today-is-a-good-day

সাক্ষাৎকার: অনেক কারখানা বন্ধ, নতুন বিনিয়োগ নেই

The Daily Samakal

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নোমান গ্রুপ

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নোমান গ্রুপ

১২ আগস্ট ২৩

সমকাল: হোম টেক্সটাইলের রপ্তানিতে পতন চলছে। আপনাদের গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স এ খাতে নেতৃত্বস্থানীয়। রপ্তানি কমার বড় কারণ কী?

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: একাধিক কারণে হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, গ্যাসের দাম আড়াই গুণের বেশি বাড়ানো। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকের মতো ব্যবহার করা যাচ্ছে। অন্যদিকে এর রপ্তানি বাজারে বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ভারত। আগে থেকেই পাকিস্তানের দাপট ছিল। অন্যদিকে আমাদের সমস্যা আরও বেড়েছে। ডলার সংকটে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। উচ্চ সুদের ব্যাংক ঋণ, ক্রেতাদের চতুর বাণিজ্যনীতি, অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে আসা– এরকম অনেক কারণে এ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে।

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: গ্যাসের বিষয়টি খালি কথার কথা নয়। যে কোনো পণ্য বা সেবার দাম হঠাৎ যদি ২৮৯ শতাংশ হারে দর বাড়ে তাহলে অবস্থাটা কেমন হতে পারে একবার ভাবুন। আমাদের কারখানায় প্রতি মাসে শুধু গ্যাস বিল অতিরিক্ত ৮০ কোটি টাকা বেড়েছে। ৪০ কোটি টাকার বিল এখন ১২০ কোটি টাকা। অথচ ক্রেতারা এক পয়সাও পণ্যের দর বাড়ায়নি। এসব কারণে আর্থিক লোকসানের মুখে হোম টেক্সটাইল খাত। গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে ৩ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যেত। এখন ৫ শতাংশ হারে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সমকাল: ভারত-পাকিস্তান ফ্যাক্টর?

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: প্রথমে পাকিস্তান ফ্যাক্টর বলি। ঐতিহাসিকভাবে হোম টেক্সটাইলের বাজারে পাকিস্তানের আধিপত্য রয়েছে। নিজস্ব তুলাসহ সব ধরনের কাঁচামাল আছে তাদের। এর মধ্যে বছর তিনেক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা পেয়েছে তারা। এখন আমাদের পণ্যের মতো শুল্কমুক্ত সুবিধায় তাদের পণ্য যাচ্ছে জোটের ২৭ দেশে। আবার পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির বিনিময় হার রপ্তানির অনুকূল। এক ডলারের বিনিময়ে ৩০০ রুপি পাওয়া যায়। এখানেও এগিয়ে তারা। আবার ইউরোপের দূরত্বের দিক থেকে পাকিস্তান আমাদের চেয়ে দুই হাজার মাইল কাছে। ফলে পাকিস্তান থেকে পণ্য পরিবহনে খরচ কম লাগে ক্রেতাদের। এসব সুবিধায় তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে।

সমকাল: ভারত ফ্যাক্টরটিও কি একই রকম?

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: অনেকটা একই রকম। ভারতেরও নিজস্ব তুলা, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল আছে। দূরত্বের বিবেচনায়ও দেশটি আমাদের চেয়ে ইউরোপের কাছে। ভারতে বড় বিনিয়োগে হোম টেক্সটাইলের বেশ কয়েকটি বড় কারখানা গড়ে উঠেছে। ওয়েলসপুন, ট্রিডেন্ট এর মধ্যে রয়েছে। ভারতের শীর্ষ বেসরকারি আদানি গ্রুপও সম্প্রতি হোম টেক্সটাইলে বিনিয়োগে এসেছে।

সমকাল: ক্রেতাদের চতুর বাণিজ্যটা কেমন?

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: ক্রেতাদের চতুর বাণিজ্য হচ্ছে– তারা এখন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পণ্য কিনছে। কোন আইটেম কোন দেশে কত দামে পাওয়া যায় তা যাচাই করে। কাজ পাওয়ার জন্য সবাই সাধ্য মতো সর্বনিম্ন দর দিয়ে থাকে। এর পর সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে আবারও দর কষাকষি করে ক্রেতারা। দুই-এক সেন্টের ব্যবধানও বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে প্রতিযোগিতাটা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

সমকাল: রপ্তানি কমে যাওয়া ছাড়া এসব কারণে আর কী প্রভাব পড়েছে।

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: অনেক হোম টেক্সটাইল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখনও টিকে আছি আমরা। বন্ধ হওয়ার আগে কারখানাগুলোতে এক লাখ শ্রমিক কাজ করত। এখন তারা বেকার। ব্যাংক ঋণে কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকের সংকট এতটা প্রকট যে, সাধ্য মতো চেষ্টা সত্ত্বেও তারা হয়তো শেষ পর্যন্ত খেলাপি হয়ে যেতে পারে। এ দিকে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ। আমাদের গ্রুপ থেকে আরও তিনটি কারখানার জন্য বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা ছিল। এটি বাদ দিয়েছি আমরা।

সমকাল: এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় কী?

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ নিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাবে এলএনজির দাম যখন ৬৩ ডলারে উঠে গেল, তখন শিল্পে গ্যাসের দাম ২৮৯ শতাংশ বাড়ানো হলো। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এখন ১২ ডলার। গত ছয় মাস ধরে এই দর চলছে। এখন গ্যাসের দাম যুক্তিসংগত হারে কমানো উচিত। এ ছাড়া রপ্তানিতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে আগের শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশে ফিরিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া ৪ শতাংশ হারে যে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়, তা শেষ পর্যন্ত কেটেছিঁড়ে রেখে দেওয়ার পর তেমন একটা আর থাকে না। টেক্সটাইল খাতকে টিকিয়ে রাখতে ১০ শতাংশ হারে বিশেষ নগদ সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। শিল্পের কাঁচামাল আমাদানিতে এলসি খোলা নির্বিঘ্ন রাখতে হবে।

সমকাল: এসব সুবিধা দেওয়া হলে কি হোম টেক্সটাইল আবার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভালোভাবে ফিরতে পারবে?

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তা পাওয়া গেলে হোম টেক্সটাইলে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সক্ষমতা তৈরি হবে। উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা এবং শ্রমিকদের দক্ষতা মিলে একটি মজবুত ভিত্তি আছে আমাদের। সরকারকে বিষয়টি সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। কেননা, শিল্পের টিকে থাকার সঙ্গে লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থানের বিষয়টি জড়িত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটের মধ্যে দেশে রপ্তানি আয় বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সঙ্গে জড়িত।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু হেনা মুহিব