বার্সেলোনায় ছিলেন ‘এমএসএন’–ত্রয়ী। লিওনেল মেসি, নেইমার ও লুইস সুয়ারেজদের স্বপ্নের সে ত্রয়ী দুটি লা লিগা, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিলেন, পেয়েছিলেন ট্রেবলের স্বাদ। এই ত্রয়ী ভেঙে গেছে, ত্রয়ীর দুজন নেইমার ও মেসি এখন পিএসজিতে। ক্লাবে নেইমারের সঙ্গে আগে থেকেই ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই তিনজনকে নিয়ে নতুন এক ত্রিফলার জন্ম দিয়েছে পিএসজি—‘এমএনএম’। অবশ্য ত্রয়ী গড়ে ওঠার আগেই ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে রিয়ালের পাঠানো ১৬ কোটি ইউরোর প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছে পিএসজি।
বাজারে গুঞ্জন এমবাপ্পেকে এভাবে আটকে রেখে খুব একটা লাভ হবে না পিএসজির। আগামী জুনেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এমবাপ্পের। স্পেন ও ফ্রান্সের বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এরপর নাকি মুফতেই রিয়ালে চলে যাবেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, রিয়ালের নাকি আর দেরি সইছে না। জানুয়ারিতেই এমবাপ্পেকে কিনতে চাইছে স্প্যানিশ ক্লাব। এ জন্য ৫ কোটি ইউরো বা ৪৮৩ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছে রিয়াল।
মৌসুমের শুরুতে পিএসজি চমকে দিয়েছিল একগাদা তারকাকে নিয়ে। মেসিকে দলে টেনে স্বপ্নের এক ত্রয়ীর জন্ম দিয়েছে ক্লাবটি। এক দলে মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে! কিন্তু এর মধ্যেই দল ছাড়ার ইচ্ছা জানিয়ে বসলেন এমবাপ্পে। তাঁকে পেতে রিয়াল ১৬ কোটি ইউরোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সে প্রস্তাব নাকি দলবদলের শেষ দিনে ২০ কোটি ইউরো পর্যন্ত নাকি বাড়িয়েছিল রিয়াল। কিন্তু পিএসজি এমবাপ্পের ব্যাপারে নাছোড়বান্দা হওয়ায় আর দলবদল হয়নি।
মৌসুম যত এগিয়েছে, এমবাপ্পের পিএসজি ছাড়ার ইচ্ছা তত স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমেই একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে পিএসজি যে ছাড়তে চেয়েছিলেন, সেটা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন। এরপর নিজের আত্মজীবনী কমিকস হিসেবে বের করেছেন। সেখানেও ছোটবেলা থেকে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা সুযোগ পেলেই দেখিয়ে দিয়েছেন। এই জানুয়ারি থেকেই এমবাপ্পে মুক্ত। আরও ছয় মাস পিএসজির সঙ্গে থাকলেও এখন চাইলে যেকোনো ক্লাবের সঙ্গে আগে থেকেই চুক্তি করে রাখতে পারবেন তিনি।
বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এরই মধ্যে রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে এমবাপ্পের। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতেই দেখা হচ্ছে রিয়াল ও পিএসজির। বর্তমান ক্লাবের প্রতি সম্মান প্রকাশ করেই নাকি এখনো রিয়ালের সঙ্গে চুক্তির কথা জানাতে রাজি নন এমবাপ্পে। তবে রিয়ালের সঙ্গে দুই লেগ শেষ হয়ে গেলে ক্লাব ছাড়ার কথা জানিয়ে দেবেন। আর মৌসুম শেষ হলেই রিয়ালে যাওয়ার কথাও জানিয়ে দেবেন। তবে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রিয়ালের সঙ্গে চুক্তিটা ফেব্রুয়ারি ও মার্চের দুই লেগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত করতে রাজি নন এমবাপ্পে। নিজের শহরের ক্লাবকে প্রকাশ্যে অপমান করার ইচ্ছা নেই তাঁর।
এমবাপ্পেকে তাই অন্তত এ মৌসুমের বাকি সময়েও পিএসজির জার্সিতেই দেখা যাবে বলে ধরে নিয়েছেন সবাই। কিন্তু আজ সবাইকে চমকে দিয়েছেন জিওভান্নি ব্রানচিনি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে স্পোর্তিং থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নেওয়ার সময় মধ্যস্থতা করা এই ইতালিয়ান এজেন্ট ফুটবল অঙ্গনে বেশ পরিচিত মুখ। তাঁর মক্কেলের তালিকায় বর্তমানে বড় কোনো তারকা নেই। তবে একসময় রোনালদো নাজারিও, রোমারিও ও কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে কাজ করা ব্রানচিনির কথা সবাই গুরুত্ব দিয়ে দেখে।
ইতালিয়ান পত্রিকা লা গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ব্রানচিনি সবাইকে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন, ‘এখন এটা পিএসজির ওপর নির্ভর করছে। রিয়াল মাদ্রিদ এমবাপ্পেকে এখনই পেতে চায় এবং ৫০ মিলিয়ন (৫ কোটি) ইউরো দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। আমি জানি না কী হবে। আমার মনে হচ্ছে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ মানুষের দৃষ্টি কাড়তে চাইছে । তাদের অবস্থা কত ভালো, সেটা জানানোর বার্তা। আর এমন একজন খেলোয়াড় গ্রীষ্মে মুফতে দল ছাড়বে, এটা তো খুবই দুঃখজনক।’ ব্রানচিনির ধারণা, পিএসজি বিক্রি করবে না। রিয়াল সভাপতি সেটা জানেন, কিন্তু ৬ মাসের জন্য ৫ কোটি ইউরোর প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতা যে কোনো স্বাভাবিকভাবে চলা ক্লাবের পক্ষে সম্ভব না, সেটাই মনে করিয়ে দিতে চান পেরেজ।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে তারকার অভাব না থাকলেও সত্যিকারের গোলশিকারি স্ট্রাইকার হাতে গোনা কয়েকজন। দুই মৌসুম ধরে পিএসজির সর্বোচ্চ গোলদাতা এমবাপ্পে। তাঁকে হারালে সে শূন্যস্থান পূরণ করার মতো মাত্র তিনজন খেলোয়াড় আছেন—আর্লিং হরলান্ড, হ্যারি কেইন ও দুসান ভ্লাহোভিচ। ব্রানচিনি বলেছেন, এমবাপ্পেকে ধরে রাখতে না পারলে অন্য কোনো বড় খেলোয়াড়ের দলবদল নিশ্চিত করবে পিএসজি, ‘বেশ রমরমা এক গ্রীষ্ম আসবে। হরলান্ড (আর্লিং), হ্যারি কেইন ও ভ্লাহোভিচ (দুসান)—এরা সবাই সংবাদের শিরোনাম হবে।’