সৌদি আরব-পাকিস্তান প্রতিরক্ষাচুক্তি, পীড়িত মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ করবে

logo

প্রকাশ : শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৩৯

পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরবের সাথে প্রতিরক্ষাচুক্তি সম্পাদন করেছে। এতে একটি দেশ আক্রান্ত হলে অন্যটিও আগ্রাসনের কবলে পড়েছে ধরা হবে, তখন একে-অপরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা অঙ্গনে এ ধরনের জোট গঠন ভারসাম্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো বিপুল সম্পদের অধিকারী হলেও এতদিনেও নিজেদের নিরাপত্তা মজবুত করতে পারেনি, দুর্বলতা ছিল দৃশ্যমান। এ দিকে পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা থাকলেও অর্থনৈতিকভাবে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। সেই সাথে কূটনৈতিক সমর্থনের অভাবে কোণঠাসা হয়েছে। এ চুক্তি উভয় দেশকে কমন এনিমির বিপক্ষে একাট্টা হয়ে লড়তে সহায়তা করবে।

ইসরাইলের বেপরোয়া সামরিক আগ্রাসনে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ গভীর নিরাপত্তাসঙ্কটে পড়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর কাতারে হামলা প্রমাণ করেছে- যেকোনো দেশে হামলা চালাতে দু’বার চিন্তা করবে না ইসরাইল। এ দিকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে নিরাপত্তা দেয়ার যে আশ্বাস দেয় আমেরিকা, তার ওপরও আস্থা রাখার মতো নয়; সেটিও প্রমাণ হয়ে গেল। এ হামলার দু’দিন পর পাকিস্তানের সাথে সৌদির কৌশলগত যৌথ প্রতিরক্ষাচুক্তিটি হলো। দেশ দু’টির পক্ষ থেকে জানা যাচ্ছে, এটি কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়। বহু বছরের আলোচনার চূড়ান্ত পরিণতি। বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তান ও সৌদি আরব নিজেদের শত্রু-মিত্র নির্ধারণে দীর্ঘ আলোচনা করেছে। চুক্তিটি কতটা গুরুত্ব রাখে, উভয় দেশের অবস্থান থেকে তা পরিষ্কার।

পাকিস্তানসহ মুসলিম দেশগুলোকে ইসরাইল নিজের শত্রু হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এ দিকে ইসলাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ভারত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে। যদিও ভারত জন্মলগ্ন থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমর্থক ছিল। হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার সে নীতি থেকে বহু দূরে সরে এসেছে। সমরাস্ত্র, অর্থনীতি ও কূটনীতিতে দেশ দু’টির সম্পর্ক এখন অনেক গভীর। মোদি সরকারের পতন হলেও এ সম্পর্ক পরিবর্তন করা সহজ হবে না। এ কারণে পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষাচুক্তি শত্রুর বন্ধুর বিরুদ্ধে এক হয়ে শক্তি বৃদ্ধি বলা যেতে পারে। সৌদির তরফ থেকে জানা যাচ্ছে, এটি একটি ব্যাপক প্রতিরক্ষাচুক্তি। যেখানে সবধরনের সামরিক উপায় ব্যবহার করা হবে। মোদি ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানকে দু’বার আক্রমণ করেছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের নামে নিজ দেশে নির্বাচনী সুবিধা নিতে জিগির তোলা হয়েছে এর দ্বারা। এ দিকে মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে ভারতের বিপুল অর্থনৈতিক সুবিধা। প্রায় এক কোটি জনশক্তি ওই সব মুসলিম দেশ থেকে ভারতের জন্য বিপুল প্রবাসী আয় পাঠায়। সৌদি আরবের সাথেও দিল্লির রয়েছে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক। এ চুক্তির পর পাকিস্তানে আক্রমণ করার আগে দেশটিকে এখন শতবার ভাবতে হবে। পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কে এটি ভারসাম্য আনবে বলে সহজেই অনুমান করা যায়।

একইভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার নিচে নিরাপত্তাসুবিধা পাওয়ার পর সৌদি আরবে ইসরাইলও কোনো হামলা চালাতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে। নিঃসন্দেহে এ চুক্তি দেশ দু’টির জন্য লাভজনক হয়েছে। গত অর্ধশতক ধরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে। এ চুক্তি মুসলিম দেশগুলোর নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক কূটনীতিতে একজোট হয়ে চলার পথ দেখাবে। ধর্মীয় পরিচয়ে নির্যাতন-নিষ্পেষণ ও অধিকারহারা হওয়ার সংস্কৃতি এর মাধ্যমে বন্ধ হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি করবে বলে আমাদের আশা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here