শেষ সময়ে এসে শরিকদের চরমভাবে হতাশ করেছে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘদিনের মিত্রদের ৬টি আসনে ছাড় দেয় ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শরিক দলের নেতারা। তারা বলছেন, এটা অপ্রত্যাশিত, দুঃখজনক। শরিকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। কেউ বলছেন, অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে তাদের সঙ্গে। তবে জোটের স্বার্থে ও রাজনৈতিক কারণে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। জোট নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ অন্যদের দিতে গিয়ে ১৪ দলের শরিকদের আসন কমিয়ে দেয়। যেটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। কারণ ১৪ দল আদর্শিক জোট।
এ জোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জোটকে পার্শ্বচরিত্র বানিয়ে অন্যদের খুশি করতে যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আওয়ামী লীগের জন্যই ১৪ দলকে দরকার। কারণ নির্বাচনে পার পেলেও নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৪ দলের শরিকদের বিকল্প নেই। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩০০টি সংসদীয় আসনের ৩২টি থেকে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে ১৪ দলকে দেয়া হয়েছে ৬টি। যদিও ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ১১টি আসনে ছাড় দেয়া হয়েছিল। এবার শুরু থেকেই আসন সমঝোতা নিয়ে দূরত্ব তৈরি হয় ১৪ দলে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন শরিক নেতারা। এরপরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারছিল না ১৪ দল।
সবশেষ গত ১৪ই ডিসেম্বর জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু গণমাধ্যমকে জানান, জোটকে ৭টি আসনে ছাড় দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন এসে জোটের বরাদ্দ কমেছে আরও ১টি। ৬টি আসনের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ২টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৩টি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি করে আসন পেয়েছে। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-২, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহী-২, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়া-২, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে বগুড়া-৪, মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন এবং জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২ আসনে ছাড় দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মানবজমিনকে বলেন, আমরা সন্তুষ্ট নই। এটা অপ্রত্যাশিত। শেষ সময়ে এসে একজনকে বাদ দেয়া খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এটা রাজনীতির নীতিবহির্ভূত কাজ। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন করবো। করার জন্যই এসেছি। দুটিতে নৌকা নিয়ে করবো। বাকিগুলোতে আমাদের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী তার ওপর অবিচার ও অন্যায় হয়েছে বলে দাবি করেন।
মানবজমিনকে তিনি বলেন, আমার প্রতি অন্যায়, অবিচার করা হয়েছে। নৌকা দিলে দেবে, না দিলে নাই। আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। এত বছর ধরে এক সঙ্গে ছিলাম। নৌকার পক্ষে ছিলাম। এখন তারা যদি আমার আত্মীয়কে (সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ) পছন্দ করে করুক। এসব নিয়ে কথা না বলাই ভালো। আমার প্রতি অবিচার করুক আর যাই করুক আমি না থাকলে কিন্তু জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার হতো না। কেন আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ভালো জানেন। আমি বিচারের ভার জনগণ ও দেশের আলেম-ওলামার কাছে ছেড়ে দিলাম। আমি বেজার হইনি। তবে আগামী দিনে এটা প্রমাণ হবে যে, আজকের দিনটিই শেষ দিন না। নির্বাচন পরবর্তী যে যুদ্ধ সে যুদ্ধে প্রমাণ হবে কাদের দরকার ছিল আর কাদের নয়। কাজ ফুরিয়ে গেলে ছেড়ে দেয়া ঠিক না।
নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বলেন, জোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুরোধ করেছেন যে, সংবিধান রক্ষা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমি যেন নির্বাচনে থাকি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, নির্বাচনে থাকার। ৪২টি আসনে আমাদের প্রার্থীরা ফুলের মালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখান থেকে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করবেন সেই সিলেট শাহজালালের মাজারেও সবাই আমার তরীকত ফেডারেশনের লোক। তারা আমাকে বলেছেন আমি যেন প্রত্যাহার করে নিই। কিন্তু দেশ রক্ষা, সংবিধান রক্ষা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা নির্বাচনে থাকছি।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু মানবজমিনকে বলেন, ১৪ দলের রাজনৈতিক ঐক্য অনেক বলিষ্ঠ ও দৃঢ়। যে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা বিরোধীদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে লড়াই করছি। সে হিসেবে আমাদের ভোট করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। তবে আসন সংখ্যা আশানুরূপ না হলেও রাজনৈতিক কারণে আমরা ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল। অন্যদের দিতে গিয়ে জোটকে কম দেয়া হয়েছে। আমরা তো দরকষাকষি করি না। আমরা মনে করি রাজনীতিতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দরকার। তবে জোটের আসন ১১ থেকে ৬-এ নেমে আসা বৈষম্যমূলক আচরণ হয়েছে।