আমরা সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু শব্দ শুনতে চাই না: জামায়াতের আমির

বগুড়ায় সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। শনিবার বিকেলে শহরের ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে
বগুড়ায় সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। শনিবার বিকেলে শহরের ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠেছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা চাই না এই জাতিকে আর কেউ বিভক্ত করুক। আমরা সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু শব্দ শুনতে চাই না। যারাই এখানে জন্ম নিয়েছে, তারা গর্বিত নাগরিক। সব ধর্মের মানুষ দলমত-নির্বিশেষে এখানে বসবাস করবে। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। যদি মসজিদে নামাজ পড়ার সময় পাহারা দিতে না হয়, তাহলে মন্দিরে উপাসনার সময়ও যেন পাহারা দেওয়ার প্রশ্ন না ওঠে।’

আজ শনিবার বিকেলে বগুড়ায় সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতের বগুড়া জেলা ও শহর শাখার উদ্যোগে শহরের ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী এমন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে, যে দেশে বিচারকের চেয়ারে বসে কোনো দুর্বৃত্ত ঘুষ খাওয়ার চিন্তা করবে না। কেউ যদি ঘুষের দিকে হাত বাড়ায়, তাঁর হাত গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। ন্যায়বিচারের জন্য মানুষের এক আদালত থেকে অন্য আদালতে ঘুরতে হবে না। জামায়াতে ইসলামী কোরআনের আলোকে একটি মানবিক বাংলাদেশ দেখতে চায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জামায়াতে ইসলামী তরুণদের প্রতি আস্থাশীল উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, ‘জামায়াত তরুণদের এমন শিক্ষা দিতে চায়, তারা আল্লাহর ভয় করবে, মানুষকে ভালোবাসতে শিখবে, দেশকে ভালোবাসতে শিখবে। সুশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত কাজ তাঁদের হাতে চলে আসবে। কোনো মামা-খালুর তদবির চলবে না। যার যার যোগ্যতায় চাকরি পাবে। জামায়াত সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। জামায়াত এমন বাংলাদেশ চায়, যেখানে হিংসা হানাহানি ও প্রতিহিংসার রাজনীতির কবর রচিত হবে। প্রতিশোধের রাজনীতি না চাইলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের খুন হত্যা, গুম এবং অর্থ চুরির বিচার হতে হবে।’

শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর সমালোচনা করে শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতন থেকে স্বৈরাচার ও তাঁদের দোসররা ছাড়া দেশের কোনো এলাকা বা ব্যক্তি বাদ যাননি। সাড়ে ১৫ বছর ধরে তারা জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। অসংখ্য মায়ের কোল খালি করেছে, অসংখ্য বোনকে বিধবা বানিয়েছে। অসংখ্য সন্তানকে এতিম বানিয়েছে। কাউকে করেছে গুম, কাউকে খুন; কাউকে পঙ্গু। জনগণ যখনই জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, তখনই জনগণের আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেছে।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের আমির বলেন, ‘ভালো মানুষ কখনো পালান না। কারণ, তাঁরা দেশকে ভালোবাসেন। আমরা তাড়া করিনি। পালালেন কেন? দেশের প্রতি যাঁদের ভালোবাসা, চোখের পানি ও কান্না মেকি, তাঁরাই দেশ থেকে পালিয়ে যান।’ বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের পালানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তিনি শুধু বিচারক নন। একজন রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত হিসেবে কাজ করেছেন। আল্লাহ তাঁকে শাস্তি দিয়েছেন। পিলখানায় ৫৭ জন সাহসী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে জুলুম শুরু হয়েছিল। ৫ আগস্ট সেই জুলুমের অবসান হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যারা হাতে অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়েছিল, তাদের কাছে ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার আর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেই। তাদের নাম আর জনগণ শুনতে চায় না। তাদের জাতি আর প্রকাশ্যে হাঁটতে দেবে না। আগে তাদের বিচার হবে। যে আদালতে জামায়াত নেতাদের অন্যায়ভাবে জুলুম বিচার করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সেই আদালতে তাদের আসতে হবে। তারা অন্যায় করেছে, জুলুম করেছে, লুটপাট করেছে, বৈষম্য করেছে। তবু আমরা বিশ্বাস করি ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে তারা যে পাওনা বুঝে পাবে, তাতে তাদের সাধ মিটে যাবে।’

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জামায়াত কোনো দখল-ভাঙচুরে জড়ায়নি দাবি করে দলটির আমির বলেন, ‘ভুলের ঊর্ধ্বে আমরা নই। কেউ যদি বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারে, তবে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইব।’ এ সময় বিগত সরকারের সময় জামায়াতের মতো আর কেউ এত নির্যাতনের শিকার হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

জামায়াতের বগুড়া শহর শাখার আমির আবিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

prothom alo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here