প্রকাশ : রোববার ৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৫

বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষত বিএনপি-জামায়াতের সবধরনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। বিরোধী দলগুলো আন্দোলন-সংগ্রাম করে হাসিনাকে পদচ্যুত করতে পারেনি। ছাত্র-জনতার মিলিত অভ্যুত্থান হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্র সংস্কারে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। গণভোট প্রশ্নে একে-অপরের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছে। দেশবাসীও চায় দলগুলো দেশের স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছাক। কিন্তু প্রধান দলগুলোর মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে একমত হওয়ার বদলে মতানৈক্য তীব্র হচ্ছে। এতে করে ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলের একগুঁয়ে আচরণে উদ্বিগ্ন।
হাসিনা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিজের সব অবৈধ কর্মকাণ্ড জায়েজ করেছেন। তার কাছে প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের কোনো মূল্য ছিল না। এ দিকে বৈধ উপায়ে তাকে ক্ষমতা থেকে হটানোর কোনো উপায় তিনি রাখেননি। সঙ্গত কারণে তার পরিণতি নির্ধারিত হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্টের একটি রেফারেন্সে গঠিত হলেও সংবিধানে এর কোনো নির্দেশনা নেই। এ অবস্থায় দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে পুরনো সংবিধানের মান্যতা নিয়ে। বাস্তবে এ সরকারের ভিত্তি রচিত হয়েছে রাজপথে জনসম্মতিতে। যেখানে এক হাজার ৪০০ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, ২০ হাজারের বেশি মানুষের অঙ্গহানি হয়েছে। যে সংবিধানের নিজের বৈধতা নিয়ে এখন নানা মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেই সংবিধানকে অপরিবর্তণীয় মনে করা হলে জুলাই বিপ্লব গুরুত্ব হারায়। এই বিষয়টি আমাদের মধ্যে অনেকে না বোঝার ভান করছেন।
অকাতরে প্রাণদানকে যদি মেন্ডেট হিসেবে নেয়া না হয়; তাহলে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের কারো বৈধতা থাকে না। অওয়ামী লীগ ও পাশের দেশ ছক কষছে কিভাবে বিপ্লবের অর্জন ভণ্ডুল করা যায়। কোনো একটি উপায়ে তারা যদি ক্ষমতা আবার করায়ত্ত করতে পারে তাহলে মুক্তিকামী জনতার জীবন আবারো বিপন্ন হবে।
বিএনপি-জামায়াতও কম বিপদগ্রস্ত হবে না। এখন বিরোধের মূল জায়গা হচ্ছে গণভোটের সময় নিয়ে। যে গণভোটের মাধ্যমে বিপুল সংস্কার ও অন্তর্বর্তী সরকার বৈধতা পাবে। এ দিকে উচ্চকক্ষের যে বিধান করা হয়েছে সেখানে পিআরের ভিত্তিতে সদস্য বাছাইয়ের নিয়ম করা হয়েছে। নিম্নকক্ষের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই তালিকা প্রকাশ করতে হবে। একই দিন গণভোট আয়োজন করা হলে চলমান সরকারে বৈধতা, উচ্চকক্ষের নির্বাচনসহ নানা জটিলতা তৈরি হবে। বিপ্লবের চেতনা রক্ষা ও আগামীর বাংলাদেশ নিরাপদ করতে হলে আগে গণভোট আয়োজনের বিকল্প নেই। সমঝোতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে জামায়াত ইতোমধ্যে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি তারা জানিয়েছে, বিএনপি যদি তাদের সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় আহ্বান জানায়; তাহলেও তারা বিএনপির আহ্বানে সাড়া দেবে।
গণতন্ত্র মঞ্চসহ ৯ দলের পক্ষ থেকেও সবাইকে নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিএনপি এখনো কারো উদ্যোগে সাড়া দেয়নি। বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, তাই দায়িত্বও বেশি। দলটির উচিত সব অংশীজনকে নিয়ে একসাথে বসে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো। তা না হলে কেউ নিরাপদ হতে পারবে না।
Source: https://dailynayadiganta.com/opinions/editorial/b05QUZ2bXoDP









