সিলেট
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর জয়ের পর কোয়ারিতে পাথর তোলার সুযোগ না দেওয়া হলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন শামীম আহমদ। তিনি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর পশ্চিম ইউপিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলকাছ আলীর সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় শামীম আহমদ এই কথা বলেন। ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ শাহ স্কুল মাঠে এই সভা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তৃতার ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
৩১ জানুয়ারি এই ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শামীম আহমদ যখন বক্তৃতা করেন, তখন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানসহ উপজেলা পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শামীম আহমদ গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে শামীম বলেন, ‘আল্লার ওয়াস্তে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিতা। আলকাছ ভাইরে মন্ত্রীসাবে (ইমরান আহমেদ) ভালা পাইন। আমি সাত মাসে আলকাছ ভাইরে পায়ে ধইরা বুঝাইয়া খাড়া করছি। ইনশাল্লাহ ৩১ জানুয়ারি বিজয়ের মালা পরে মন্ত্রীসাবরে লইয়া আপনারার এই কোয়ারি চালু করে দিমু। আর যদি কোয়ারি চালু করে দিতে না পারি, মন্ত্রীসাবরে এই কোম্পানীগঞ্জ থেকে আপনাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবা।’
শামীম আহমদ বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘আমি যেখান কইরাম (বলছি), যদি আপনার কোয়ারি না চলে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইমরান আহমদরে কোম্পানীগঞ্জ থেকে আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করমু দলমত–নির্বিশেষে সবাই মিইলা। আর আল্লার ওয়াস্তে আপনারা একটা ভোট নৌকা মার্কায় দেউকা (দেন)। প্রধানমন্ত্রীর ইজ্জত রক্ষায়, মাননীয় জেলার নেতৃবৃন্দের ইজ্জত রক্ষায় ভোট দেউকা।’
সিলেটের তিনটি উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর নিয়ে সিলেট-৪ সংসদীয় আসন। এ আসনের সাংসদ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তাঁর সংসদীয় আসনের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জের ‘ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি’। এর বাইরে একই উপজেলায় শাহ আরেফিন পাথর কোয়ারি ও উৎমা পাথর কোয়ারিরও অবস্থান।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন করায় পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ জন্য ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাথর উত্তোলন বন্ধ রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। যদিও বালু তোলার নাম করে একশ্রেণির পাথর কারবারিরা নানা কৌশলে পাথর তুলছেন। পুনরায় পাথর উত্তোলনের সুযোগ তৈরি হলে কোয়ারি এলাকার পরিবেশ ঝুঁকির মুখে পড়বে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বক্তৃতার বিষয়ে শামীম আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কইতা (বলতে) আছলাম (চেয়েছিলাম) এক লাখান (রকম), কইছি আরেক লাখান। আমার মন থাকি কইছি না। কথা কওয়াত (বলতে) মিস হই গেছে। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘তিনি (শামীম) সভাপতির বক্তৃতা দিয়েছেন। সবার শেষে হওয়ায় সভাপতির বক্তৃতা সাধারণত কেউ শোনে না। আমরাও তাঁর বক্তৃতা খেয়াল করিনি।’