যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ায় সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। সরকারের নির্দেশে গতকাল থেকে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ অন্য রুটগুলোতে গতকাল সকাল থেকে বাস চলেনি। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ঢাকায় প্রবেশপথ মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও আরিচা-পাটুরিয়ার ফেরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের ঢাকাগামী দশটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ট্রেনে দাড়ি-টুপিওয়ালাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়েছে। ফলে গতকাল ঢাকায় মানুষ ঢুকতে বা বের হতে পারেননি। হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচিতে মুসল্লিরা যাতে আসতে না পারেন, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে ঢাকাগামী বাস ও লঞ্চ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। হেফাজতে ইসলামের ঢাকামুখী লংমার্চ ঠেকাতে রাজধানীতে ঢোকার পাঁচটি পথ অবরোধ করে রেখেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ নাস্তিক সমর্থকরা।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানান, সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাস ও লঞ্চ চালালে লাইসেন্স বাতিল এবং চালক ও হেলপারদের মারধর করার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামীপন্থী পরিবহন নেতারা। এ হুমকিতে ভীত হয়ে যানবাহন চলাচল ও টিকিট বিক্রির কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। মুসল্লিরা যাতে লঞ্চ ছাড়তে বাধ্য করতে না পারে সেজন্য নৌবন্দর থেকে লঞ্চ সরিয়ে রাখা হয়েছে। তবে পরিবহন নেতারা দাবি করেছেন, নিরাপত্তার কারণে বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটে ঢাকায় আসছেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। বিকল্প পন্থায় ঢাকাগামী হেফাজতের নেতাকর্মীদের পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। ঘটেছে সশস্ত্র হামলার ঘটনা। দিনাজপুর, ফেনী, খুলনা, নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাওয়া, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াসহ অনেক স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের বহনকারী বাস আটক করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ফেরত যেতে বাধ্য করেছে। অন্যথায় ‘নাশকতা’ মামলায় গ্রেফতার করার হুমকি দেয়া হয়। সরকারদলীয়রা কয়েকটি স্থানে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বহনকারী বাস ও মাইক্রোবাস ভাংচুর করেছে। এসব বাধা সত্ত্বেও প্রতিটি জেলা থেকে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন মানুষ।
বিচ্ছিন্ন ঢাকা : রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের আজকের লংমার্চ কর্মসূচিতে আসা জনতাকে বাধা দিতে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সরকার। সাধারণত ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ সড়ক, নৌ ও রেলপথে হয়ে থাকে। পরিবহন নেতারা ভয়-ভীতি দেখিয়ে সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গতকাল অনিবার্য কারণ দেখিয়ে তিনটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে। এর ফলে কেউই ঢাকা আসতে পারছে না। গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, বরিশালসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর থেকে ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠী, পিরোজপুর দক্ষিণাঞ্চল থেকে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণানিশীথা, ঢাকা মেইল ও নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী নোয়াখালী এক্সপ্রেস ছেড়ে আসেনি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের ঢাকাগামী দশটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ট্রেনগুলোতে দাড়ি ও টুপিওয়ালা যাত্রীদের বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আজকের লংমার্চের আগে কোনো ট্রেন যাতে ঢাকায় না পৌঁছে সেজন্য নির্ধারিত সময়ের পরে ট্রেন ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। এতে ক্ষুব্ধরা ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি রেলওয়ের স্টেশনে ভাংচুর চালায়।