ইমরানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা, টিভি চ্যানেল বন্ধ, জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান

logo

মানবজমিন ডেস্ক

(১৫ ঘন্টা আগে) ৬ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ৫:০৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:৩৫ অপরাহ্ন

mzamin

নাটকীয়তার পর ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা। তার বক্তব্য এবং সংবাদ সম্মেলন সম্প্রচারে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি (পেমরা) নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ইমরান খানের বক্তব্য প্রচার করার প্রায় দু’ঘন্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এআরওয়াই নিউজের লাইসেন্স সাসপেন্ড করেছে। সোমবার তার বিরুদ্ধে জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করে জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ ও ডন।

তোশাখানা মামলায় পর পর তিনবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য তাকে আদালতে উপস্থিত হতে নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি একবারও উপস্থিত হননি। এ জন্য তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। রোববার ইসলামাবাদ ও লাহোর পুলিশ জামান পার্কে অবস্থিত ইমরান খানের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে তাকে গ্রেপ্তার করতে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ পার্টির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বাধায় পুলিশ পিছু হটে। এক পর্যায়ে একজন এসপি ওই বাসার ভিতরে প্রবেশ করে ফিরে আসেন।

তিনি জানান, ইমরান খানকে তার রুমে পাওয়া যায়নি। অথচ তার পরপরই ইমরান খান সরকারের বিরুদ্ধে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধে তিক্ত বাক্য বর্ষণ করে ভাষণ দেন। এ নিয়ে পাকিস্তানের হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। দিনের শেষে রিপোর্টে বলা হয়, ইমরান খান ওই ভাষণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য তার ভাষণ ও সংবাদ সম্মেলন সম্প্রচার করা যাবে না। ওই ভাষণে ইমরান খান বলেছেন, গত বছর এপ্রিলে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া। এ অবস্থায় পেমরা তার নোটিফিকেশনে বলেছে, ইমরান খান ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আইন শৃংখলা বিশৃংখল করার চেষ্টা করছেন। শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে ইমরানের বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিল পেমরা। তারা এআরওয়াই নিউজের লাইসেন্স সাসপেন্ড করেছে। বলেছে, এই সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেলটি ইমরান খানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। তারা নির্দেশ অমান্য করেছে। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এআরওয়াই নিউজের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, রাত আটটার পর পেমরার বিবৃতি পেয়েছেন তারা। ততক্ষণে রাত ৯টার বুলেটিনে চলে গেছে ইমরান খানের ভাষণের ক্লিপ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা সত্ত্বেও শুধু আমাদের চ্যানেলের লাইসেন্স সাসপেন্ড করেছে। পেমরার এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান। 

ওদিকে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত দাবি করে সোমবার ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা জজ কোর্টে আবেদন করেন ইমরান খান। কিন্তু আদালতের অতিরিক্ত সেশন জজ জাফর ইকবাল বলেছেন, এ মামলার শুনানির পর তিনি আগের দিনের রায়ই বহাল রাখছেন। অর্থাৎ ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল থাকবে। সোমবারের শুনানিতে ইমরান খানের আইনজীবী আলি বুখারি, কায়সার ইমাম এবং গহর আলি খান আদালতে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। বুখারি বলেন, তার মক্কেল সব সময় আদালতের নির্দেশ মেনে চলেন। এ সময় কায়সার ইমাম বলেন, ইমরান খান নিজে উপস্থিত হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। এ সময় বিচারক বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিতের জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টে যেতে পারেন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ প্রধান ইমরান খান।

জবাবে ইমাম বলেন, তারা চান যে সেশন কোর্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করুক। আদালতকে এ সময় আইনজীবী বুখারি জানান, লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাসায় অবস্থান করছেন পিটিআই প্রধান। আদালতে যাওয়ার উপায় জানতে চাইছেন তিনি। কায়সার ইমাম বলেন, নির্বাচনী আইন ২০১৭ এর অধীনে পিটিআই প্রধানের বিরুদ্ধে একটি ‘প্রাইভেট অভিযোগ’ নিবন্ধিত হয়েছে। তিনি যুক্তি দেখান, প্রাইভেট অভিযোগের ওপর সাধারণত কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। এ জন্য তারা আদালতকে ওয়ারেন্ট স্থগিত করার অনুরোধ করেন। জবাবে বিচারক বলেন, পিটিআই প্রধানের আইনজীবী তাদেরকে জানিয়েছেন, তাদের মক্কেল আদালতে উপস্থিত হবেন না। ফলে বিচারক আগের রায় বহাল রাখেন।
তোশাখানা মামলায় আদালতে অনুপস্থিতির কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে ২৮শে মার্চ জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন অতিরিক্ত সেশন জজ জাফর ইকবাল। এই আদেশ অনুযায়ী রোববার একজন এসপির নেতৃত্বে ইসলামাবাদ পুলিশের একটি টিম লাহোরের জামান পার্কে যায় পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু তারা তাতে ব্যর্থ হন।