- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:০৬
মোহালির পিচে ২৭৭ রান তোলাই যায়। তবে সেটা করতে হলে দাপটের সাথে ব্যাট করা দরকার। প্রশ্ন ছিল বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা বিশ্রামে রয়েছেন। বাকিরা কি পারবেন? সেই ধারণা শুরু থেকেই বদলে দেন শুভমান গিল ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। দুই ওপেনার মারমুখী মেজাজে ১৪২ রান তুলে দেন। এরপর দ্রুত ৪ উইকেট চলে গেলেও, পাল্টা লড়াই করলেন লোকেশ রাহুল ও সূর্য কুমার যাদব। ফলে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটে জয় পেল ভারত।
শুক্রবার রান তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই মারমুখী মেজাজে খেলতে থাকেন শুভমান ও রুতুরাজ। শুভমান এমনিতেই চলতি বছর দারুণ ফর্মে আছেন। অন্যদিকে রুতুরাজের এটি ছিল ক্যারিয়ারের তৃতীয় একদিনের ম্যাচ। আর অজিদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ। তবে তার মধ্যে কোনো জড়তা দেখা যায়নি। আর তাই প্রথম উইকেটে দুই তরুণ তুলে দিলেন ১৪২ রান। দল যখন খুব ভালো জায়গায়, ঠিক সেই সময় অজিদের প্রথম সাফল্য এনে দিলেন অ্যাডাম জাম্পা। রুতুরাজ ৭৭ বলে ৭১ রানে ফিরে যান। মারেন ১০টি চার।
শুভমানের সাথে ভুল বোঝাবুঝির খেসারত দেন শ্রেয়াস আইয়ার। তিনি অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে রান আউট হন। দল পড়ে বিপদে। এর কিছুক্ষণ পর ফের ধাক্কা খায় ভারত। এবার ভারতকে ধাক্কা দিলেন লেগ স্পিনার জাম্পা। তাকে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন শুভমান। ৬৩ বলে ৭৪ রানে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে তার এই ইনিংস ৬টি চার ও ২টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। ১৫১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন বেশ চাপে। এরপর উইকেট ছুড়ে দিয়ে দলের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেন ঈশান কিষান।
যেমনটা ভাবা গিয়েছিল, তেমন দুরন্ত স্পিন বোলিং কিন্তু দেখা যায়নি এদিন। এক বছর আট মাস পর ৫০ ওভারের ফরম্যাটে কামব্যাক করেছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তবে তেমন প্রভাব ফেলতে পারলেন না অভিজ্ঞ অফ স্পিনার। ১০ ওভারে মাত্র ৪৭ রান দিলেও, ঝুলিতে এসেছে মাত্র ১টি উইকেট। নিয়েছেন মার্নাস লাবুশানের উইকেট। মোহম্মদ শামি ছাড়া বাকি কেউ আর তেমন নজর কাড়তে পারেননি। তিনি নিয়েছেন ৫১ রানে ৫ উইকেট। তবে এর সাথে যোগ হয়েছে খারাপ ফিল্ডিং ও ক্যাচ ফেলে দেয়ার মহড়া। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৫০ ওভারে ২৭৬ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। তবে এতে লাভ হয়নি। শুরুটা করেছিলেন শুভমান ও রুতুরাজ। এবং অজিদের প্রথম একদিনের ম্যাচে হারিয়ে দেয়ার বাকি কাজ সেরেছেন রাহুল ও সূর্য। ফলে মোহালিতে পাঁচ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
তবে শুধু অশ্বিন নন, অজিদের বিপক্ষের সামনে ভারতের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং মোটেও আহামরি নয়। এমনকি প্রশ্নের মুখে পড়বে লোকেশ রাহুলের উইকেটকিপিং। দলে ঈশান কিষান থাকলেও, ‘স্টপগ্যাপ’ অধিনায়কত্বের পাশাপাশি গ্লাভস হাতে দাড়াচ্ছেন তিনি। তবে পারফরম্যান্স করতে পারলেন কোথায়! সহজ বল গ্লাভসবন্দী করতে তিনি ব্যর্থ। এমনকি মার্নাস লাবুশানে তখন মাত্র ক্রিজে এসেছেন। অজি ব্যাটারকেও রান আউট করতে পারেননি রাহুল। তার এমন কিপিং দেখে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও হেড কোচ রাহুলের দ্রাবিড়ের চিন্তা বাড়বেই।
তবে শুরুটা এমন হয়নি। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই দলকে সাফল্য এনে দেন মোহম্মদ শামি। তার আউট সুইং বুঝতে না পেরে খোঁচা দেন মিচেল মার্শ। বল চলে যায় শুভমান গিলের হাতে। এরপর অবশ্য দুই অভিজ্ঞ অজি ব্যাটার বাইশ গজ দাপাতে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ ৯৪ রান তুলে দেন। তবে শ্রেয়াস আইয়ার একটু সজাগ থাকলে এই জুটি অনেক আগেই ভেঙে যেত। ওয়ার্নার তখন ২৯ রানে ব্যাট করছেন, ঠিক এমন সময় শার্দুল ঠাকুরের বলে লোপ্পা ক্যাচ ফেলেন শ্রেয়াস। যদিও ওয়ার্নারকে (৫২) ফিরিয়ে ভারতকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। ফলে ৯৮ রানে ২ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এর কিছুক্ষণ পর আবার সাফল্য পায় টিম ইন্ডিয়া। স্টিভ স্মিথ ফিরে যান ৪১ রানে। দুরন্ত অফ কাটারে তার স্টাম্প ছিটকে দেন শামি।
এরপর নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারালেও, ভারতীয় দল কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কারণ দলের প্রয়োজনে মারকুটে ইনিংস খেলে যান লাবুশানে (৩৯) ও ক্যামেরুন গ্রিন (৩১)। ফলে ১৮৬ রানে বিপক্ষের ৫ উইকেট ফেলে দিলেও, ভারত পুরোপুরি দাপট দেখাতে পারেনি। কারণ লোয়ার অর্ডারে কিপার জস ইংলিশ (৪৫) ও মার্কাস স্টইনিস (২৯) মারকুটে মেজাজে দ্রুত রান তুলে দেন। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৭৬ রানে অল আউট হয় অস্ট্রেলিয়া। শামি ৫১ রানে ৫, বুমরাহ ৪৩ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। অশ্বিন ও জাদেজা নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।