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বাস মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি পার হয়ে ঢাকায় আসে। বাস পারাপার না করার জন্য গতকাল সকাল থেকে এ দুটি রুটে ফেরি বন্ধ রাখে বিআইডব্লিউটিসি। অপরদিকে ফেরিঘাটে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মহড়া দেয়। যশোরের মনিরামপুর থেকে আসা ৩৫টি বাসে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে হামলা চালায় শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা। কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে গতকাল কোনো বাস ছাড়েনি। বন্ধ ছিল কাউন্টার। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সড়ক পরিবহন সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহসহ কয়েক আওয়ামী লীগ নেতা বাস চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। লাইসেন্স বাতিল, হয়রানি ও গোলযোগের আশঙ্কায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছেন। ফোন করা হলেও এ প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একইভাবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনরা। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (যাপ) সংস্থার সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব উদ্দিন বীরবিক্রম ও সিনিয়র সহ-সভাপতি জাতীয় পার্টির এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপুসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নির্দেশে সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক লঞ্চ মালিক। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টার্মিনাল গিয়ে লঞ্চ না ছাড়তে চালকদের শাসিয়ে দিয়েছে।
ঢাকার পাঁচ প্রবেশপথে নাস্তিক সমর্থকদের পাহারা : হেফাজতে ইসলামের ঢাকামুখী লংমার্চ ঠেকাতে রাজধানীতে ঢোকার পাঁচটি পথ অবরোধ করে রেখেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ নাস্তিকদের সমর্থকরা।
গতকাল শাহবাগি ইমরান জানায়, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, টঙ্গী চৌরাস্তা, আশুলিয়া এবং কমলাপুর রেলস্টেশনে মঞ্চ বসানো হয়েছে।
সীমাহীন দুর্ভোগে যাত্রীরা : লংমার্চে বাধা দিতে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে অসুস্থ মানুষ, নারী ও শিশুরা বেশি দুর্ভোগে পড়েন। তীব্র রোদে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ মাঝপথে আটকা পড়েছেন। গাড়ি বন্ধের আগাম তথ্য না পাওয়া যাত্রীরা বাস টার্মিনালে গিয়ে আবার ফিরতে বাধ্য হন। অনেক স্থানে পরিবহন শ্রমিকদের ওপর চড়াও হন তারা। পথে আটকাপড়া যাত্রীরা হোটেল ও রাস্তায় অবস্থান করছেন। একই অবস্থা রাজধানীরও। গতকাল সন্ধ্যার পর গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অতিরিক্ত ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশায় গন্তব্যে গেছেন নগরবাসী।
পথে পথে বাধা : নাস্তিক ব্লগারদের বিচারের দাবিতে লংমার্চ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ঢাকায় আসার জন্য সক্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। শত শত কিলোমিটার দুরের জনপদ থেকে হেঁটে রওনা হয়েছেন। আগে রিজার্ভ করা বাসে চড়েও অনেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এতে পথে পথে বাধা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। চলন্ত ট্রেন ও ট্রেন স্টেশনগুলোতে গণহারে গ্রেফতার চালানো হয়েছে। সীতাকুণ্ডের টেরিয়াইল এলাকায় গতকাল বিকাল ৪টায় লংমার্চের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে ২৩টি গাড়ি ভাংচুর করে স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডাররা। মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর এলাকায় দক্ষিণাঞ্চল জেলা থেকে আসা হেফাজতে ইসলামের গাড়িবহরে গতকাল সন্ধ্যায় হামলা করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পুলিশি বাধার মুখে দিনাজপুর থেকে গতকাল বাদ জুমা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম-ওলামারা দিনাজপুর বড় মাঠে সমবেত হন। জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাহিনী লংমার্চের গাড়িবহরের অন্তত ২৫টি বাস আটকে দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রূপগঞ্জে মুসল্লিদের ওপর ছাত্র-যুবলীগের হামলা : রূপগঞ্জে লংমার্চে অংশগ্রহণের জন্য আসা গাড়িবহরে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সন্ত্রাসীরা। এতে ১০ জন আহত হয়। