আগামী নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়ার পথ খুলছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজা গতকাল সোমবার স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ৭ বছরের সাজা হাইকোর্টে স্থগিত হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধা থাকবে না সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। পরদিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় সাজামুক্ত হন বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে তাঁর আইনজীবীদের ভাষ্য, খালেদা জিয়া অনুকম্পা চান না। তিনি ক্ষমার আবেদন করেননি। সাজা মওকুফ হলেও আইনি লড়াইয়ে নির্দোষ প্রমাণিত হতে চান। অন্যথায় স্বীকার করে নেওয়া হবে, তিনি অপরাধ করেছিলেন।
সংবিধান অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে কারও দুই বছরের বেশি সাজা হলে, মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। এ কারণে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেও প্রার্থী হতে পারেননি। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিয়া অরফানেজের মতো জিয়া চ্যারিটেবল মামলাতেও সাজা স্থগিত হলে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতায় আর বাধা থাকবে না। তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা থাকলেও সেগুলোতে সাজা হয়নি।
গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আগামী নির্বাচন কবে– তা নিশ্চিত নয়। তবে বিএনপি নেতারা বারবারই বলছেন, নির্বাচনে থাকবেন দলীয় প্রধান। তাদের আশা, খালেদা জিয়াই হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
এতিম শিশুদের জন্য অনুদান হিসেবে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। পরে দুদকের আপিলে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ দুটি আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছিলেন খালেদা জিয়া। তা মঞ্জুর করে গতকাল আপিল বিভাগ সাজা স্থগিত করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসিফ হাসান।
জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন। এই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ তৈরি করতে বলা হয়েছে। এরপর মূল আপিল শুনানির আবেদন করা হবে।
গতকাল কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, হাইকোর্টের রায় স্থগিত হলেও বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রয়েছে। তবে এ তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি সমকালকে বলেন, আপিল বিভাগে সাজা স্থগিত করা হয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের সাজার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। গত ৩ নভেম্বর পেপারবুক তৈরির অনুমতি আবেদন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।
দুই মামলায় দণ্ডিত হলেও অসুস্থ খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের মার্চে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছিল তৎকালীন সরকার, যা ছয় মাস পরপর বাড়ানো হচ্ছিল। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া সাময়িক মুক্তি পেলেও চিকিৎসার জন্য বারবার তাঁকে যেতে হয়েছে হাসপাতালে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এই দুই মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। তিনি বিদেশে থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি। তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন তা নিশ্চিত নয়।
samakal