ঢাকা
সাইফ স্পোর্টিংয়ের খেলা দেখে কে বলবে দলটির স্কোয়াড এতটা সমৃদ্ধ!
ডাগআউটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ আর্জেন্টিনার দিয়েগো আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি। তাঁর একাদশে বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চার খেলোয়াড়। রুয়ান্ডা জাতীয় দলের এক সেন্টারব্যাকের সঙ্গে আছেন নাইজেরিয়া জাতীয় দলের হয়ে খেলা দুই ফরোয়ার্ডও।
মৌসুমের প্রথম ম্যাচে আলো ছড়াতে পারেনি তারকাসমৃদ্ধ এই দলটি। আজ কমলাপুর শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপক্ষে ২–১ গোলে জয় পেয়েছে তারা।
স্বাধীনতা কাপে সাইফের জয় এনে দেওয়া গোলটি আত্মঘাতী। এর আগে দুই দলের দুটি গোলই এসেছে পেনাল্টি থেকে। মেহেদি হাসান সেনাবাহিনীকে এগিয়ে নেওয়ার পর সাইফকে সমতায় ফিরিয়েছেন নাইজেরিয়ার স্ট্রাইকার এমেকা ওগবাগ।
অনেক বছর বাদে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে খেলতে এসে ভয়ডরহীন ফুটবল উপহার দিয়েছে সেনাবাহিনী। দলটির ফিটনেস সর্বোচ্চ পর্যায়ের থাকবে, এটা অনুমেয়ই। সঙ্গে শৃঙ্খলিত রক্ষণভাগ, বৈচিত্র্যময় মাঝমাঠ ও গতিময় আক্রমণভাগ দেখে কখনোই মনে হয়নি পেশাদার ফুটবলের বাইরের কোনো দল তারা। দলে একমাত্র পরিচিত মুখ জাতীয় দল ও বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার মেহেদি হাসান। সার্ভিসেস দলের হয়ে খেলা মেহেদির নেতৃত্বে সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে চতুর্থ হওয়া সাইফের পরীক্ষা নিয়েছে সেনাবাহিনী।
খেলা দেখে বোঝা গিয়েছে আধুনিক ফুটবলের মৌলিক পাঠগুলোর সঙ্গে পরিচয় আছে সেনাবাহিনীর। নিজেদের পায়ে বল থাকলে আর প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ মাঝমাঠে এসে দাঁড়ালে পেছন থেকে ওভারল্যাপ করেছেন দুই ফুলব্যাক। ৪২ মিনিটে তাদের গোলটি তো লেফটব্যাক ইব্রাহিম খলিলের সৌজন্যেই। নিজেদের অর্ধ থেকে খলিলের উদ্দেশ্যে বাতাসে থ্রু দিয়েছিলেন সেন্টারব্যাক মেহেদি। দ্রুতগতিতে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বক্সে ঢুকে ক্রস করলে সাইফের সেন্টারব্যাক রিয়াদুল হাসানের হাতে লাগে। পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে বল জালে জড়াতে কোনো ভুলই করেননি মেহেদি।
গোলের খাতা খুলতে অত অপেক্ষা করতে হতো না সেনাবাহিনীকে! ৪ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের স্ট্রাইকার রঞ্জু শিকদার। মেহেদির থ্রুতে ফাঁকা হয়ে যায় সাইফের রক্ষণভাগ। দুর্দান্ত গতি কাজে লাগিয়ে রঞ্জু বক্সে ঢুকলে তাঁর সামনে শুধু গোলকিপার মিতুল হোসেন। পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে তাঁর নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন মিতুল।
গোল মিসের পর এল সেই গোল। তবুও কখনো রক্ষণাত্মক হয়ে যায়নি সেনাবাহিনী। ৪৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় সাইফ। মারাজ হোসেনের রক্ষণচেরা থ্রুতে বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই মফোন উদোহকে ফাউল করেন সেনাবাহিনী গোলরক্ষক জাফর সরদার। পেনাল্টি পায় সাইফ। স্পট কিক থেকে সমতায় ফেরান এমেকা ওগবাগ।
সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভাঙতে নিজেদের ডান প্রান্তটাই বেশি ব্যবহার করেছেন ক্রুসিয়ানি। উইঙ্গার ফয়সাল হোসেনের সঙ্গে রাইটব্যাক নাসিরুল ইসলাম। গতির সঙ্গে দুজনেরই বলের দখল ভালো। ফাহিমের জায়গায় বদলি হিসেবে জমির উদ্দিন নামলেও সেই একই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। ৮০ মিনিটে জমির ও নাসিরুলের রসায়নের চাপে পড়েই মেহেদির আত্মঘাতী গোল। বক্সের পাশ থেকে জমির ব্যাক হিল করলে ক্রস করেন নাসিরুল। হেডে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে জালে জড়িয়ে দেন মেহেদি। এর পরে সাইফ রক্ষণাত্মক হয়ে পড়লে আর ম্যাচে ফেরা হয়নি সেনাবাহিনীর।
এ ম্যাচেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাইফের মিডফিল্ডার ও জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় সাহেদুল আলম।