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ থানার গোলাকান্দাইল এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। রূপগঞ্জ থানা যুবলীগ সভাপতি কামরুল হাসান তুহিন, ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক হানজেলা ও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক নাঈম ভুইয়ার নেতৃত্বে ৭০-৮০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল লাঠিসোটা নিয়ে এ হামলা চালায়।
সীতাকুণ্ডে গাড়িবহরে যুবলীগের হামলা, ২৩টি গাড়ি ভাংচুর : সীতাকুণ্ডের টেরিয়াইল এলাকায় গতকাল বিকাল ৪টায় লংমার্চের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে ২৩টি গাড়ি ভাঙচুর করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডাররা। অবরোধের কারণে এ সময় কয়েকশ’ যানবাহন আটকে পড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
যশোরে ২৭টি গাড়ি আটকে আ.লীগের হামলা : যশোরে গতকাল বিকাল ৪টায় দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলে লংমার্চ বহরের ২৭টি গাড়ির প্রায় দুই হাজার যাত্রী আটকা পড়ে। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকদের সঙ্গে হেফাজতকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে হেফাজতের ১০-১২ কর্মী আহত হন।
গজারিয়ায় হেফাজতে গাড়িবহরে আ.লীগের হামলা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর এলাকায় দক্ষিণাঞ্চল জেলা থেকে আসা হেফাজতে ইসলামের গাড়িবহরে গতকাল সন্ধ্যায় হামলা করেছে আ.লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ৬ জন আহত হয় এবং ৩টি মাইক্রোবাস ভাংচুর করা হয়। পরে গাড়িবহরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নেমে এসে পাল্টা প্রতিরোধ করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান : সিলেট জমিয়তের একটি দল লংমার্চের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৫টায় তারা চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের উদ্দেশে রওনা হন। পুলিশের বাধার মুখে তারা বন্দরবাজার, সিটি পয়েন্ট ঘুরে দক্ষিণ সুরমায় যান। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় তারা অবস্থান নেন দক্ষিণ সুরমায় ঢাকা-সিলেট বাইপাসে।
জাবিসংলগ্ন মহাসড়কে ছাত্রলীগের অবরোধ : লংমার্চ ঠেকাতে বিতর্কিত গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষিত রেল, নৌ ও সড়কপথ অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ, ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের ৫০-৬০ নেতাকর্মীর নেতৃত্বে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
রাজশাহীতে ভাড়া করা ৬০ বাস বাতিল : রাজশাহীতে লংমার্চে যোগদানের উদ্দেশে ১০ দিন আগে থেকে প্রায় ৬০টি বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে ভাড়া করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে ২০টি এবং গতকাল আরও ৪০টি বাস রাজশাহী থেকে লংমার্চের উদ্দেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা সরকারের ইন্ধনে ভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাস দেয়নি। এদিকে গতকাল রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ‘পদ্মা’ এক্সপ্রেস ট্রেনের বৈধ ফ্লাইং টিকিটের যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে দেয়া হয়নি। এছাড়া সরকারের নির্দেশে ঢাকা-রাজশাহী রুটে বাস চলাচল বন্ধ করা দেয়া হয়েছে।
নাটোরে পুলিশের বাধা, রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ : নাটোরে লংমার্চমুখী মানুষদের বাধা দিয়েছে পুলিশ। নাটোর পুলিশ লাইনের সামনে বাস-ট্রাকসহ সব পরিবহন তল্লাশি চালিয়ে দাড়ি-টুপিওয়ালাদের ঢাকা যেতে বাধা দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়। পরে মুসল্লিরা তাত্ক্ষণিক পুলিশলাইনের সামনেই নাটোর-ঢাকা মহাসড়কে দুপুরের প্রখর রোদে শুয়ে থেকে প্রতিবাদ জানায়।
