আইএমএফ যেন ধরা দিচ্ছে না পাকিস্তানের কাছে। এবার পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রাধিকার পরিবর্তন করেছে তারা। তাতে আলোচনা আবার ঝুলে গেছে, অর্থাৎ কর্মী পর্যায়ের ঐকমত্য আবারও পিছিয়ে যাচ্ছে। খবর দ্য ডনের।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় আজ পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। আজ সকালে দেশটির প্রধান শেয়ার সূচক কেএসই-১০০ সূচক ৪৩৫ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০৭ শতাংশ কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও শেয়ারসূচকের পতন হয়েছে।
পাকিস্তানের আবা আলি হাবিব সিকিউরিটিজের গবেষণা প্রধান সালমান নাকভী দ্য ডনকে বলেন, ‘শেয়ার সূচক পতনের মূল কারণ হলো, আইএমএফের সঙ্গে কর্মী পর্যায়ের বৈঠক না হওয়া, এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা হবে’।
এদিকে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস পাকিস্তানের সার্বভৌম ঋণমান আরও দুই ধাপ কমিয়ে ‘সিএএ৩’ করেছে। এটি তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। তারা মনে করছে, পাকিস্তানে যেভাবে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, তাতে দেশটির ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
আইএমএফের সঙ্গে কর্মী পর্যায়ের ঐকমত্য না হওয়া প্রসঙ্গে পাক সরকারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আইএমএফ জনসমক্ষে বলছে গরবিবান্ধব নীতি করতে; কিন্তু আদতে তারা যা বলছে, তাতে গরিব মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে যাবে।
আইএমএফ এখন চাচ্ছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব বিষয়ে তাদের অগ্রাধিকার পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো হলো-মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত না রাখা, যাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত আফগানিস্তানে অর্থ পাচার না হয়, বন্ধু রাষ্ট্রগুলো পাকিস্তানকে সহায়তা করবে এই মর্মে লিখিত নিশ্চয়তা ও প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারে ৩ দশমিক ৩৯ রুপি সারচার্জের বিধান অব্যাহত রাখা।
দ্য ডন আরও জানিয়েছে, আইএমএফ ধনীদের ওপর করারোপের কথা বললেও এখন বিক্রয় কর বৃদ্ধির জন্য চাপাচাপি করছে। এতে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে। কিন্তু ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের বিদেশি মুদ্রা লেনদেনে করারোপের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে তারা। আবার বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে উচ্চ আয়ের মানুষের ওপর লেভি আরোপেরও বিরোধিতা করছে আইএমএফ।
এই পরিস্থিতিতে পাক সরকার বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা এখন বলছে, পাকিস্তান ভিক্ষুক নয়, আইএমএফের সদস্য। আইএমএফ পাকিস্তানকে সদস্য মনে না করলে সদস্যপদ বাতিল করুক।
অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া এক নিবন্ধে গতকাল লিখেছেন, পাকিস্তান সামরিক ব্যয় বাড়াতে বাড়াতে আজ এই দুর্যোগের মুখে পড়েছে। মেক্সিকোকে খেয়ে দিয়েছে ওদের ড্রাগ কার্টেল, ইতালিকে মাফিয়া, আর পাকিস্তানকে মিলিটারি।
বিরূপাক্ষ পাল আরও লিখেছেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার গড় রিজার্ভ ছিল ৩৭ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানে ছিল তার অর্ধেক-অর্থাৎ ১৮ বিলিয়ন ডলার। আর ভারতের ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সেই পাকিস্তানের রিজার্ভ এখন তিন বিলিয়েন নেমে এসেছে।
এদিকে ইকোনমিক টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক দীনতা মোকাবিলায় পাকিস্তান গত ৭৫ বছরে ২৩ বার আইএমএফের বেইল আউল প্যাকেজ সহায়তা নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মুর্তজা সায়্যিদ জিও নিউজকে বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো, আমরাই হলাম আইএমএফের সবচেয়ে নিয়মিত গ্রাহক’। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের সঙ্গে তুলনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একই সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জন করা ভারত মাত্র সাতবার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। ১৯৯১ সালে মনমোহন সিংহের যুগান্তকারী সংস্কারের পর থেকে একবারও যায়নি’।