ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই

জন ড্যানিলোভিজ

প্রেসিডেন্ট পদে ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব বোঝার চেষ্টা করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি সত্যি। কারণ নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকে ঘিরে বিতর্ক জন্ম নেয়। ঢাকার সাবেক শাসনের সমর্থকরা আশা প্রকাশ করছেন যে, ট্রাম্পের বিজয় মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন আনবে যা তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসার পথ প্রশস্ত করবে। অন্যরা যারা অনুরূপ ফলাফলের আশঙ্কা করছেন তারা
যুক্তি দিয়েছেন যে, এটি প্রতিরোধ করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। দীর্ঘদিনের বাংলাদেশ পর্যবেক্ষক এবং মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অনুশীলনকারী হিসেবে জন ড্যানিলোভিজ জানিয়েছেন, ট্রাম্পের বিজয় অনেকের ভবিষ্যদ্বাণীর চেয়ে কম প্রভাব ফেলবে। প্রেসিডেন্ট অফিসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করে অনেক বিশ্লেষক নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট  এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন বাইডেন প্রশাসনের মূল্যবোধের এজেন্ডা পরিত্যাগ করবে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের ঘটনাবলীকে প্রভাবিত করার জন্য ভারতকে অবাধ সুযোগ করে দেবে।  আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ এই  লোকেরাই বিশ্বাস করে এসেছে যে, বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের পেছনে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য  বিদেশি শক্তির হাত ছিল। এই বিশ্লেষকদের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হয়েছে তারা শেখ হাসিনার বিদায়ের নেপথ্যে  দেশীয় কারণগুলোকে ক্রমাগত অস্বীকার করে গেছেন।

কোনো সন্দেহ নেই, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ধরন এবং উপাদান (এবং এর অনুশীলনকারীরা) পাল্টে যাবে যখন ট্রাম্প প্রশাসন জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করবে। অভিবাসন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের জন্য সমর্থন এবং বাণিজ্য নীতি  প্রেসিডেন্টের প্রচারণার সময় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ পেয়েছে। সাধারণভাবে, ট্রাম্প বৈদেশিক নীতিতে কম হস্তক্ষেপ  এবং ‘আমেরিকা প্রথম’  নীতিতে বেশি আগ্রহ দেখিয়ে এসেছে। যে কেউ এই কথা বলতে পারে যে, বাংলাদেশ ট্রাম্পের প্রচারণার জন্য অগ্রাধিকার পেয়েছে বা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা বিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কিছুটা  সময় নেয়া উচিত।

ঢাকার জন্য সুসংবাদ হলো যে, তাদের কাছে এটি করার জন্য সময় আছে, কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে এবং বাংলাদেশে প্রভাব ফেলতে পারে এমন নীতি পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন শুরু করতে সম্ভবত কয়েক মাস সময় লাগবে। এমনকি একটি রিপাবলিকান সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ পররাষ্ট্র নীতি তৈরি করতে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

অনেক চাপের ইস্যুর মাঝে বাংলাদেশ নীতি সম্ভবত ট্রাম্পের নতুন টিমের কাছে  অগ্রাধিকার নাও পেতে পারে।
মার্কিন সম্পর্ককে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিবেচনায়  ঢাকার অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকার এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ কীভাবে এগুলোকে প্রভাবিত করে তা খতিয়ে দেখা উচিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেমন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি দ্বারা পরিচালিত হবেন, তেমনি প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতিকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। হাসিনা পরবর্তী সময়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে  অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট পরিবর্তন হয়নি। নিউ ইয়র্কের মিটিংয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, তারা  এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র যে এই জোটের অংশ হতে চাইবে না তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

একই সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কেবল সরকার থেকে সরকার বা প্রধান নির্বাহী থেকে প্রধান নির্বাহীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রসারিত। কংগ্রেসের সদস্য, বেসরকারি সংস্থা, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অনেক বন্ধু রয়েছে। এগুলো সম্পর্কের স্থিতিশীলতার কারণ হিসেবে কাজ করবে। যদিও হাসিনা সরকার ভেবেছিল যে, ১৯৭১ সালের স্মৃতি উস্কে বা সাম্প্রতিক কথিত ষড়যন্ত্রের কথা বলে তারা লাভবান হবে, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ এরকম কিছু করবে এমন সম্ভাবনা খুব কম। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়  হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ওপর ক্রমবর্ধমান আস্থা। যাদের মধ্যে অনেকেই তাদের মাতৃভূমিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার অগ্রভাগে ছিলেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক টিম, ওয়াশিংটনে একজন নতুন রাষ্ট্রদূতকে নিয়োগ করার মাধ্যমে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পথ প্রশস্ত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্পকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের উষ্ণ অভিনন্দন বার্তা ছিল এর প্রথম পদক্ষেপ। ঢাকায় যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে চিন্তায় নিমজ্জিত, তাদের সকলের প্রতি আমার উপদেশ হলো ‘শান্ত থাকুন এবং যেমন চলছে চলতে দিন।’

manabzamin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here