কী আছে ড. জাফর ইকবালের মূল লেখায়

এস এম আববাস
১৬ জুলাই ২০২৪   
Bangla Tribune

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্লোগানে ‘রাজাকার’ শব্দটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

‘সাদাসিধে-ডটকম’ নামে তার নিজের ওয়েবসাইটে কোটা নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তবে সেটি তিনি শেষ না করে অসমাপ্ত লেখাটির ওপরে একটি ছোট্ট চিরকুট যুক্ত করে দিয়েছেন। সেই চিরকুটের লেখার একাংশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তোলপাড়। এ বিষয়ে ড. জাফর ইকবালের সঙ্গে কথা হয়েছে বাংলা ট্রিবিউনের। জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার একটা ওয়েবসাইট আছে, আমি সেখানে লিখি, পত্র-পত্রিকায় লিখি না। সেখান থেকে একটি সেকশন কেটে প্রচার করা হয়েছে। আমি বুঝি না, আমি কিছু লিখলেই মাতামাতি শুরু করে।’

ওয়েবসাইটে ‘কোটা’ নামে নিজ হাতের অসমাপ্ত  লেখার শেষে তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন যে, কেন লেখাটি তিনি শেষ করেননি।

আসলে ড. জাফর ইকবালের নিজের ওয়েবসাইটে অসমাপ্ত সেই লেখায় কী ছিল এবং চিরকুটে কী লিখেছিলেন তিনি, তার অনুমতি নিয়ে পাঠকের জন্য এখানে তা তুলে ধরা হলো।

আলোচিত সেই চিরকুট

যা আছে চিরকুটে

‘আমি লেখাটি লিখতে শুরু করেছিলাম। শেষ করার আগেই জানতে পারলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রকম্পিত করেছে। এই লেখাটি শেষ করার আর কোনও প্রয়োজন নেই।’

উপসংহারে যা লিখেছেন জাফর ইকবাল

অসমাপ্ত মূল লেখাটির শেষে অধ্যাপক জাফর ড. ইকবাল লিখেছেন, ‘লেখাটি শেষ না করে নিচের অংশটুকু লিখেছি। ঘুমানোর আগে খবরটি দেখে মাথার মাঝে একটা বিস্ফোরণ হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে দাবি করেছে। খবরটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না— এটি কি সত্যিই সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রী কি সত্যিই নিজেকে রাজাকার হিসেবে দাবি করতে পারে? শুধুমাত্র একটা সরকারি চাকরির জন্য? কোন দেশের সরকার, বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান? এই ছাত্র-ছাত্রীরা কি জানে, চাকরি অনেক দূরের ব্যাপার, তাদের যে এই দেশের মাটিতে থাকার অধিকার নেই?’

অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার।’

তিনি আরও লিখেন, ‘আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন। সেই জীবনে আবার কেন নূতন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’

কী আছে অসমাপ্ত মূল লেখায় 

যে লেখাটি অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল লিখতে শুরু করেছিলেন, তার শিরোনাম ছিল ‘কোটা’। লেখার প্রথম অংশ চিরকূটে ঢেকে যাওয়ায় পুরাপুরি তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে লেখার দৃশ্যমান একটি অংশে তিনি বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু চাইবার নেই, স্বাধীন একটা দেশ চেয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলাম। দু’টোই পেয়ে গেছি। এখন যদি আরও কিছু পাই সেটা হবে বোনাস। (তবে অস্বীকার করব না বেনজীর-আবেদ আলীদের সামলে-সুমলে রাখলে একটু আনন্দ পেতাম।)’

‘আমরা সবাই জানি, একটা দেশে যদি সবাই সমান সুযোগ পায়, সুবিধা পায় আর সবার যদি সমান অধিকার থাকে, তাহলে কোটার কোনও প্রয়োজন নেই। যদি না থাকে তাহলে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোটা রাখা একটা মানবিক ব্যাপার। অবশ্য মানবিক ব্যাপার কথাটা একটু খানি বইয়ের ভাষা, সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত কয়জনের আর অন্যদের মানবিক ব্যাপার নিয়ে মাথা ব্যথা আছে?’

লেখার যে অংশ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে‘যদি কোটার ব্যাপারটা সহজভাবে লিখি তাহলে বলা যায়, দুই রকম কোটা আছে একটা ভালো, অন্যটা খারাপ। প্রথমে খারাপটার কথা বলি, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে— পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কোটা, যেটাকে পোষ্য কোটা বলে। আমি খুঁটিনাটি জানি না, সম্ভবত পোষ্য কোটা শুধু শিক্ষকদের জন্য না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্যও খোলা, কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকদের সন্তানদের ছাড়া আর কোনও সন্তান সেই সুযোগ ব্যবহার করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এই পোষ্য কোটা নিয়ে কখনও কোনও উচ্চবাচ্য হতে দেখিনি। যদিও পোষ্য কোটার ছাত্র-ছাত্রীরা পাস করার পর আবার তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক বানাবার একটি নতুন চাপ শুরু হয়,  নিজের চোখে দেখা। আর ভালো কোটার উদাহরণ হচ্ছে—

অধ্যাপক জাফর ইকবাল এ পর্যন্ত লিখে আর লেখেননি। গত ১৫ জুলাই রাতে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের স্লোগানে রাজাকার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তা অধ্যাপক জাফর ইকবাল অবগত হন। এরপর লেখাটি শেষ না করে চিরকুট সেঁটে দিয়ে অসমাপ্ত রেখে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে উপসংহার টেনেছেন।

কোটা / নিবন্ধ / By মুহম্মদ জাফর ইকবাল