স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর নৌকার নেতাকর্মীর হামলা

স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর নৌকার নেতাকর্মীর হামলা.

 

ফরিদপুর, পাবনার সাঁথিয়া ও নোয়াখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। সাঁথিয়ায় পরে সংঘর্ষে জড়ায় দু’পক্ষের সমর্থকরা। গতকাল শুক্রবার এসব ঘটনায় সাংবাদিকসহ ৪৩ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, বাঘায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে বাধা ও লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে নৌকা প্রার্থীর প্রচার মিছিলে হামলার ঘটনায় দু’জন আহত হয়েছেন।

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদের দুই সমর্থকের ওপর গতকাল সকালে সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নে হামলা হয়েছে। আহতরা হলেন– সাহেব আলী সেখের ছেলে আব্দুল আজিজ সেখ ও রহমান সেখের ছেলে সিদ্দিক সেখ। তারা ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আহত সিদ্দিক সেখ বলেন, ‘সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঈগল প্রতীকের অফিসে যাচ্ছিলাম। আক্কাস আলী বাজারে পৌঁছালে নৌকার কর্মী হালিম শেখ আমাকে গালমন্দ করে বলে, তুই এ. কে. আজাদের নির্বাচন করিস কেন। তখন আমি বলি, এ. কে. আজাদ ভালো লোক, তাই তাঁর নির্বাচন করি। তখন সে আমারে বলে, তুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগলের নির্বাচন করতে পারবি না। এই বলে বাজারের ভেতরে আমাকে ধইরা মার শুরু করে। কিল, ঘুসি এবং মাটিতে ফেলে লাথি দেয়। কাকা আব্দুল আজিজ আমাকে রক্ষা করতে এলে, তারা তাঁকেও মারধর করে।’

আহত আব্দুল আজিজ শেখ বলেন, ‘নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল ও পান্নু সেখের হুকুমে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। হামলায় আবুল সেখ, রহিম সেখ, নাজমুল সেখ, ফজল সেখ ও বাদশা মোল্লা অংশ নেয়। তারা প্রতিদিনই আমাদের হুমকি-ধমকি দেয়।’

পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া আংশিক) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রচার মিছিলে নৌকা প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সমর্থকদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। পরে উভয়পক্ষই সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দু’পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যার এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে সাঁথিয়ার বোয়াইলমারী বাজারে আবু সাইয়িদের নির্বাচনী সভা হয়। সভা শেষে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি থানার সামনে পৌঁছালে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা ইট নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ও সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক। তবে সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু জানান, বোয়াইলমারী বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকা সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করলে নৌকা সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এদিকে নোয়াখালীতে এটিএন বাংলা টেলিভিশনের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা গাড়িটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় তাদের লাঠির আঘাতে এটিএন বাংলার রিপোর্টার নাজিবুর রহমান আহত হন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের একলাশপুর ইউনিয়নের গাবুয়া নামক স্থানে এ হামলা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ওই আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরনের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ আহম্মেদ জাবেদের সমর্থকদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়। বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক এবিএম জাফর উল্লাহ বলেন, নৌকার প্রার্থীর অনুসারীরা এ হামলা চালায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরন বলেন, আমি ১০ বছর ধরে এ আসনের সংসদ সদস্য। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণার সময় ছুরিকাঘাতে দুই যুবক আহত হয়েছেন। তারা হলেন- মো. তানভীর ও শিবা। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনার পর তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের বন্ধু শাহাদত হোসেন জানান, ঢাকা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সমর্থনে বের করা মিছিলে ছিলেন আহত দু’জন। মিছিলটি ঝাউচর কাঁচাবাজার এলাকায় পৌঁছালে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রাহেনুল হকের ভোটের প্রচারে আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ ও রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বাঘা উপজেলার বঙ্গবন্ধু চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। সাইদুর রহমান জানান, ভোটের প্রচারে কয়েকজন যুবক বাধা দিয়ে বলতে থাকে, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের ছাড়া কারও পক্ষে প্রচারণা চালানো যাবে না। এই বলে তারা প্রচার গাড়িতে হামলা চালায় এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় তাকেও শারীরিকভাবে আঘাত করে লাঞ্ছিত করা হয়।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। পুলিশের করা এ মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সন্দ্বীপ থানার এসআই মো. জয়নুল বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে ১৭ জন নৌকার কর্মী এবং দু’জন ঈগল প্রতীক প্রার্থীর কর্মী। তারা সবাই আওয়ামী লীগের কর্মীসমর্থক। এর আগে গত রোববার রাতে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

সমকাল