- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১৫:০৬, আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১৬:৪৯
আওয়ামী লীগ বার বার দেশের ক্ষতি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশ নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন বলা হচ্ছে। তাদের নাকি এখন পয়সা নেই। তো ৪২ বিলিয়ন রিজার্ভ গেলো কোথায়? আসলে আওয়ামী লীগ বার বার দেশের ক্ষতি ও ধ্বংস সাধন করেছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালের ১৮ অক্টোবর জেডআরএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জেডআরএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেসব মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে তার একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান এমন সময় দেশে আবির্ভূত হয়েছিলেন যখন যুদ্ধের দামামা চলছিল। কেউ নেতৃত্বে নেই। তখন একজন অখ্যাত মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে ভেসে আসে স্বাধীনতার ঘোষণা। যা দেশবাসীকে উজ্জীবিত ও উদ্বেলিত করে তুলেছিল। তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনের পর তিনি আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে যান। আবার ৭ নভেম্বর দেশের সঙ্কটকালে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে। কারণ তিনি তো আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা থেকে দেশকে উদ্ধার করেছিলেন। সেজন্য মার্কিন কূটনীতিক উইলিয়াম মাইলাম বলেছেন যদি জিয়াউর রহমান মে মাসের আগে মারা যেতেন তাহলে আরো কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হতো। হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। কিন্তু জিয়াউর রহমান সেখান থেকে দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন করে বিদেশে খাদ্য রফতানি করেছিলেন। তিনি নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আশা জাগিয়েছেন। পথে পথে ঘুরে জনগণকে জাগিয়ে তুলেছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হাতে-কলমে কাজ করেছেন। তারই উত্তরসূরি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকা তুলে ধরে সারাবাংলা ঘুরে বেরিয়েছেন। নয় বছর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখনো তিনি গৃহবন্দী। পতাকা কিন্তু থেমে নেই। আজকে সেই পতাকা তুলে নিয়েছেন তাদেরই সন্তান তারেক রহমান। তিনি আট হাজার মাইল দূরে থেকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দেশের জনগণ জেগে উঠেছে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে আছি। আমরা টেকব্যাক বাংলাদেশ চাই। যেখানে গণতন্ত্র থাকবে। স্বাধীনতা থাকবে। যেখানে কোনো মা-বোন ধর্ষিতা হবে না। সেই বাংলাদেশ আমরা ফিরে পেতে চাই। আজ পঞ্চাশ বছর পর কেন অধিকার ফিরে পেতে লড়াই করতে হবে? কারণ আওয়ামী লীগ সেই স্বপ্নকে ধ্বংস করেছে। ১৯৭২ সালে বাচ্চাদের জন্য বিদেশ থেকে আনা দুধ ও কম্বল চুরি করেছে। সেজন্যই শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন সবাই কম্বল পেল তো আমার কম্বল কোথায়?
