রিজার্ভের পতন। গত দুই বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে গত অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কম। সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে জোগান দিতে হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সর্পিল এ অর্থনৈতিক সংকটে (স্পাইরাল ইকোনমিক ক্রাইসিস) সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস। বাজারের অব্যবস্থাপনা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দুর্বৃত্তায়নে চাল, ডিম, আলুসহ সবকিছুই শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতার ওপরে বিপুল চাপ তৈরি করেছে। ক্রমেই বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে পড়েছে শ্রম অসন্তোষ।
খাতটির উদ্যোক্তারা বলছেন, ডলারের বিনিময় হারের সঙ্গে সংগতি রেখে মজুরি কাঠামোর ন্যায্যতা নিশ্চিত করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। টাকার অবমূল্যায়নে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় (গতকালের বিনিময় হার অনুযায়ী)।
মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাবের মাঝামাঝি পর্যায়ে এনে সমন্বয় করতে হলেও মজুরি নির্ধারণ করতে হয় অন্তত ১৫০ ডলারের কাছাকাছিতে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় হয় ১৬ হাজার ৫৭৫ টাকা।
ন্যূনতম হিসেবে এ মজুরিও বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে দাবি করছে মালিক পক্ষ।
পরিস্থিতি পর্যালোচনায় খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে মজুরি কাঠামো, যা অস্থিরতাকে উসকে দিচ্ছে। একদিকে শ্রমিকের শোভন জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে মালিকরাও বিনিময় হারকে সমন্বয় করে গ্রহণযোগ্য মজুরি কাঠামো প্রস্তাবের বাস্তবতা খুঁজে পাচ্ছেন না। যদিও তারা ঘোষণা দিয়েছেন সরকারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী একটি মজুরি কাঠামো দাঁড় করানো হলে সেটিকে মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন তারা।
দেশের বাজারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও শ্রমিকের আর্থিক নিরাপত্তা বিবেচনায় গত ৮ অক্টোবর পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা করার সুপারিশ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সিপিডির প্রস্তাবের সপক্ষে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে সামনে রেখে একটি পরিবারের ন্যূনতম খরচ হিসাব করে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একজন পোশাক শ্রমিকের পরিবারের খাওয়া খরচ ১৬ হাজার ৫২৯ টাকা। অন্যান্য খরচ ১২ হাজার ৮৮১ টাকা। মোট মাসিক খরচ দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৪১০ টাকা। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যোগ করলে দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৯৪২ টাকা।’
চলতি বছরই পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনায় বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ২২ অক্টোবর। সভায় মালিক পক্ষ সর্বনিম্ন মজুরি প্রস্তাব করেছে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে শ্রমিক পক্ষের দাবি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা। সে হিসাবে এক পক্ষের মজুরির প্রস্তাব অন্য পক্ষের প্রায় দ্বিগুণ। আজই বোর্ডের পঞ্চম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে চতুর্থ সভার প্রস্তাব নিয়ে দরকষাকষি হবে।
চতুর্থ সভা শেষে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেছিলেন, ‘একজনের পরিবারের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যেটা প্রয়োজন, সে বিষয়টাকে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। বাস্তবতার নিরিখে এবং সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বাস্তবধর্মী একটা প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের চাওয়ার আরো অনেক কিছু ছিল। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও বিবেচনা করে সর্বনিম্ন ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা প্রস্তাব করেছি। শিল্পের সক্ষমতা ও শ্রমিকদের চাওয়া-পাওয়াকে আমরা সমন্বয় করেছি।’
একটি পরিবারের দেড়জন হিসাব করে সর্বনিম্ন মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে এ শ্রমিক নেতা বলেন, ‘একটি পরিবারে দুজনের উপার্জন সক্ষমতা থাকতেই পারে। সে নিরিখে একটি পরিবারের দেড়জনের জন্য হিসাব করে এ প্রস্তাব করা হয়েছে, দুজনের জন্যও না।’
সভা শেষে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষ উভয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছি তার মধ্যে একটা ব্যবধান রয়েছে। এটা সবসময়ই থাকে। শ্রমিক পক্ষ চাইবে, মালিক পক্ষ দেয়ার চেষ্টা করবে। শ্রমিক ভালো থাকলে মালিকের উৎপাদন ভালো হয়। এসব বিবেচনা করেই আমরা প্রস্তাব দিয়েছি।’
মালিক পক্ষের প্রস্তাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কভিডকালে সবাই আমরা আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম এবং দেশ-বিদেশের বাজারে লোকসান দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সবকিছুরই খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় আমাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ও সুদহার বৃদ্ধির কারণে উন্নত দেশগুলোয় পোশাকের চাহিদা ও বিক্রি কমেছে। এখন আবার হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমরা জানি না এটা কোথায় যাবে। এসব কারণে নিকট ভবিষ্যতে পণ্যের মূল্যভিত্তিক প্রতিযোগিতায় আমাদের বাড়তি চাপে থাকতে হবে।’
বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের কম মজুরির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের খুব বেশি বাড়ানোর সুযোগ নেই। ডলারের রেট যতই বাড়ুক, ক্রেতারা তো আমাদের মূল্য বাড়াচ্ছে না। তাছাড়া মালিকদের দেয়ার সক্ষমতাও তো থাকতে হবে।’
