দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন চিনি কারখানা ‘এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজে’ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক এলাকায় ওই চিনি কারখানার একটি গোডাউনে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৩টি ইউনিট কাজ করলেও ৫ ঘণ্টায়ও তা নেভানো সম্ভব হয়নি।
এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণের সময় মো. আলম (৩৭) নামের এক কারখানাশ্রমিক আহত হয়েছেন। তাকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান কারখানাটির শ্রমিকরা। তবে শ্রমিক আহতের বিষয়টি অস্বীকার করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগুন লাগার সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি টিম টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কর্ণফুলী স্টেশন থেকে একটি এবং চন্দনপুরা ও আগ্রাবাদ থেকে আরও আটটিসহ মোট ১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
অগ্নিকাণ্ডে চিনি তৈরির কাচামাল পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন জ্বলছিল। এ সময় পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
গোডাউনের পাশেই রয়েছে চিনি তৈরির মূল কারখানা। আগুন যাতে সেখান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য চেষ্টা চালাচ্ছ ফায়ার সার্ভিস। নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জহরুল হক ঘাঁটির একটি টিম।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জহরুল হক ঘাঁটির ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হাবীবের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বিমান বাহিনীর একটি দল আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। এছাড়া র্যাব-০৭, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, সিএমপি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করছে।
কারখানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রমজানে বাজারে সরবরাহ করতে পরিশোধনের জন্য কমবেশি এক লাখ মেট্রিক টন কাচামাল গুদামটিতে মজুদ করা ছিল। আগুনে প্রায় সব চিনি পুড়ে গেছে। কী কারণে অগ্নিকাণ্ডর সূত্রপাত, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন কারখানার কর্মকর্তারা।
গত দুইদিন আগে নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন একটি কোল্ড স্টোরেজে আগুন লেগেছিল। ওই অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন জানিয়েছেন, সুগার মিলে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও র্যাবের একটি টিমও রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, অগ্নিকাণ্ডের পরপরই প্রথমে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চিনি কারখানার গোডাউন। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ চেষ্টা চালান। আগুনের লেলিহান শিখায় আশেপাশে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যান। বিশেষ করে আগুন যাতে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য চেষ্টা চালায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন যাতে মূল কারখানা এবং ফিনিশড সুগার যেখানে রাখা হয়েছে, সেখান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এরমধ্যে ছিলেন গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়সালও। তিনি বলেন, ‘এস আলম সুগার মিলে আমদানি করা কাঁচামাল পরিশোধনের মাধ্যমে চিনি তৈরি করা হয়। মিলটিতে চার লাখ মেট্রিক টন ক্যাপাসিটি আছে। কারখানার ইউনিট-ওয়ানের গুদামে আগুন লেগেছে। সেখানে এক লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি ছিল। সেগুলো সব পুড়ে গেছে। রমজানের জন্য চিনিগুলো আমদানি করা হয়েছিল। গোডাউন সংলগ্ন মুল কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে রমজানে আমাদের পক্ষে বাজারে চিনি সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হবে না।’
এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক জানিয়েছেন, এস আলম সুগার মিলের গোডাউনে আগুন লাগে। সেখানে বিপুল পরিমাণ চিনি তৈরির কাঁচামাল মজুদ ছিল। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে, তা জানা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর কীভাবে আগুন লাগলো তা জানা যাবে।
এস আলম লিমিটেড চট্টগ্রাম মূল কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) হোসাইন রানা সমকালকে বলেন, গোডাউনে থাকা চিনির কাচামালের পরিমাণ এক লাখ মেট্রিক টন।
তবে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, গোডাউনে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন চিনির কাঁচামাল ছিল। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ করে টিনশেডের এই গোডাউনে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কর্ণফুলী ফায়ার স্টেশনকে জানানো হয়। তারা ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ, চন্দনপুরা, লাহাবাজারসহ একাধিক স্টেশনের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে লেগে পড়ে।
সমকাল