডেটদের সমুদ্রগামী জাহাজে প্রশিক্ষণের জন্য বাজার খোঁজার দিকে নজর দেওয়া উচিত। সরকারি-বেসরকারি ইনস্টিটিউটগুলো থেকে এবার একসঙ্গে এক হাজার শিক্ষার্থী ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এ কারণে জাহাজে নিয়োগ পেতে অনেকের দেরি হচ্ছে।’
তবে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ করিম মনে করেন, সংকট নিরসনে এ মুহূর্তে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমিয়ে আনা দরকার। আবার সরকারি উদ্যোগে ‘ক্যাডেট ট্রেনিংশিপ’ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এ ব্যবস্থায় এক জাহাজে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি একসঙ্গে অনেক ক্যাডেটের প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করা যায়। ফিলিপাইনে এই উদাহরণ আছে।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি একাডেমির বাইরে অনুমোদন পাওয়া ১৮টি বেসরকারি ইনস্টিটিউট থেকে এবার প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পথে আছেন আরও ৪০০ জন। বিদেশি জাহাজে এসব ক্যাডেটের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা ওই সব ইনস্টিটিউটের। কিন্তু দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশেই ভিসা জটিলতার কারণে অনেক ক্যাডেটের জাহাজে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে পারছে না বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওশেন মেরিটাইম একাডেমি থেকে এবার ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন ৪০ জন। তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এই একাডেমির এ পর্যন্ত তিনজনকে জাহাজে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মারুফ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। কেমব্রিজ মেরিটাইম কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন ৫৫ জন। এসব ক্যাডেটের সিংহভাগই এখনো জাহাজে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি। একই অবস্থা অন্যান্য একাডেমির।
বেসরকারি ইনস্টিটিউটগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ মেরিটাইম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জে৵ষ্ঠ সহসভাপতি খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভিসা জটিলতা, গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি না থাকাসহ অনেক কারণে বিদেশি জাহাজে ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করতে সময় লাগছে।
অসহায় অভিভাবকেরা: ৪৮তম ব্যাচের একজন ক্যাডেটের অভিভাবক মো. আবদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার পর মনে হয়েছে, ছেলেটার ভাগ্য খুলেছে। এ জন্য দুই বছরে ধারদেনা করে সোয়া চার লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে আরও দুই লাখ। এখন ছেলে প্রতি মাসে কয়েক দফা ফেনী থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে শুধু হতাশ হয়ে ফিরে আসে।’
হতাশা প্রকাশ করে আরেকজন ক্যাডেট প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর প্রশিক্ষণ শেষে সোনালি স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। এখন ক্যাডেট হিসেবে কোনো জাহাজে নিয়োগের বা প্রশিক্ষণের নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। অসহায় হয়ে পথে পথে ঘুরছি।’
বেসরকারি একাডেমির কয়েকজন ক্যাডেট জানান, বেসরকারি একাডেমিভেদে দুই বছরের কোর্স সম্পন্ন করতে খরচ হচ্ছে ১২ থেকে ১৮ লাখ টাকা।
নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর বক্তব্য: সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জাহাজে লোক নিয়োগকারী সক্রিয় প্রতিষ্ঠান আছে ৬৫টি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের হক অ্যান্ড সন্স লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই বিদেশি জাহাজে লোক নিয়োগের বড় অংশই সরবরাহ করে থাকে। বাকিরা ভিসা জটিলতাসহ নানা কারণে বিদেশি জাহাজে লোক নিয়োগের সুযোগ বাড়াতে পারছে না।
জানতে চাইলে ম্যানিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গাফফার প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদার তুলনায় জোগানের সমতা না থাকলে ভারসাম্য তৈরি হয়। এ কারণে বিদেশি জাহাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সরকারের গঠনমূলক ও সময়োপযোগী উদ্যোগ দরকার।
Source: Prothom-Alo