মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে অস্বস্তিগুলো রয়েছে তা দূর করার জন্য তিন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমত, কূটনৈতিক তৎপরতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনকে আরও সক্রিয় করা হচ্ছে এবং সেখানে কিছু রদবদল করা হচ্ছে এবং এই দুই জায়গা থেকে যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয় এবং বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় সেজন্য তাদেরকে আরও সক্রিয় করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং সার্বক্ষণিকভাবে তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয় উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর বাংলাদেশি থাকেন এবং এদের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত। তাদেরতে সক্রিয় করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও সেখানে দেশপ্রেমিক শুধিজন যারা আছেন তাদেরকেও বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সচেতন এবং সজাগ করা হচ্ছে। তৃতীয় উদ্যোগটি হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্যোগ। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি থিংক ট্যাংক তৈরি করছে, যে থিংক ট্যাংকটির কাজ হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা। আর এই সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য থিংক ট্যাংকটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরও করতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই থিংক ট্যাংকে কারা কারা থাকবেন সেটি এখন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসের যেকোনো সময়ে আওয়ামী লীগের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন এবং তারা সেখানে কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করবেন এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে বার্তা দেবেন। এই থিংক ট্যাংকটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সাফল্য, গত ১৩ বছরের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখবেন এবং প্রকৃত তথ্য তুলে ধরবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচারগুলো হচ্ছে সেই অপপ্রচারের ব্যাপারেও কথা বলবেন এবং এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্য তথ্যগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবেন।
এই থিংক ট্যাংকে কারা থাকতে পারেন এই নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন এই থিংক ট্যাংকে থাকতে পারেন। এই থিংক ট্যাংকে থাকতে পারেন মোহাম্মদ জমির, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়জন সদস্য। এছাড়াও সাবেক কূটনীতিকরাও এতে থাকতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরকে এই থিংক ট্যাংকে রাখা হবে। এদের কাজ হবে একাধিক। প্রথমত, এরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে এবং বিভিন্নভাবে যে অপপ্রচারগুলো হচ্ছে তার পাল্টা বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। এরা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করবে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার পরিস্থিতি, উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা এবং জীবনমানের উন্নয়নের গল্পগুলো তুলে ধরবে। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণাগুলো রয়েছে সেই ভ্রান্ত ধারণাগুলো কেটে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।