- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১০:১৪, আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:৫৫
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছিল।
নানা সমালোচনা এবং আপত্তি সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
নির্বাচনের ১১ দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ইয়াজউদ্দিন আহমদকে ইস্তাফা দিতে বাধ্য করেন সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হন রাষ্ট্রপতি। এর পেছনে পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা ছিল পর্দার আড়ালে এবং সামনে থেকে।
ঢাকায় কূটনীতিকদের ‘কফি গ্রুপ’
২০০৬ সালের শেষ দিকে এবং ২০০৭ সালের প্রথম দিকে ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা দেশের কিছু কূটনৈতিক ছিলেন বেশ তৎপর।
এদের মধ্যে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী এবং ঢাকায় জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়ান ছিলেন সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।
রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য তারা দফায়-দফায় খালেদা জিয়া এবং হাসিনার সাথে বারবার বৈঠক করেছেন।
উইকিলিকসে প্রকাশিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিসের গোপন তারবার্তা থেকে জানা যায়, ঢাকাস্থ পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য নিজেদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক করতেন। যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘কফি গ্রুপ’।
এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি। এই গ্রুপে জাপানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে নানা আয়োজন করেন ঢাকাস্থ পশ্চিমা কূটনীতিকরা।
বাংলাদেশের সঙ্ঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তারা প্রায়ই বিবৃতি দিতেন।
বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক যাতে একই ধরণের উদ্বেগ প্রকাশ করে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে ঢাকাস্থ কূটনীতিকরা লন্ডন এবং ওয়াশিংটনকে জানান।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গোপন তারবার্তা থেকে জানা যায়, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র দফতর কিংবা ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস যাতে পশ্চিমাদের মতো উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে ওয়াশিংটনকে পরামর্শ দেয়া হয়।
জাতিসঙ্ঘের সতর্কবার্তা
২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসঙ্ঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের বিশেষ দূত এবং জাতিসঙ্ঘের নির্বাচন সহায়তা বিভাগের পরিচালক ক্রেইগ জেনেস।
অভিযোগ উঠেছিল, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিলেও কার্যত দেশ পরিচালনা করছিল বিএনপি। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইয়াজউদ্দিন আহমদ।
ঢাকায় এসে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলেন এবং এরপর একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সে সংবাদ সম্মেলনে ক্রেইগ জেনেস বেশ কিছু সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট অব্যাহত থাকলে তা বাংলাদেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জেনেসকে উদ্ধৃত করে দৈনিক ইত্তেফাক রিপোর্ট করে, ‘জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের সর্বাধিক সেনা সদস্য রয়েছেন এবং তারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন। দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর প্রভাব জাতিসঙ্ঘে কর্মরত বাংলাদেশী সৈন্যসহ অন্যান্য কার্যক্রমের উপর পড়বে।’
উপদেষ্টা পরিষদে বিদ্রোহ
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ইয়াজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে চার উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। তারা ছিলেন আকবর আলী খান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী, সিএম শফি সামি ও সুলতানা কামাল।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহমদ সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য একক সিদ্ধান্ত নিলে সঙ্কটের শুরু হয়।
চার উপদেষ্টার পদত্যাগের পরে আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি ও কানাডার প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সে ঘটনায় বেশ খোলাখুলি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বলেন, এ পদত্যাগে তিনি বিস্মিত নন। তাদের পদত্যাগের কারণ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপদেষ্টাদের পদত্যাগের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদের সাথে বৈঠক করেন।
সে সময় ঢাকার দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, তিনি (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) রাষ্ট্রপতিকে বলেন, ‘চার উপদেষ্টার পদত্যাগ দুঃখজনক। কারণ তারা সম্মানিত ব্যক্তি ও দেশপ্রেমিক ছিলেন।’
একই সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে কি না সেটি যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করবে।’
সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার সাথে পৃথক বৈঠক করেন।
সে বৈঠকের পর ঢাকাস্থ আমেরিকার দূতাবাস থেকে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহবান জানানো হয়।
আমেরিকা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র দৈনিক যুগান্তর পত্রিকাকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী যাতে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ না করে তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচন বর্জন
২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাজনৈতিক জোট নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। এতে রাজনৈতিক সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়। কারণ তখন নির্বাচনের বাকি তিন সপ্তাহেরও কম সময়।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমা কূটনৈতিকদের আরো সক্রিয় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। নির্বাচন বর্জনে আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা হতাশা প্রকাশ করেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বলেন, বৈধ ও গ্রহণযোগ্য সরকার নিশ্চিত করতে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
