সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়: ষোড়শ সংশোধনী ছিল বিচারপতিদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

24 Live Newspaper

বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাই ছিল সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য—এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের ওপর সরাসরি চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছিল।

bangladesh supreme court file photoসুপ্রিম কোর্ট। ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর ঘোষিত ৫০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।
রায়ে বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনী ছিল একটি কর্তৃত্ববাদী প্রয়াস, যার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হুমকির মুখে ফেলা হয়েছিল।

আদালত সুস্পষ্ট ভাষায় জানায়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলই বিচারপতিদের অপসারণের নিরপেক্ষ ও উপযুক্ত মাধ্যম।
রায়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী বলেন, যদি কোনো বিচারক সরকারের রোষানলে পড়েন, তাহলে সংসদের সদস্যদের কলমের এক খোঁচায় তাকে অপসারণ করা যায়—এটা কি গণতন্ত্র?

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ক্ষমতা বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, বিচারকদের উচিত রাজনৈতিক বিতর্ক বা মতামত থেকে দূরে থাকা, যাতে তাদের নিরপেক্ষতা ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে।

আদালত বলেছে, বিচারপতিদের রাজনৈতিক বক্তব্য আদালতের সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই রায় বিচার বিভাগের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ক্ষমতা পুনর্বহাল হওয়ায় বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে, কারণ রিভিউ করার মতো কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ পাওয়া যায়নি।

ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। পরে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদন করলেও ২০২৪ সালের অক্টোবরে সেটি খারিজ হয়।

এই মামলায় রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

সূত্র: বাসস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here