সরকার পতনে ডাকা তৃতীয় দফা সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের প্রথম দিন চট্টগ্রামে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। আগের দু’দফা হরতাল ও অবরোধের প্রতিটি দিনই কয়েকটা গাড়ি পোড়ানো হলেও সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে একটি গাড়ি ভাঙচুর ছাড়া কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যদিও এই একদিনে চট্টগ্রাম নগরীতেই বিএনপি’র ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে বিএনপি-জামায়াত ছাড়া অবরোধ আহ্বান করা এলডিপিসহ অন্য কোনো দলকেই মাঠে দেখা যায়নি।
তৃতীয় দফা অবরোধের ১ম দিন চট্টগ্রাম নগর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। শহরে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল অনেক কম। তবে রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, টেম্পো ও মোটরসাইকেলের আধিক্য ছিল শহর জুড়ে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সবক’টি ট্রেন ছেড়ে গেছে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়া। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। এদিকে অবরোধের সমর্থনে বুধবার সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকালে খুলশী এলাকায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে খোদা তোতনের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়।
আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকায় মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিমুর রহমানের নেতৃত্বে মিছিল ও পিকেটিং করা হয়। জিইসি মোড়ে মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুর রহমান স্বপন ও মো. শাহ আলমের নেতৃত্বে মিছিল হয়। দুপুরে বদ্দারহাট আরাকান সড়কের সিএন্ডবি এলাকায় নগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব আলম, চান্দগাঁও থানা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া ও নকিব উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে মিছিল হয়। এ ছাড়া নগরীর আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, তুলাতলী বিশ্বরোড, চান্দগাঁও বাহির সিগন্যাল, পাহাড়তলী পুলিশ বিট রেলগেইট, সিনেমা প্যালেস মোড়, খুলশী আমবাগান সড়ক, হালিশহর সড়ক, সিটি গেইট, বায়েজিদ ২ নং জালালাবাদ সড়ক, বাকলিয়া রাহাত্তার পুল, আকবর শাহ চক্ষু হাসপাতাল এবং চান্দগাঁও আরাকান সড়কে অবরোধের সমর্থনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল করেছে।
বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগরের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী মানবজমিনকে বলেন, অবরোধ চলাকালে গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশ মহানগর এলাকা থেকে আমাদের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ এরমধ্যে দুপুরে চকবাজারস্থ কাঁচাবাজার এলাকা থেকে চকবাজার থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুজ্জামান জুনুকে গ্রেপ্তার করে চকবাজার থানা পুলিশ। তাছাড়া পতেঙ্গা থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলার ছোট ভাই মোহাম্মদ শফিউল আলমকে বাসা থেকে এবং পতেঙ্গা থানা যুবদল নেতা শাহিনকে না পেয়ে তার ভাই আলী নুরকে গ্রেপ্তার করেছে। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতে বালুছড়া থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা সাকিব ফয়সাল মীমকে বায়েজিদ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে বিএনপি’র পাশাপাশি জামায়াত, এলডিপিসহ সমমনা আরও বেশ কয়েকটি দল এই দুই দিনের অবরোধ ডাকলেও প্রথম দিন জামায়াত ছাড়া আর কোনো দলের তৎপরতা দেখা যায়নি। এরমধ্যে আগের দুই দফা অবরোধ- হরতালে জামায়াত নগরীতে ৭-৮টি করে ঝটিকা মিছিল করলেও বুধবার শুধুমাত্র দুইটি মিছিল করেছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া বুধবার দলটির কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে নগরীতে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া লাঠিসোটা নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থায় ছিল যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে বন্ধুর সঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজ ঘুরতে আসা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে আটক করে বেধড়ক মারধর করেছে ছাত্রলীগের একদল কর্মী। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি সুভাষ মল্লিক সবুজ এই মারধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানা যায়। আহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ এখন একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।