তারল্য সংকটের তীব্রতা বাড়বে বেসরকারি খাতে

দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি এখন প্রায় ১০ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী অর্থবছর ব্যাংকগুলোয় আমানত বাড়তে পারে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। এ আমানত থেকেই ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে সরকার। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের নতুন আমানতের ৮২ শতাংশই যাবে সরকারি খাতে। আর বেসরকারি খাতে যাবে ১৮ শতাংশেরও কম। যদিও দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান ৮৬ শতাংশ। আর সরকারি খাতের অংশ মাত্র ১৪ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা বলছেন, বেসরকারি খাত এমনিতেই এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। চাহিদা অনুযায়ী চলতি মূলধন না পেয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও। সংকুচিত হয়ে এসেছে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ। তারল্যের সংকট চলছে দেশের পুঁজিবাজারেও। এ অবস্থায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি খাত আরো বেশি নাজুক পরিস্থিতিতে পড়বে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিদেশী ঋণের সংস্থান করতে পারেনি সরকার। আবার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যও পূরণ হয়নি। এ কারণে ঘাটতি বাজেট মেটাতে সরকার আরো বেশি ব্যাংক ঋণনির্ভর হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের শেষ মাসে এসে সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্য বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশের ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৮০ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের স্থিতি ১৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ সরকার এখন ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে আমানতের প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি।

সরকার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাত কিছুই পাবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেছে। কিন্তু কীভাবে বা কোন উৎস থেকে সে বিনিয়োগ বাড়বে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমরা দেখছি, দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি বেশ শ্লথ। আগামী অর্থবছরে ব্যাংকগুলোয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার আমানত বাড়তে পারে। সেখান থেকে যদি সরকারই ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়, তাহলে আর কী বাকি থাকে? বেসরকারি খাত তারল্য সংকটে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতের আকার ৮৬ শতাংশ; বাকি ১৪ শতাংশ সরকারি। কিন্তু ঋণ গ্রহণের দিক থেকে আমরা বিপরীত পরিস্থিতি দেখছি। সরকার এখন ব্যাংক থেকে ১২ শতাংশ সুদে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিচ্ছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর কাছে এখন সরকারই সবচেয়ে বড় ভোক্তা। ব্যক্তি খাতে ঋণ দেয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তাই ব্যাংকের এখন নেই।’

বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়ার চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিস্টিকসের’ তথ্যে দেখা যায়, গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪০ শতাংশেরও বেশি। সামগ্রিকভাবে এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

দেশে কয়েক বছর ধরেই আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি। প্রত্যাশা অনুযায়ী আমানত না পাওয়ায় দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকই তারল্য সংকটে ভুগছে। প্রায় তিন বছর ধরে চলা এ সংকট এখন আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ ব্যাংক দৈনন্দিন লেনদেন মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোসহ বিভিন্ন মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়ে চলছে। সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে নেয়া সে ধারের বেশির ভাগ আবার ট্রেজারি বিল কেনার মাধ্যমে সরকারকে ঋণ দেয়ার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি কিংবা পরিশ্রম ছাড়াই ব্যাংকগুলো ৩ শতাংশ সুদ মার্জিন পাচ্ছে। এরই মধ্যে ট্রেজারি বিলের সুদহার উঠে গেছে ১২ শতাংশে। আর ট্রেজারি বন্ডের সুদহার উঠেছে প্রায় ১৩ শতাংশে। শুধু চলতি জুনেই ব্যাংক খাত থেকে ট্রেজারি বিল-বন্ডের মাধ্যমে ৬১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। যদিও এ পরিমাণ ঋণের জোগান দেয়ার সামর্থ্য ব্যাংক খাতের নেই। এ কারণে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার আরো ১-২ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের তুলনায় ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দেয়ায় আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

তবে বেসরকারি খাতে এখন ঋণের চাহিদাও কম বলে জানান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে গেছে। এ কারণে চাইলেও বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানো যাচ্ছে না। ডলার সংকট, বৈশ্বিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ খুব বেশি নেই। আবার ব্যাংকগুলোয় তারল্যের সংকটও আছে। এ কারণে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোতে সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছি। এর বড় অংশ সরকারকে ঋণ দেয়ার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। সরকার ঋণ নেয়া বাড়ালে রেপোতে ধার নেয়ার পরিমাণও বাড়বে। আর বেসরকারি খাত আরো বেশি চাপের মুখে পড়বে।’