তিনি বলেন, আজকে দেশে বিদ্যুৎ নেই। বলা হচ্ছে, দেশ নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন। তাদের নাকি এখন পয়সা নেই। তো ৪২ বিলিয়ন রিজার্ভ গেলো কোথায়? এখন নাকি দিনে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে? এই হলো আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রোল মডেল! আসলে আওয়ামী লীগ বার বার দেশের ক্ষতি ও ধ্বংস সাধন করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারা দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। তারাই কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। আমরা কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দিয়েছিলাম। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন কিন্তু সবাই মেনে নিয়েছে। এখন আওয়ামী লীগ সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে। তারা সবকিছুই দলীয় করণের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। এভাবে গোটা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। অসংখ্য সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীকে তারা আটক করেছে। অবিলম্বে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন সেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ব। সুশাসন ও সততার মধ্য দিয়ে দেশকে পরিচালনা করব। জিয়াউর রহমান শতভাগ সৎ মানুষ ছিলেন। ইনশা আল্লাহ, আমরা সবাই মিলে বর্তমান যুদ্ধে জয়লাভ করব। তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।
ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে যেহেতু ফাউন্ডেশন সেজন্য তাকে নিয়ে এবং তার চিন্তা দর্শন নিয়ে গবেষণা করা দরকার। যা চিরদিন থাকবে। কীর্তিমান ব্যক্তিদের জিয়াউর রহমানের নামে পুরস্কার প্রবর্তন করা। জিয়াউর রহমান স্কলারশিপ চালু করা। তারা দেশের সবচেয়ে মেধাবী তাদের এই পুরস্কার দেয়া দরকার। তবে জিয়াউর রহমানের নাম আজীবন মানুষের মাঝে থাকবে।
এছাড়া ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের ক্রান্তিকাল চলছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও এমন পরিস্থিতি হবে এটা কল্পনাতীত। প্রত্যাশা ছিল জাতি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তার সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি জানতে হবে। তিনি ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতেন। হাটে মাঠে ঘাটে সারাদিন তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন। কখনো কখনো সারারাত জেগে কাজ করতেন। দেশ ঘুরে ঘুরে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য খাল কেটেছেন। এজন্য তাকে দেশের মানুষ উপাধি দিয়েছিলো বাংলার রাখাল রাজা।
তিনি বলেন, একজন অসীম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট যার কথায় দেশ চলতো। সেই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন দেশের এনার্জি পলিসি নিয়ে। এরপর দেশে সর্বপ্রথম মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করছিলেন। যার ফলশ্রুতি আজকে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতি। আর আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে গলা ফাটিয়ে দিচ্ছে। তারা ৪২ বিলিয়ন রিজার্ভ নিয়ে গর্ব করে। এসব কোত্থেকে এসেছে। এগুলো এসেছে গার্মেন্টস থেকে। এর গোড়াপত্তন করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যিনি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি টিম জার্মানিতে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে ‘দেশ গার্মেন্ট‘স নামে প্রথম গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। যার হাত ধরে আজকে দেশে অসংখ্য গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এইসব হলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য বৈদেশিক নীতিতে আমূল পরিবর্তন করেন জিয়াউর রহমান। তার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথম সদস্য হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্কট সমাধানে আল কুদস কমিটির সদস্য ছিল বাংলাদেশ। তিনি দেশের মানুষকে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে পাওয়ার লাইজ ইন দ্যা ব্যাটল অব দ্যা গান। অর্থাৎ তারা বন্দুকের শাসনে বিশ্বাসী। সেজন্যই তারা আমাদের পাঁচজন মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকে দেশ নাকি বিদ্যুতের উৎপাদনে ভেসে যাচ্ছে। কেন এতো লোডশেডিং? তো এতো বিদ্যুৎ গেল কোথায়?
জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম ও ব্যারিস্টার মীর হেলালের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, অধ্যাপক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভুইয়া, মোস্তফা কামাল মজুমদার ও রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডাঃ পারভেজ রেজা কাকন যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করেন কৃষিবিদ আব্দুর রহমান নূরী।
আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ হারুন আল রশিদ, ডাঃ এএস হায়দার পারভেজ, অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুর রশিদ, কৃষিবিদ আনোয়ারুন্নবী মজুমদার বাবলা, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, গোলাম হাফিজ কেনেডী, কামরুজ্জামান রতন, কাদের গণি চৌধুরী, ডাঃ সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী, ডাঃ শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডাঃ সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, এটিএম আব্দুল বারী ড্যানী, অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক ড. শেখ মনির উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল ইসলাম, ডাঃ একেএম মাসুদ আখতার জীতু, ডাঃ মোঃ ফখরুজ্জামান ফখরুল, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু, খান মোঃ মনোয়ারুল ইসলাম শিমুল, ড. খায়রুল ইসলাম, কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদার, কৃষিবিদ কেএম সানোয়ার আলম, মিসেস শামীমা রাহিম, ডাঃ সাজিদ ইমতিয়াজ, প্রকৌশলী মোঃ আইয়ুব হোসেন মুকুল, রাকিবুল ইসলাম, আসিফ হোসেন রচি অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানসহ জেডআরএফের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।