অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী সুমন ইসলাম। লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি খুঁজছিলেন। এ সুবাধে পলাশ চন্দ্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে সুমনকে ৯ লাখ টাকার বিনিময়ে সচিবালয়ে চাকরির প্রস্তাব দেয়। সুমন তার কথামতো ঢাকায় এসে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেন, ভাইভা দেন। এরপর কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাৎক্ষণিক তাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। এ বাবদ তার থেকে চক্রটি ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর যাচাই করতে গিয়ে দেখেন, সুমনের নিয়োগপত্রটি ভুয়া।
ভুক্তভোগী সুমন ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক। তিনি অনেক কষ্টে ঋণ করে ৫ লাখ টাকা দেন; কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রতারণার শিকার হয়েছি। এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। বাড়ির সবাই অনেক কষ্টে আছেন।’
প্রতারণার শিকার সুমন বলেন, ‘দেশে তো টাকা ছাড়া চাকরি হয় না। যে কারণে সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়েছিলাম। তারা বলেছিল, পরীক্ষা ও ভাইভার পর যাচাই-বাছাই করে চাকরি হবে কিনা জানানো হবে; কিন্তু মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা ও ভাইভা শেষে হাতে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। অথচ কোনো যাচাই-বাছাই করা হয়নি। আমার সন্দেহ হলে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে যাই। গিয়ে জানতে পারি আমার নিয়োগপত্রটি ভুয়া।’
প্রতারণার শিকার সুমন ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এ মামলার পর কয়েক দফায় এ চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বর্তমানে তারা রিমান্ডে রয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলো মো. আলমগীর হোসেন, পলাশ চন্দ্র সরকার, মো. আসাদুল হক, জাহিদ হাসান, রেজাউল হক টিটু, হুমায়ুন কবির মিন্টু ও আসাদুজ্জামান তালুকদার।
যেভাবে প্রতারিত হন চাকরিপ্রত্যাশী সুমন: আসামি পলাশ চন্দ্র সরকার ভুক্তভোগী সুমনের নিকটবর্তী এলাকায় ভাড়া থাকে। সেই সুবাদে পলাশের সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ দিন আগে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে পলাশ তাকে জানায়, সে তার পরিচিত সচিবের মাধ্যমে ৯ লাখ টাকার বিনিময়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে চাকরি দিতে পারবে। চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর টাকা দিতে হবে বলেও সে জানায়। চাকরি নিতে আগ্রহী হওয়ায় ৯ ফেব্রুয়ারি পলাশ জানায়, সে ঢাকায় কথা বলেছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গিয়ে সচিব স্যারের কাছে লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে এবং ১ লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। সচিব স্যার যাচাই করে দু-এক দিনের মধ্যেই নিয়োগপত্র দেবেন। পরে সুমন ঢাকায় আসেন। এরপর পলাশ কথিত সচিব রেজাউল ও হুমায়ুন কবির মিন্টুর কথা বলে ১ লাখ টাকা নিয়ে যায়। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিসের তৃতীয় তলায় তাকে নিয়ে যায়। এরপর একটি প্রশ্নপত্র ও একটি উত্তরপত্র দিয়ে তাকে পরীক্ষা দিতে বলে। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়। সচিব পরিচয়দানকারী রেজাউল হক টিটু তার ইন্টারভিউ শেষে একটি নিয়োগপত্র দেয়। নিয়োগপত্র ঠিক আছে বলে তার কাছে থেকে ৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগদান এবং দু-এক দিনের মধ্যে বাকি ৪ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ নিয়োগপত্রটি যাচাই করে জানতে পারেন, নিয়োগপত্রটি ভুয়া ও তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ চক্রটি জাল নিয়োগপত্র প্রস্তুতকারী। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গরিব মানুষের টাকা আত্মসাৎকারী। তারা দীর্ঘদিন এ ধরনের কাজ করে অনেক মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লালবাগ বিভাগের ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মো. শরিফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এ চক্রটি গরিব মানুষকে টার্গেট করে। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে অনেক মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব ঘটনায় জড়িত মূলহোতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’