তার এ মন্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্রে বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়। তখন অনেকে অনুমান করছিলেন যে বিএনপি নেতৃত্বে জোটের পক্ষে এককভাবে হয়তো নির্বাচন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তখন এক বিবৃতির মাধ্যমে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বক্তব্যকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ব্রিটিশ হাই কমিশনারের বক্তব্যকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত হিসেবে বর্ণনা করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটকে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহবান জানায়। একইসাথে সব দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানায়।
কূটনীতিকদের শেষ মুহূর্তের চেষ্টা
একদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন বর্জন এবং অন্যদিকে রাস্তায় সহিংসতা। পরিস্থিতি দিনকে দিন অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছিল। নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাজনৈতিক জোট অবরোধের ডাক দেয়।
এমন অবস্থা আমেরিকার রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস এবং ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে তার হাওয়া ভবন কার্যালয়ে দেখা করেন। এই বৈঠকটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ব্রিটিশ হাই কমিশনার একসাথে শেখ হাসিনার সাথেও বৈঠক করেন ধানমন্ডিতে তার সূধাসদনের বাসায়। এসময় আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।
নির্বাচন এক থেকে দেড় মাস পেছানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমেরিকা এবং ব্রিটেনের দূত। তৎকালীন প্রকাশিত সংবাদমাধ্যম থেকে এমন খবর পাওয়া যায়। কিন্তু বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অনাগ্রহের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়।
দৈনিক যুগান্তরে তখন খবর প্রকাশিত হয় যে, ‘রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থ।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সাথে বৈঠকের পর ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস তার বক্তব্যে আর কোনো রাখঢাক করেননি।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচনের যে প্রস্তুতি চলছে তা গভীর হতাশার সৃষ্টি করেছে। এ নির্বাচন বিশ্বের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করা কঠিন হবে।
বাংলাদেশের ঘটনা প্রবাহের দিকে তখন নজর রাখছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
২০০৭ সালের ৪ জুন মাসে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস বলেছিলেন, পরিস্থিতির অবনতি হলে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে।
বৈঠকের সূত্র উদ্ধৃত করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ তথ্য দিয়েছে। সে প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সে রকম কিছু হলে সেনাবাহিনী তাকেই সমর্থন করবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনাও বিশ্বাস করতেন যে কোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ তার পক্ষেই যাবে।
তখন আঁচ করা যাচ্ছিল যে পর্দার আড়ালে কূটনৈতিকরা হয়তো কোনো ভূমিকা রাখছেন।
এমন অবস্থায় ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাই কমিশনার বারবারা রিচার্ডসন এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হলেও আন্তর্জাতিক বিশ্বে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
চূড়ান্ত অবস্থা
১০ জানুয়ারি জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র নিউইয়র্ক থেকে এক বিবৃতিতে জানান, বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য তারা কোনো কারিগরি সহায়তা দেবে না। একইসাথে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য জাতিসঙ্ঘ ঢাকায় যে সমন্বয় অফিস খুলেছিল সেটিও বন্ধ করে দেয়।
সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হয় সে বিবৃতিতে।
২০০৭ সালের ৪ জুন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পদক্ষেপ নিতে চায়নি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা কূটনীতিকদের সাথে আলোচনার পরে ঢাকায় জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ কর্মকর্তা রেনাটা লক ডেসালিয়ান একটি বিবৃতিতে এই বলে সতর্ক করেন, বাংলাদেশে যদি নির্বাচন (২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন) অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জাতিসঙ্ঘের এই হুমকির কথা তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ তার বইতেও লিখেছেন।
‘শান্তির স্বপ্নে’ বইতে জেনারেল আহমেদ লিখেছেন, ‘সেনাবাহিনীর সীমিত আয়ের চাকরিতে সৈনিকদের একমাত্র অবলম্বন জাতিসঙ্ঘ মিশন। তাদের সামনে থেকে যদি সেই সুযোগ কেড়ে নেয়া হয় তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।’
১১ জানুয়ারি বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাস এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না।
সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া এই নির্বাচন তাদের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয় বলে জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
অবশেষে ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদকে পরিস্থিতি জানান এবং এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে যেতে তাকে বাধ্য করেন।
জরুরি অবস্থা জারি করে উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং ১২ জানুয়ারি ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে নতুন আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।
ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটি ইতিবাচক।
জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটকে দুঃখজনক হিসেবে বর্ণনা করে আমেরিকা বলে, রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছে।
অন্যদিকে ব্রিটেন বলে, এর ফলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ভারত এক প্রতিক্রিয়ায় বলে, বাংলাদেশের জনগণ সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করবে।
সূত্র : বিবিসি