পটিয়ায় আটকা পড়েছে ২০ হাজার মুসল্লি : গতকাল ফজর নামাজের পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহত্ কওমি মাদরাসা আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া, মাদরাসা জামেয়া জিরি, কৈয়াগ্রাম মাদরাসা এবং ওই এলাকার হাজার হাজার মুসল্লি লংমার্চের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু সরকারি বাধায় বাস না পেয়ে তারা পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম শহরের জমিয়তে ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে জমায়েত হন।
চুয়াডাঙ্গায় ঢাকাগামী পরিবহন বন্ধ : হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন গতকাল ভোর থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিককরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় পরিবহন মালিকরা জরুরি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
হবিগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী বাস বন্ধ : হবিগঞ্জ থেকে গতকাল ঢাকাগামী সব বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। ফলে একদিকে যেমন লংমার্চে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে তেমনি জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঢাকা যেতে পারছেন না।
বাধা উপেক্ষা করে কক্সবাজারের ১৫ বাস ঢাকার উদ্দেশে : কক্সবাজারে প্রশাসনিক বাধা এবং গাড়ি মালিক-শ্রমিকদের চক্রান্তের মুখেও অন্তত ১৫টি বাসে সাত শতাধিক মুসল্লি গতকাল ভোরে ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ছেড়েছেন। চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ৩০টি, কক্সবাজার ও রামুতে ২০টি, উখিয়া ও টেকনাফে ২০টি এবং কুতুবদিয়ায় ৮টি গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের চাপের মুখে গাড়ি মালিকরা ভাড়া বাতিল করেছেন।
বরিশাল-ঢাকা রুটে সব বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ : নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে সব পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বাসের মতো গতকাল বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে কোনো লঞ্চও ছেড়ে যায়নি।
এমনকি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর লঞ্চ থেকে অসংখ্য মুসল্লিকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লঞ্চ টার্মিনালে প্রবেশ এবং লঞ্চে ওঠার আগে পুলিশের তল্লাশির নামে বাড়াবাড়ির আতঙ্কেও সাধারণ মুসল্লির অনেকেই ফিরে আসেন। যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তার অজুহাত দেখানো হলেও লংমার্চের আয়োজক হেফাজতে ইসলামের দাবি, ঢাকায় যেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের চাপে পড়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, ঘাদানিক ও স্বাধীনতা ফোরামের নেতারা পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে যান চলাচল বন্ধে প্রভাব সৃষ্টি করেছে। তবে এসব প্রতিবন্ধকতায় থেমে থাকেনি লংমার্চে যোগ দেয়া। গতকাল ঢাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও প্রতিবন্ধকতার কারণে আগের দিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় গেছেন বরিশাল থেকে অসংখ্য মুসল্লি। হেফাজতে ইসলামসহ একাধিক সূত্র জানায়, শনিবারের লংমার্চে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে কয়েক লাখ আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতাকে লংমার্চে শরিক করতে ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করা হয়।
সরেজমিন গতকাল একাধিকবার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নতুল্লাবাদে গিয়ে দেখা যায়, সাকুরা, সুরভী, ঈগলসহ অন্যান্য পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। এমনকি আগে থেকে বুকিং দেয়া বা অগ্রিম কাটা টিকিটের দাম ফেরত দিতে দেখা গেছে একাধিক কাউন্টার থেকে।
কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটে ফেরি ও নৌযান বন্ধ : গতকাল সকাল থেকেই কোনো আগাম জানান না দিয়েই দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে সব ধরনের ফেরি ও নৌযান চলাচল বন্ধ রাখায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ভোর থেকে ঘাট এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ-র্যাব দেখা যায়। ঢাকামুখো অনেকেই পদ্মা নদী পাড়ি দিতে না পেরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
