সারাদেশে আটক, গ্রেপ্তার তল্লাশি চলছেই

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল বুধবার পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি রাজধানীতে সতর্ক পাহারায় ছিল। আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশন ভবনের আশপাশের সড়কে বসানো হয় ব্যারিকেড। সন্দেহভাজনদের করা হয় তল্লাশি। পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা ছিলেন ইসি ভবনের ভেতরে। এদিকে সারাদেশে আটক-গ্রেপ্তার চলছেই।

গতকাল সকাল থেকেই নির্বাচন ভবন এলাকায় র‍্যাবের গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। প্রবেশপথে দেখা গেছে পুলিশের এপিসি ও জলকামানের গাড়ি। এ ছাড়া সরকারের প্রধান প্রশাসনিক দপ্তর সচিবালয়ের নিরাপত্তা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। নৈরাজ্য ঠেকাতে তপশিল-পরবর্তী সময়ের জন্য নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনা ঘটে। এর পরদিন হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। পরে অবরোধ কর্মসূচি দেয় দলটি। পঞ্চম দফার অবরোধ চলছে। অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার ঘটনা ঘটছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে, ২৮ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১৫৩টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৯৬৫ নেতাকর্মীকে।

নির্বাচনের তপশিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজ নিতে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবন পরিদর্শন করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। এর আগে তিনি সচিবালয়ের আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ঘুরে দেখে গেছেন বলে জানা গেছে।  বুধবার দুপুরে নির্বাচন ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তপশিলকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন ও নগরবাসীর নিরাপত্তা বিধানের জন্য যেসব কাজ পুলিশের করা দরকার, বিশেষ সিকিউরিটি চেকআপ, নিরাপত্তা তল্লাশি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার জন্য এসেছি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে যা যা করা দরকার, সব করবে পুলিশ।’

আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য করলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আন্দোলন যদি নিয়মতান্ত্রিক হয়, তাহলে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। নৈরাজ্য হলে বা শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তপশিল ঘোষণার পর রাজধানীবাসীর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখতে যত ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, ডিএমপি সব ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কেউ যদি বাস পোড়ানো, গাড়ি ভাঙচুর করার  চেষ্টা করে এবং কেউ যদি অরাজকতা করার চেষ্টা করে, নগরবাসীর জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করে আতঙ্ক ছড়ায়– তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপি জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে।

সন্ধ্যা হলেই বাসে আগুন দেওয়ার বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে অবরোধের আগেই। বাসে আগুন দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। তাদের উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। বাস পোড়ানো কোনো রাজনীতির অংশ হতে পারে না। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাশকতায় যুক্ত ১৪ জনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। নাশকতাকারী উচ্চ পর্যায়ের হোক অথবা নিম্ন পর্যায়ের– কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে সমকালের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য বলছে, আগের দিন রাত থেকে গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের আরও ২০ জনকে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১২, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ৩, পাবনার ঈশ্বরদীতে ২, বরিশালে ১, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ১, নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মঈনুল হাসান সাদিককে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকা থেকে। এদিকে চট্টগ্রাম বিএনপির দাবি, গতকাল জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আরও ৩০ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

সমকাল