যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকশিল্পের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। গত বছর এই বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছিল এক–চতুর্থাংশ। চলতি বছর রপ্তানি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গত জানুয়ারিতে এই বাজারে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৩৬ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০টি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি সবচেয়ে বেশি কমেছে।
এদিকে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) অনুরোধে বাংলাদেশ, ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানসহ পাঁচ দেশ নিয়ে তদন্ত শুরু করছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি)। কীভাবে এ দেশগুলো মার্কিন বাজারের এত বড় অংশ দখল করে রেখেছে, তা তথ্যানুসন্ধান করে দেখবে কমিশন। এই পাঁচ দেশের কেউ অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজার দখল করছে কি না, তা খুঁজে বের করাই প্রধান উদ্দেশ্য এই কমিশনের।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদায়ী বছর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে। এই আমদানি তার আগের বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ কম। তখন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৪৪ কোটি ডলার বা ২৫ শতাংশ কমেছিল। আর চীন ও ভিয়েতনামের রপ্তানি কমেছিল যথাক্রমে ২৫ ও ২২ শতাংশ।
অবশ্য চলতি বছরের শুরুতেই এই রপ্তানির চিত্রে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ৬০৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করে। এই আমদানি গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। জানুয়ারিতে চীনের রপ্তানি ২ শতাংশ ও ভিয়েতনামের রপ্তানি কমেছে পৌনে ৫ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি এক-তৃতীয়াংশ কমে যাওয়ার সঙ্গে ইউএসআইটিসি তদন্তের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তের সঙ্গে রপ্তানি কমে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এসব পোশাক রপ্তানি হয়েছে গত অক্টোবর-নভেম্বরে। তখন ক্রয়াদেশ কম ছিল। তা ছাড়া সে সময় মজুরি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলনের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। সে কারণেই রপ্তানি কমে গেছে।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে রপ্তানি ছিল ৮৬ কোটি ৬০ লাখ। সেই হিসাবে রপ্তানি কমেছে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। রপ্তানি কমলেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা ৯ দশমিক ১০ শতাংশ।
গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন ১৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশ। একই মাসে ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১২০ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চীন ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশ এই বাজারের তৃতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানিকারক ভারত গত জানুয়ারিতে ৩৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। তাদের রপ্তানি কমেছে ২৭ শতাংশ। আর ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৩৪ শতাংশ। তারা রপ্তানি করেছে ৩০ কোটি ডলারের পোশাক।
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০টি রপ্তানিকারকের তালিকার বাকি দেশগুলো হচ্ছে কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, ইতালি ও পাকিস্তান। এই পাঁচ দেশের মধ্যে গত জানুয়ারিতে শুধু হন্ডুরাসের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ। তাদের রপ্তানির পরিমাণ ১৫ কোটি ডলার। বাকি চার দেশের রপ্তানি কমেছে সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ পর্যন্ত।
অবশ্য রপ্তানি কমে যাওয়ার সঙ্গে তদন্তের সম্পর্ক না থাকলেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, শ্রম ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বাজার সক্ষমতার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে। সরকার ও বাণিজ্য সংগঠন বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। বাংলাদেশ প্রায়ই শ্রম অধিকার নিশ্চিতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক সময় সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে ঢিলেমি ভাব দেখা যায়।
Prothom alo