ভৈরবে বাস চলাচল বন্ধ : গতকাল সকাল থেকে ভৈরব-ঢাকা, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহসহ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় বাস মালিক সমিতি। ফলে বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য যাত্রী।
ঢাকার সঙ্গে খুলনার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, যুব-ছাত্রলীগের বাধা, আটক ১৪ : লংমার্চকে বাধাগ্রস্ত করতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পরিবহন মালিকদের নিষেধাজ্ঞার কারণে খুলনা থেকে রাজধানীর উদ্দেশে কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। সকালে রেলস্টেশনে ঢাকাগামী ট্রেনে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ শীর্ষস্থানীয় ১৪ নেতাকে আটক করে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েছে।
পাইকগাছায় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট : খুলনার পাইকগাছায় গতকাল সকাল থেকে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এ কারণে লংমার্চে অংশ নিতে না পেরে অনেকেই ফিরে গেছেন। অনেকেই ভিন্নপথে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন।
কাউখালীতে লঞ্চ-বাস-ফেরি বন্ধ : খুলনা-বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পিরোজপুরের কাউখালী বেকুটিয়া ফেরি ও কাউখালী-স্বরূপকাঠি-বরিশাল সড়কের আমরাজুরী ফেরি গতকাল থেকেই চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফেরির দুই পাড়ে অসংখ্য গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও ফেরি চলাচল বন্ধ করে রেখেছে। ফেরির কর্মরর্তারা বলেন, উপর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দু’দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে।
সরাইলে বাধা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার হেফাজতে ইসলামের নেতারাসহ সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলেম ওলামা-জনসাধারণ ঢাকা অভিমুখে লংমার্চে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করলে প্রশাসন বাস মালিকদের বাস না দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়।
হাটহাজারীতে বাধা পেরিয়ে ৪০ সহস্রাধিক মুসল্লির ঢাকায় প্রবেশ, বিজিবি মোতায়েন : ঢাকায় লংমার্চে অংশ নিতে হাটহাজারী উপজেলা হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে সরকার ও পরিবহন মালিকদের শত বাধা উপেক্ষা করে ৪০ সহস্রাধিক তৌহিদি জনতা ঢাকায় পৌঁছেছে। জুমার নামাজের পর হেফাজতে ইসলামের সমর্থনে সর্বস্তরের তৌহিদি জনতা খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে হাটহাজারী উপজেলা সদর প্রদক্ষিণ করে। উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করেছে।
মৌলভীবাজার থেকে অর্ধশত গাড়িবহর ঢাকা অভিমুখে : পরিবহনের ওপর সরকারিভাবে অঘোষিত বাধা থাকা সত্ত্বেও লংমার্চে শরিক হতে মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল থেকে অর্ধশত কার ও লাইটেস গাড়িবহর নিয়ে জুমার নামাজের পর ঢাকা অভিমুখে রওনা হয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। জেলা সেক্রেটারি সৈয়দ মাসউদ আহমেদের নেতৃত্বে কাফনের কাপড় পরে জায়নামাজ তসবিহ ও শুকনা খাবারসহ শত শত নেতাকর্মী এ যাত্রা শুরু করেন।
দিনাজপুরের ২৫ বাস যেতে পারেনি : পুলিশি বাধার মুখে দিনাজপুর থেকে গতকাল বাদ জুমা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম-ওলামারা দিনাজপুর বড় মাঠে সমবেত হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাহিনী লংমার্চের গাড়িবহরের অন্তত ২৫টি বাস আটকে দিয়েছে।
কুমিল্লা থেকে হেঁটে ঢাকায় : কুমিল্লা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন পথে হেফাজতে ইসলামের প্রায় ১০ সহস্রাধিক নেতাকর্মী লংমার্চে ঢাকায় গেছেন। গতকাল পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে তারা গাড়ি না পেয়ে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
