প্রকাশ : মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ২০:৪৬

গত সোমবার মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক এক ঘটনা দেখল দেশবাসী। রাজধানী ঢাকার একটি স্কুল ভবনে অকস্মাৎ আছড়ে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেউ ক্লাস করছিল, কেউ ছুটি শেষে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাইরে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকরা। কিন্তু সোয়া ১টার সময় সব ওলট-পালট হয়ে যায়। বিমান বিধ্বস্ত হলে বিস্ফোরণ-আগুনে পুড়ে ঝরে গেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অনেকের জীবন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে বহু কচি প্রাণ। আহত সন্তান নিয়ে অভিভাবকদের গগনবিদারী আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। হাসপাতালে হাসপাতালে কান্না আর আহাজারিতে সোমবার বিকেলটা হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
দেশের ইতিহাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা এটিই প্রথম। বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো: তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩১ জন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া সবাই শিক্ষার্থী। আট হাসপাতালে আহত অন্তত ১৭১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর হতাহতদের উদ্ধারে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তাতে আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা উৎকটভাবে ধরা পড়ে। তাই এই দুর্ঘটনা থেকে আমাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের শিক্ষা নেয়া উচিত এবং বোধোদয় যেন হয়। আগামী দিনগুলোতে দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সাথে সাথে এটি খতিয়ে দেখা দরকার, কেন বারবার প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। সেই সাথে অনুসন্ধান করে প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে হবে, গত সোমবারের দুর্ঘটনা কী কারণে হয়েছে এবং এ জন্য দায়ী কে বা কারা। আমাদের এ কথাও মনে রাখতে হবে, লোকালয়ে আর যেন বিমানের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি না হয়। জনমানবহীন বিরান এলাকায় বিমান প্রশিক্ষণ নেয়ার মতো কার্যক্রম চালালে মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের আরো অনেক সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নাগরিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকে হাসপাতালে ছুটে যান।
যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে আছে, তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার যে আশ্বাস সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে- আমরা আশা করি, তা নিশ্চিত করা হবে। আহতদের চিকিৎসায় সরকারের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।
এ মর্মান্তিক ঘটনায় স্বজনহারাদের সান্ত্বনা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। তবু নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা। পরম করুণাময় আল্লাহ যেন সব নিহতের পরিবারকে এ শোক সইবার তৌফিক দান করেন। আল্লাহর কাছে তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি যেন এসব মাসুম শিশুকে মাফ করে তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করে নেন।
হৃদয়বিদারক এ ঘটনায় সারা দেশের মানুষের মতো নয়া দিগন্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরাও গভীরভাবে শোকাহত।