যৌথ বাহিনীর অভিযান : সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নজর

সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নজর

দেশব্যাপী শুরু হওয়া যৌথ অভিযানে সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিরাপত্তা জোরদার করেছে। সীমান্ত হয়ে কেউ যাতে পালাতে না পারেন, সে জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

গতকাল বুধবার বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। চিহ্নিত মাদক কারবারিদের ধরতে তাদের বেশ কিছু আস্তানায় হানা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লাইসেন্স করা অস্ত্রের একটি বড় অংশ জমা পড়েনি। যারা জমা দেননি, তাদের ধরতেও অভিযান চলছে।

মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। এতে সেনা, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা অংশ নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্রধারী গ্রেপ্তারে জোর দেওয়া হলেও চিহ্নিত কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না। স্পর্শকাতর মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রভাবশালীদের মধ্যে যারা নানামাত্রিক অপরাধে যুক্ত ছিলেন, তাদের ধরা হবে।  আরেক কর্মকর্তা জানান, কিছু এলাকায় তালিকা ধরে অভিযান চলছে। আবার অনেক জায়গায় ঘটনার ভিত্তিতে অভিযান চলছে। এ ছাড়া লাইসেন্স করা অস্ত্র যারা জমা দেননি, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, থানা ও ফাঁড়ি থেকে সব মিলিয়ে পুলিশের ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র ও ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২ রাউন্ড গুলি লুট হয়েছে। এখন পর্যন্ত পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৭৬৩টি। এখনও উদ্ধার হয়নি ২ হাজার ৬৬টি। গুলি উদ্ধার হয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮২ রাউন্ড। এখনও বেহাত আছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৬৬০ রাউন্ড গুলি।

এ ছাড়া ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক ব্যক্তিকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র-সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যারা ওই সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা দেননি অভিযানে তাদের আটক করা হবে।

রংপুরে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬০টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। এসব অস্ত্র আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে ছিল। শতাধিক অস্ত্র জমা হয়নি।

রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুরে বেসামরিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অস্ত্রের সংখ্যা ছিল ১৬৪টি। এর মধ্যে ৭৬টি অস্ত্র আওয়ামী লীগের নেতা এবং বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে ছিল। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬০টি অস্ত্র (পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্র) জমা হয়েছে। এখনও ১৬টি অস্ত্র বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এসব অস্ত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের নেতারা ব্যবহার করেছেন।

রংপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শাহনাজ বেগম জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬০টি অস্ত্র জমা হয়েছে। জমা না দেওয়া বাকি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার সকালে আড়াইহাজার পৌরসভার গাজীপুরা এলাকায় পরিত্যক্ত ইটভাটা থেকে দুটি শটগান পুলিশ উদ্ধার করে।  আড়াইহাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পর ৫ আগস্ট বিকেলে আড়াইহাজার থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়। এ সময় হামলাকারীরা থানার অস্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

নাটোরে ৯৫টি বৈধ অস্ত্রের মধ্যে ৮টি অস্ত্র জমা পড়েনি। এর মধ্যে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের ১টি পিস্তল ও ১টি রাইফেল জমা পড়েনি। এছাড়া সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের একটি পিস্তল, প্রয়াত আইনজীবী সাজেদুর রহমান খানের ছেলে শফিকুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আশফাকুল ইসলামের একটি রাইফেল জমা পড়েছে। একটি পিস্তল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে।

খুলনায় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হলেও ৩৬ ভাগ অস্ত্র এখনও জমা পড়েনি। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের আওতাধীন এলাকায় ৫৮৪টি অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭৫টি জমা পড়েছে। জমা পড়েনি ২০৯টি।

পুলিশ জানায়, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ৮টি থানায় ৪৪৫টি অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ২০৮টি অস্ত্র থানায় জমা পড়েছে। এ ছাড়া জেলার ৯টি উপজেলায় ১৬৯টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭টি অস্ত্রই থানায় জমা পড়েছে।

samakal