রাজধানীতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে কমবেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরাও। তবে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার আগের তুলনায় বেড়েছে। এ অবস্থায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত ভ্যাপসা গরম ও খাদ্যে অসচেতনতার পাশাপাশি সরাসরি কলের পানি পান করার ফলে শিশুরা ডায়রিয়াজনিত সমস্যায় বেশি ভুগছে।
সরেজমিনে আইসিডিডিআরবিতে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীর প্রচণ্ড চাপ। কিছুক্ষণ পরপরই রোগী আসছে। তবে এই হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগীই প্রাপ্তবয়স্ক। রোগীর চাপ বেশি থাকায় একদিনের বেশি রোগী ভর্তি রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বাড়তি রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
অন্যদিকে আইসিডিডিআরবির পাশাপাশি শিশু হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। বড়দের তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, গত দেড় মাসে ভর্তি শিশু রোগীর সংখ্যা তার আগের একই সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, সরাসরি কলের পানি, ভ্যাপসা গরম ও খাদ্যে অসচেতনতার কারণে শিশুরা বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের বেশিরভাগই মিরপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর এলাকার।
শুক্রবার হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা তার আগের একই সময়ে চেয়ে অনেক বেশি। গেলো এক সপ্তাহে এ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২০২ জন রোগী। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সর্বোচ্চ ৪০ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়। এছাড়া গত ৮ এপ্রিল ২১ শিশু, ৯ এপ্রিল ৩৬, ১০ এপ্রিল ১৯, ১১ এপ্রিল ১৯, ১২ এপ্রিল ২৩, ১৩ এপ্রিল ২৯, ১৪ এপ্রিল ৪০ এবং সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত ১৫ শিশুকে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এক বছর ১১ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন গাবতলীর হাজেরা বেগম। তিনি বলেন, ‘গত চারদিন ধরে বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করেছি। ওর চিকিৎসা চলছে। তবে কীভাবে ডায়রিয়া হলো, তা বুঝতে পারছি না। আমরা পানি ফুটিয়ে খাই। তবে মাঝে-মধ্যে সরাসরি কলের পানিও খাওয়া হয়।’
মিরপুর থেকে আরেকজন এসেছেন দেড় বছর বয়সী শিশু নিয়ে। এক সপ্তাহ ধরে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে তিনি। কীভাবে ডায়রিয়া হয়েছে জানাতে না পারলেও বাসা পরিবর্তনের পর হঠাৎ এমন সমস্যা দেখা দেয় বলে জানান ওই অভিভাবক।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত আবাসিক চিকিৎসক ডা. নাদিরা খান বলেন, ‘যারা ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে আসছে, তাদের বয়স ছয় মাস থেকে আড়াই বছরের মধ্যে। হাসপাতালে আসার পর আমরা উপসর্গগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে কিছু পরীক্ষা করি। এরপর চার ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। যদি সমস্যা গুরুতর মনে হয়, তবে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।’
ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খাবারে অনিয়মের কারণে এমনটা বেশি হচ্ছে। রোজায় সব বাসায় ভাজাপোড়া ও তেলযুক্ত খাবারের আয়োজন বেশি হয়। ফলে খাদ্যে অসচেতনতা একটি বড় সমস্যা। তবে গত এক মাস হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের খাওয়ার পানি থেকে বেশি সমস্যা হয়েছে। অনেকে সরাসরি কলের পানি পান করছে। সেসব শিশুরা ডায়রিয়াজনিত সমস্যা ভুগছে বেশি।
এদিকে ডায়রিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানী ঢাকার ২৩ লাখ মানুষকে কলেরার টিকা দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক বছর বয়স থেকে সব বয়সী মানুষ কলেরার টিকা পাবে। তবে অন্তঃসত্ত্বা মা এই টিকা পাবেন না।
এ জন্য পাঁচটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানগুলো হলো: যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও সবুজবাগ।
দুই ডোজের এই টিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজ দেয়া হবে মে মাসে। সব মিলিয়ে ২৩ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। এর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে জুনে।