সিরাজগঞ্জে যমুনা সেতুতে বাধা : লংমার্চে যেতে না পেরে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের সয়দাবাদে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন হেফাজতে ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার নেতাকর্মীরা। সকালে পৌর বাসটার্মিনাল থেকে পাঁচটি বাস নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তারা। পরে শহরের রেলগেট এলাকায় পৌঁছালে বাসের চালক ঢাকায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি-লঞ্চ বন্ধ : গতকাল বিকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঝালকাঠিতে বাস বন্ধ : লংমার্চ ঠেকাতে গতকাল সকাল থেকেই ঝালকাঠির অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এরই মধ্যে এক হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন।
যানবাহন-সঙ্কটে সাতক্ষীরার হাজার হাজার মানুষ : যানবাহন-সঙ্কটের কারণে লংমার্চে অংশ নিতে পারছে না সাতক্ষীরার হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান। বিভিন্ন যানবাহনে অগ্রিম টাকা দিয়েও গণজাগরণ মঞ্চ ও ২৭টি সংগঠনের ডাকা হরতালের কারণে সাতক্ষীরা ছাড়তে পারছেন না তারা।
কুড়িগ্রামে যান চলাচল বন্ধ : হরতালে কুড়িগ্রামে সব ধরনের দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই কুড়িগ্রাম-ঢাকা রুটে দূরপাল্লার যান চলাচল করছে না।
বগুড়া অবরোধের ঘোষণা : বগুড়া অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। ঢাকাগামী বাস বন্ধ করে দেয়ায় লংমার্চে যেতে না পারায় তারা আজ (শনিবার) শহরতলির বনানীতে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে। এদিকে সকাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান বন্ধ : সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো যান চলাচল করেনি। এ কারণে গন্তব্যের উদ্দেশে এসে সাভার ধামরাইয়ের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দুর্ভোগে পড়েন শত শত যাত্রী। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে না পেরে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পটুয়াখালীতে সড়ক অবরোধ : পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা যাওয়ার লঞ্চ ও বাস চলাচল বন্ধ করায় ঢাকা যেতে না পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন হেফাজতে ইসলাম পটুয়াখালী জেলার নেতাকর্মীরা। এ কারণে হেফাজতে ইসলামের কয়েক হাজার নেতাকর্মী লঞ্চঘাটের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করছেন।
গাড়ি দেয়নি মাগুরা বাস মালিক সমিতি : হেফাজতে ইসলাম মাগুরা জেলা শাখার নেতারা দুটি বাস রিজার্ভ করে মাগুরা শিমুলিয়া মাদ্রাসা থেকে গতকাল দু’শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকা লংমার্চের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। এ সময় যশোর থেকে ঢাকাগামী লংমার্চের শতাধিক গাড়িবহরে তারা যুক্ত হয়। ৫০টি বাস ভাড়া করা হলেও বাস মালিক সমিতি তা দেয়নি।
ময়মনসিংহে ঢাকামুখী বাস বন্ধ, বিক্ষোভ : নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল থেকে ময়মনসিংহের মাসকান্দা ও শম্ভুগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। এর প্রতিবাদে ময়মনসিংহে ইত্তেফাকুল ওলামার উদ্যোগে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশনে যাত্রীদের দুর্ভোগ : শায়েস্তাগঞ্জে আলেম-ওলামাদের লংমার্চে বাধার আরেক কৌশল হিসেবে টিকিট কাউন্টার থেকে স্যান্ডিং টিকিট পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। এতে সাধারণ যাত্রীরা পড়েছে সীমাহীন ভোগান্তিতে। দুই দিন ধরে ঢাকাগামী যাত্রীদের এ দুর্ভোগ বেড়েছে।
নীলফামারীতে পুলিশের বাধা : পুলিশি বাধায় নীলফামারীতে হেফাজতে মিছিল পণ্ড হয়েছে। গতকাল জুমার নামাজের পর জেলা শহরের বড় মসজিদ থেকে হেফাজতে ইসলাম ও সাধারণ মুসল্লিরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে তারা বাধার মুখে পড়েন।
চৌদ্দগ্রামে গাড়িতে হামলা : গতকাল সন্ধ্যায় হরতালের সমর্থনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দত্তসার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও ৮-১০টি গাড়ি ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগকর্মীরা। এ সময় তারা দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোনাইমুড়ীতে মহাসড়ক অবরোধ : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীর চৌরাস্তায় মহাসড়ক অবরোধ করেছে হেফাজতে ইসলাম। তৌহিদি জনতার ব্যানারে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ অবরোধে অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ অবরোধ চলছে।
