- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ মে ২০২২, ২০:২৪
ভারত গম রফতানি বন্ধ ঘোষণা করার পর বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ, আমদানিকারকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে সরকার একের পর এক বৈঠক করছে বিকল্প উপায়ে কিভাবে গম আমদানি করা যায়।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড শুক্রবার জানিয়েছে, নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা রফতানিতে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
তবে দু’টি ক্ষেত্রে রফতানি করা যাবে’ এক-ইতোমধ্যে খুলে ফেলা যেসব ঋণপত্র বা এলসি বাতিল হবে না এবং দুই-খাদ্য ঘাটতিতে থাকা দেশের সরকারের অনুরোধের বিপরীতে ভারত সরকার রফতানির অনুমতি দেবে।
বিকল্প খুঁজছে সরকার
বাংলাদেশের আমদানি করা গমের বড় অংশ আসতো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। কিন্তু দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে ভারত থেকেই গম আমদানি করা হচ্ছিল। এখন এই নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশ সরকার বিকল্প কি চিন্তা করছে?
বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোচ্ছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন তারা বিকল্প দু’টি পরিকল্পনা করেছেন এরই মধ্যে।
তিনি বলেন ‘বুলগেরিয়ার সাথে সমঝোতা স্মারক সই করেছি। সেখান থেকে পাবো। আর ভারতের সরকারের সাথে জি-টু-জি পদ্ধতিতে আমদানি করার চেষ্টা করছি।’
‘সরকারিভাবে বেশি এনে আমরা খোলা বাজারে বা ওএমএস এ একটু বেশি দেয়ার চেষ্টা করবো। ভারতের সরকার যেহেতু বলছে অনুরোধের ভিত্তিতে দেবে সেই চেষ্টা আমরা করবো’ বলেন তিনি।
তবে বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে , ভারত রফতানি বন্ধ করলে বেসরকারিভাবে যারা আমদানি করে তারা ক্ষতির মুখে পড়বে।
কারণ গমের চাহিদার একটা সিংহভাগ বেসরকারি আমদানিকারকরা করে থাকেন।
সচিব ড. মোচ্ছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, এই সমস্যা সমাধান করা যায় কি না সেজন্য তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করেছেন। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রণালায়ের সাথে বৈঠক করবেন।
উদ্বেগে আমদানিকারক এবং অর্থনীতিবীদরা
এদিকে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের আমদানিকারক জাভেদুর আলম, যিনি ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন, তিনি বলছেন, সরকার যদি দ্রুত ভারতের সরকারের সাথে আলোচনায় না বসে তাহলে আমদানিকারকরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়বেন, তেমনি বাজারের গমের সংকট দেখা দেবে।
তিনি বলেন ‘ভারত থেকে আমরা সিংহভাগ গম আমদানি করি। কারণ বাংলাদেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয়, সেটা চাহিদা পূরণ করতে পারে না। আমরা প্রতি সপ্তাহে গম আনি ,প্রতি সপ্তাহে বিক্রি করে ফেলি’।
‘সরকারের উচিৎ ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের আমদানি করার ব্যবস্থা করে দেয়া। না হলে বাজারে ব্যাপক সংকট হবে,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশে চালের পর গমই হচ্ছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাহিদা সম্পন্ন শস্য। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে।
গমের ১১ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশের রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট গম আমদানির ৬৩ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন, ১৮ শতাংশ কানাডা এবং বাকিটা যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে আমদানি করে।
কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর এনবিআরের হিসাবে, গত ১ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ছয় লাখ ৮৭ হাজার টন গম আমদানি হয়। এ সময়ে ভারত থেকে এসেছে ৬৩ শতাংশ। বাকিটা এসেছে কানাডা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন ভারত গম রফতানি বন্ধ করায় বাজারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন ‘এটার ফলে শুধু যে গমের দাম বাড়বে সেটাই না অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে। যেকোনো ঘোষণা কার্যকর করার আগেই বাংলাদেশের বাজারগুলোতে দাম বেড়ে যায়’।
‘তাই সরকারকে এখনই যেটা করতে হবে-ভারতের সাথে আলোচনা করে বেসরকারিভাবে গম আমদানি করার ব্যবস্থা করা, আর দ্বিতীয় বিকল্প উৎস থেকে গম আনা। এছাড়া অন্যান্য জিনিস যেমন চাল, ডাল, গম ডিম এসবের দাম না বাড়ে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে’ বলেন তিনি।
খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, সরকারিভাবে গমের মজুত আছে ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন।
এটা দিয়ে দুই মাস চালানো যাবে। এছাড়া এক লাখ মেট্রিক টন গম জাহাজে রয়েছে যেটা দুই একদিনের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে। এছাড়া দুই লাখ মেট্রিক টন গমের চুক্তি করা আছে ভারতের সাথে।
খাদ্য-মন্ত্রণালয় বলছে এই অর্থবছরে সরকারিভাবে যে গম বিতরণ করা হয় সেটার কোনো ঘাটতি হবে না।
সাধারণ মানুষের জন্য গমের চাহিদার বিরাট অংশ মেটানো হয় বেসরকারিভাবে আমদানি করা গমে। তবে সেই গম কতটা মজুদ আছে সেটার হিসেব পাওয়া যায়নি।
সূত্র : বিবিসি