সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ রাতেই ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য খাতে  ১৬ সমঝোতাবাংলাদেশ ও চীনের বেসরকারি বাণিজ্য খাতে ১৬ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেইজিংয়ে ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চীন’ সম্মেলনে এসব সমঝোতা হয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এদিকে  প্রধানমন্ত্রী সফর সংক্ষিপ্ত করে বৃহস্পতিবার সকালের পরিবর্তে আজ বুধবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে আজ সন্ধ্যার মধ্যে সব বৈঠক সম্পন্ন হচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি না থাকায় সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ রাতে বেইজিং থেকে রওনা দেবেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেইজিংয়ে সেন্ট রেজিস হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থেকে চীন সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে। গতকাল বিকেলে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনের পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিং এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে এ বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন তারা। দলীয় নেতাদের পারস্পরিক সফরের বিষয়েও ঐকমত্য হয়। ওয়াং হুনিং বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং আওয়ামী লীগ উভয়েরই লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ।
এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল সেন্ট রেজিস হোটেলে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ জানান, প্রধানমন্ত্রী এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া ঋণের সুদের হার কমাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।

এদিন দুপুরে বেইজিংয়ের সাংগ্রিলা সার্কেলে অনুষ্ঠিত ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চীন’ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদানের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও চীনের শতাধিক ব্যবসায়ী এ সম্মেলনে অংশ নেন এবং দুই দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর  হয়েছে।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও সেখানে চীন রিয়েল এস্টেট এবং হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগের কথা উল্লেখ করলে চীনারা এ বিষয়ে যথেষ্ট উৎসাহ দেখান। বাংলাদেশ দূতাবাস, বিআইডিএ, বিএসইসি ও চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং আয়োজিত এ সম্মেলনে চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চীনের কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াং টং ঝু, এইচএসবিসি চীনের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন তাদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া সম্মেলনে বক্তব্য দেন এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বিনিয়োগ বিষয়ে উপস্থাপনা দেন।

এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআনমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ও রাতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সব অনুষ্ঠান অপরিবর্তিত রয়েছে। শুধু ১১ তারিখ সকালের পরিবর্তে ১০ জুলাই রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।

চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল (প্রধানমন্ত্রী) লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রওনা দেন। চীনের স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আজ বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ও দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলসহ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এর পর ২০ থেকে ২২টির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণার কথা রয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

samakal