ফেনীতে বাধা : ফেনীতে নানা প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতার কারণে গতকাল হেফাজতে ইসলাম পথসভা ও গাড়িবহর নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে আসা দলের সঙ্গে ঢাকামুখী লংমার্চে যোগ দিতে পারেনি। একই কারণে বৃহস্পতিবার মোটর শোভাযাত্রা কর্মসূচিও তারা পালন করতে পারেননি। এ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
মিরসরাইয়ে গাড়ি অবরোধ, ভাংচুর : চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের গাড়িবহরে মিরসরাইয়ের ধূমঘাট এলাকায় অবরোধ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা গাড়িবহরের তিনটি গাড়ি ভাংচুর করে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পাবনায় পুলিশের বাধা : পাবনার বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল বসিয়ে লংমার্চে যেতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এর আগে লংমার্চের কারণে সরাসরি ঢাকায় চলাচলরত বাস বন্ধ করে দেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তারা বলছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বাস তল্লাশির মাধ্যমে যাত্রীদের হয়রানি করায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরে পরিবহন বন্ধ : গতকাল নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে হেফাজতে ইসলাম ও ধর্মপ্রাণ হাজার হাজার তৌহিদি জনতা ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছে। হেফাজত নেতারা অভিযোগ করেন, সরকার যতই বাধা ও নাশকতা চালাক না কেন, ইসলাম ও নবীপ্রেমিক তৌহিদি জনতার গমন ঠেকাতে পারবে না এবং লংমার্চ সফল হবে।
মৌলভীবাজার থেকে লংমার্চ : খেলাফতে মজলিস গতকাল সন্ধ্যায় শাহ মোস্তফা রোড থেকে মাওলানা আহমদ দুলালের নেতৃত্বে একটি দল নিয়ে ঢাকায় লংমার্চের উদ্দেশে যাত্রা করে। এদিকে দুপুরে হেফাজতে ইসলাম ঈদগাহ প্রাঙ্গণ থেকে ১২-১৪টি গাড়ি নিয়ে লংমার্চের উদ্দেশে যাত্রা করে শ্রীমঙ্গলে উপস্থিত হলে সেখানে ৬০টি গাড়ি নিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় রওনা দেয়।
বাবুগঞ্জে শোভাযাত্রা-সমাবেশ : ঢাকামুখী লংমার্চ সফল করতে বিশাল শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা হেফাজতে ইসলাম। গতকাল জুমার নামাজের পর লংমার্চের সমর্থনে উপজেলার বাবুগঞ্জ বন্দর ও আশপাশের বেশ কয়েকটি মসজিদ থেকে হাজার হাজার আলেম-ওলামা ও মুসল্লি বিশাল শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
সারাদেশে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড় : হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে অংশ নিতে ঢাকায় আসার পথে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দু’দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে সহস্রাধিক মুসল্লিকে আটক করা হয়েছে বলে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে আসা অনেক মুসল্লিকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাওয়ার পথে মুসল্লিদের পুলিশ আটক করে নিয়েছে।
এছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে লাঠিসোটা নিয়ে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়ে আটক করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ঢাকাগামী যানবাহন থেকে লোকজনকে জোর করে নামিয়ে মারধর করে স্থানীয় থানায় সোপর্দ করেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মুসল্লিদের গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে।
জানা গেছে, গাবতলী, সায়েদাবাদ, সাভার, উত্তরা, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ ঢাকার প্রবেশদ্বারে সব ধরনের যানবাহনে তল্লাশির নামে লংমার্চকারীদের আটক করছে পুলিশ। পুলিশি হয়রানিতে অনেক মুসল্লি আগে থেকেই ঘরছাড়া। যানবাহন না পেয়ে হেঁটে আসার পথেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন মুসল্লিরা। এরপরও হয়রানি থেকে তারা রক্ষা পায়নি। দাড়ি-টুপিওয়ালা লোক দেখলেই সন্দেহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। আগের ঘোষণা অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দলের লোকজনও মারমুখী অবস্থায় সারাদেশে অবস্থান নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে মুসল্লিদের। এতে নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষও।
Source: Amardesh