কিসের ভিত্তিতে সর্বনিম্ন মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘মালিকদের সক্ষমতা, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য, বিক্রি, আমাদের দেশের মূল্যস্ফীতি—এসব বিবেচনায় নিয়েই আমরা মজুরি নির্ধারণ করেছি।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান লাইফলাইন। মালিক পক্ষ এরই মধ্যে চাপে রয়েছে নানাভাবে। মুনাফা সক্ষমতা কমে গেছে। ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া গ্যাসের সমস্যা, ক্রয়াদেশ কমে যাওয়াসহ নানা সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আবার মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় শ্রমিকের জন্যও জীবনযাপন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের বিনিময় হারে অব্যবস্থাপনার কারণে ভারসাম্যপূর্ণ মজুরি কাঠামো নির্ধারণ মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে এখন উভয় পক্ষের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানোর জায়গাটি কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত নয়দিনে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বৃহৎ রূপ নিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। মিরপুরে গতকাল সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে অবরোধবিরোধী কর্মসূচি পালনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিরপুর-১১ এলাকায় পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন বণিক বার্তা বলেন, ‘স্থানীয় দুর্বৃত্তরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় বেশ কয়েকজন পোশাক কর্মী আহত হন। এরপর শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিলে আশপাশের পোশাক কারখানার কর্মীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।’
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বকেয়া বেতন ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ২২ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার ৬৯টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। এ আন্দোলন তীব্রতা পায় গত সোমবার। এদিন টঙ্গী ও গাজীপুর কোনাবাড়িতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গতকালও বড় কারখানাগুলোয় বিক্ষোভ দেখা গেছে।
আশুলিয়া এলাকায় গতকাল এনভয়, পাইওনিয়ার, ফ্যাশন ফোরাম, পলমল, নাসা, ফেব্রিলাইফ, শাহারিয়া, স্কাইলাইন, উইলিয়াম ইত্যাদি কারখানায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া গাজীপুরে পূর্বাণী ও ফোর্টিজসহ বেশ কয়েকটি কারখানা অসন্তোষের কবলে পড়ে।
বণিক বার্তার সাভার প্রতিনিধির তথ্য অনুযায়ী, সাভারের আশুলিয়ায় গতকাল সড়কে নেমে আসে বেশ কয়েকটি কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। সকাল থেকেই টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জামগড়া থেকে ছয়তলা এলাকা পর্যন্ত থেমে থেমে অবরোধ চলছে। উত্তেজনার এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সরিয়ে নিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। পাল্টা জবাবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবি, জেলা পুলিশ, ডিবি, শিল্প পুলিশ ও আর্মড ব্যাটালিয়ন সেখানে অবস্থান নিয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ‘কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ করছেন, ভাংচুর করছেন। এটি কাম্য নয়। তাদের দাবির বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা আলাপ-আলোচনা করতে পারতেন। কিন্তু সড়কে নেমে আগুন জ্বালিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছেন। একটি মহলের ইন্ধনে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা কাজ করছি।’
গাজীপুরে সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাজার এলাকার পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা ফাঁড়ির ফটক, কার্যালয়ের কাচ ও সাইনবোর্ড ভাংচুর ও বিক্ষোভ করে। গাজীপুর জেলা পুলিশের সফিপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা করেন তারা। গাজীপুর মহানগরের ছয়দানা, মালেকের বাড়ি, তেলিপাড়া, বোর্ডবাজার ভোগড়া এলাকায়ও বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, সকাল থেকেই কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাজার এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১০-১২টি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। শিল্প ও থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থান নিলে সেখানে উত্তেজিত শ্রমিকরা হামলা চালায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী বলেন, কয়েকশ শ্রমিক দল বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ফাঁড়ির গ্লাস ও ফটক ভাংচুর করা হয়। পাশাপাশি সফিপুর পুলিশ বক্সেও হামলা হয়। ওয়ালটন প্লাজায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় শ্রমিকরা। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও মালামাল পুড়ে যায়।
এদিকে গতকাল সকাল ৯টার দিকে কয়েকশ কারখানা শ্রমিক ভোগড়া এলাকার সাংওয়াং নামের একটি কারখানার ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এ সময় পাশের আলেমা ও মিম ডিজাইন নামের কারখানায় হামলা চালাতে গেলে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। বাসন এলাকার নিডলড্রপ পোশাক কারখানায় ভাংচুর করে শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকরা বোর্ডবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় বিজিবি গিয়ে সড়কের প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেয়। উত্তেজিত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে গতকাল থেকে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধ থাকলেও সকাল থেকেই শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, শ্রমিক বিক্ষোভের কথা বিবেচনা করে সাময়িক সময়ের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিস দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারখানা খুলে দেয়া হবে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ড কাজ করছে, এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। যখন ঘোষণা দেয়া হবে তখন সিদ্ধান্ত নেব এটি মানব কি মানব না। আমাদের ধারণা কিছু লোক শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে।’
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এএসপি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকেই শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে, পুলিশ বিশৃঙ্খলা রোধে কাজ করছে। গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প-কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ভাংচুর না করে শান্ত থাকার জন্য বলা হচ্ছে।’
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘পোশাক শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব শ্রমিককে কেউ কোনো উসকানি দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছে কিনা, তাও খোঁজ করা হচ্ছে।’