- by নিজস্ব প্রতিবেদক
সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সিইসি, কে এম নূরুল হুদাকে ‘খলনায়ক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতো একজন লোককে সিইসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সম্প্রতি নূরুল হুদা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্পর্কে মিথ্যচার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে আজ শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুজন।
সংগঠনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে উপরোক্ত মন্তব্য করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ড. তোফায়েল আহম্মেদ, দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
সাবেক সিইসি ড. শামসুল হুদা কমিশন সুজনকে কাজ দিয়েছিল, সেটা কোন প্রক্রিয়ায় দিয়েছিল— সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা টেকনিক্যাল বিষয়। টেকনিক্যাল বিষয় আমি জানি না। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে যে, নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা তথা তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এ জন্য তৎকালীন শামসুল হুদা কমিশন আমাদের সহায়তা নিয়েছিল। কিন্তু বিষয়টা যেহেতু টেকনিক্যাল, সুতরাং এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন যে, কোন প্রক্রিয়ায় কাজ দিয়েছিলেন। আমরা এটা জানি না।
এর আগে বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি, এক সংবাদ সম্মেলনে নূরুল হুদা অভিযোগ করেন, কোনো বিজ্ঞপ্তি বা কোনো দরপত্র ছাড়াই সুজনকে নির্বাচনী তথ্য প্রচারের কাজ দেওয়া হয়েছিল। ওই কাজ কোন প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছিল, এদিন সেই প্রশ্নও করেন তিনি।
শনিবার বদিউল আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের অনেক ক্ষমতা। শুধু দিনকে রাত আর রাতকে দিন করা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে তারা সব কাজ করতে পারে। আদালতের রায়েও বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করতে পারে কমিশন। এমনকি তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচন বাতিল করার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু নূরুল হুদা কমিশন তার কোনটাই করেনি।
সুজন সম্পাদক আরো বলেন, সিইসি অজুহাত দেখিয়েছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অভিযোগ নিয়ে আদালতে যায়নি। কিন্তু অন্তত ৭০টি এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। একটিরও শুনানি হয়নি। ব্যালট পেপার খুললেই প্রমাণ হতো যে, মধ্যরাতে ভোট হয়েছে। কিন্তু সেটা তো করা হয়নি।
প্রবীণ এই বুদ্ধিজীবী বলেন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তার হাতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএম সিস্টেমে ব্যালট ইউনিটে ২৫ শতাংশ ব্যালট পেপার ওপেন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এমন অনিয়মের বিষয়ও উঠে এসেছে। এ রকম একজন খলনায়ককে সিইসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সিইসি নূরুল হুদার মিথ্যাচারে আমরা স্থম্ভিত। তিনি যে মিথ্যাচার করেছেন, সে বিষয়ে তাকেই প্রমাণ দিতে হবে। একই সঙ্গে জবাবও দিতে হবে যে, তার কাছে এ সম্পর্কে কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা কেন প্রকাশ করেননি? কিংবা কেন তিনি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করলেন না? অথবা বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনেই বা কেন তা পাঠালেন না?
নূরুল হুদার বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জাবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আদালতে গেলে রেমিডি (প্রতিকার) পাওয়া যাবে কি না, এখন সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তারপরও এটা একটা বিবেচ্য বিষয়, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব। আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুজন সম্পাদক আরো বলেন, নিঃসন্দেহে এতে আমার মানহানি হয়েছে। শুধু আমার ব্যক্তিগত বিষয়ই নয়, বরং পুরো প্রতিষ্ঠান তথা সুজন এবং এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সারা দেশের অসংখ্য মানুষের মানহানি করেছেন সিইসি নূরুল হুদা।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বৃহস্পতিবার সিইসি নূরুল হুদা এক ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বার বার সাক্ষাৎ করে আবারো কাজ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন সুজন সম্পাদকসহ তাদের একটি প্রতিনিধি দল। এমনকি এ বিষয়ে সুজন একটি চিঠিও দিয়েছিল। এ ছাড়া বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত সমালোচনাও করেন নূরুল হুদা। এ ছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদারও সমালোচনা করেন বিদায়ী সিইসি।