ঘাটতি বাজেট মেটাতে সরকারের ব্যাংক খাতনির্ভরতা ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুদহারও। বছর দুই আগেও ৯১ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল আড়াই শতাংশের কম। স্বল্পমেয়াদি এ ঋণের সুদহার এখন ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মেয়াদ বেশি হলে ঋণ নিতে সরকারকে আরো বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলো এখন ব্যক্তি খাতের চেয়ে সরকারকে ঋণ দেয়াকেই বেশি লাভজনক মনে করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলতি জুনে তা ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। সে হিসেবে সবচেয়ে কম মেয়াদি এ বিলের সুদহার বেড়েছে ৩৯৩ শতাংশ বা প্রায় পাঁচ গুণ। ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার বেড়েছে ২৬০ শতাংশেরও বেশি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছয় মাস মেয়াদি এ ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। চলতি মাসে তা বেড়ে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এক বছর বা ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার বেড়েছে ২৪৯ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ মেয়াদের এ বিলের সুদহার ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ থাকলেও তা এখন ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

ইল্ড রেট বা সুদহারের পাশাপাশি ট্রেজারি বিল ব্যবহার করে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতিও তিন গুণের বেশি বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে নেয়া সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ৬২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এ ঋণের স্থিতি ১ লাখ ৩৬ হাজার ২১০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। এরপর সরকারের ঋণের পরিমাণ কত হয়েছে, সে তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রেজারি বিল-বন্ডের মাধ্যমে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে নেয়া ঋণের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। মার্চে ৩৬ হাজার ৬৩৯ কোটি ও এপ্রিলে ৩৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার। সর্বশেষে মে মাসে ট্রেজারি বিল-বন্ডের মাধ্যমে সরকার আরো ৩৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৭২০ কোটি টাকা নেয়া হয় ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে। বাকি ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা বন্ডের মাধ্যমে নেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া ঋণের একটি অংশ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার।

সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রবণতায় অর্থনীতিতে ‘ক্রাউডিং আউট’ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যাংক খাত থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে সেটি বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থের ঘাটতি তৈরি হবে। এরই মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশে উঠে গেছে। সরকার ঋণ নেয়া বাড়ালে ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বাড়বে। এতে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ প্রাপ্তির শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে গত ৮ মে ব্যাংক ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগেই চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঋণের সুদহার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ওই সময় ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নেয়া হয়। ঋণের সুদহার নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিছুটা নিয়ন্ত্রিত এ পদ্ধতি চালুর পরও মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে ঋণের সুদহার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পর অনেক ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ থেকে ১৭ শতাংশেও উন্নীত করেছে।

ঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি একই দিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একদিনের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে মার্কিন ডলারের মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয় ১১৭ টাকা। যদিও ওই দিনের শুরুতে প্রতি ডলারের বিনিময় হার সর্বোচ্চ ১১০ টাকা নির্ধারিত ছিল। সে হিসাবে একদিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের বিনিময় মূল্য ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো চাইলে এর চেয়ে বেশি কিংবা কম দামেও ডলার বেচাকেনা করতে পারবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়।

ডলারের বর্তমান ঘোষিত দর আমলে নিয়ে গত দুই বছরের ব্যবধানে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে আনুষ্ঠানিক খাতেই প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। টাকার এ রেকর্ড অবমূল্যায়নের প্রভাবে আমদানিনির্ভর প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ব্যবসার ব্যয়ও।

দেশের বড়, মাঝারি কিংবা ছোট—সব খাতের ব্যবসায়ীরই বাড়তি সুদ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বাড়ছে ব্যাংক খাতে। ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, বাড়তি সুদের চাপে অনেক ভালো গ্রাহকও ঋণের কিস্তি ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরা জানান, সুদহার বৃদ্ধির চাপ তারা আর নিতে পারছেন না। গ্যাস-বিদ্যুতের বিল দ্বিগুণ হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ পরিচালন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এ অবস্থায় ঋণের সুদহার দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খেলাপি ঋণের চাপ আরো বহু গুণ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার দুটিই ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা ছিল। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে গড় খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ। মাত্র তিন মাস পর খেলাপির এ হার ১১ দশমিক ১১ শতাংশে ঠেকেছে।

দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে বৃহত্তম জায়ান্টগুলোর একটি মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। গ্রুপটির চেয়ারম্যান ও এমডি মোস্তফা কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সুদহার বৃদ্ধি ও ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা এমনিতেই চাপে আছেন। এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর আরো বেশি বিরূপ প্রভাব পড়বে। তারল্য সংকটে পড়লে ব্যাংক সহজে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে চায় না। এতে ঋণ প্রক্রিয়ার জটিলতা বেড়ে যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগ না বাড়লে উৎপাদন বাড়বে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ কমে গেলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

Bonik Barta