ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে কাল শুরু হচ্ছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসর

ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট ও ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। – ছবি : সংগৃহীত

আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। এই ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসর। তাই এই সিরিজটিকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখছে দু’দল।

সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে ভারত-ইংল্যান্ড। এ জন্য সিরিজের শুরুটা ভালো হওয়া দরকার বলে মনে করে দুই দলই। তাই জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে চায় দু’দলই। নটিংহামে বিকেল ৪টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের ফাইনালে উঠেছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ড। ১৮ জুন সাউদাম্পটনে শুরু হওয়া ফাইনালে ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে প্রথম আসরের শিরোপার স্বাদ নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ওই ফাইনাল ম্যাচের পর ইংল্যান্ডেই থেকে যায় ভারতীয় ক্রিকেট দল।

কারণ করোনার কারণে কঠোর জৈব-সুরক্ষা বলয়ে থাকার নিয়মের জন্য দেশে ফিরে যায়নি ভারতীয় দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলেই দেশে ফিরবে টিম ইন্ডিয়া।

তবে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ইনজুরি থাবা পড়েছে ভারত শিবিরে। ইনজুরিতে সিরিজ শেষ ওপেনার শুবমান গিল ও স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের। আর সোমবার অনুশীলনে মাথায় বলের আঘাত পাওয়ায় প্রথম টেস্টে থাকছেন না আরেক ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল। গিল ও সুন্দরের পরিবর্তে শ্রীলংকা সফরে থাকা পৃথ্বী শ ও সূর্যকুমার যাদবকে ইংল্যান্ডে উড়িয়ে এনেছে ভারত টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে প্রথম টেস্টে রোহিত শর্মার সাথে লোকেশ রাহুল ইনিংস শুরু করতে পারেন। প্রস্তুতি ম্যাচে কাউন্টি একাদশের বিপক্ষে পাঁচ নম্বরে নেমে ১০১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন রাহুল। আর ইংল্যান্ডের পিচের কথা ভেবে একাদশে একজন স্পিনারের সাথে চারজন পেসার রাখার পরিকল্পনা ভারতের।

পরিকল্পনা যাই হোক, এই সিরিজে লড়াইয়ের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। স্কাই স্পোর্টসকে দেয়া সেই সাক্ষাৎকারে সতীর্থদের উদ্দেশে কোহলি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে জয়টাই শেষ কথা। ইংল্যান্ডে জয় পেলে তৃপ্তি আরো বেড়ে যায়। তাই নিজের ব্যক্তিগত নজির নিয়ে না ভেবে দলের জয়ের কথা ভাবতে চাই। মাঠে নামলেই জেতার কথা ভেবে এসেছি। এবারো সেই মানসিকতা নিয়ে খেলতে চাই। বিদেশের মাঠে আমরা আগেও টেস্ট সিরিজ জিতেছি। এবারো সেই একই ধারা বজায় থাকবে। আমরা জেতার জন্যই খেলবো। তাই অসহায় আত্মসমর্পণের প্রশ্নই আসছে না। আমাদের পুরো সিরিজে লড়াই করতে হবে। যাতে সাফল্য আমাদের সঙ্গী হয়। টেস্টের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনও এই মানসিকতা নিয়েই খেলতে হবে।’

কোহলি আরো বলেন, ‘এমন একটা টেস্ট সিরিজ খেলার জন্য সব ক্রিকেটার মুখিয়ে থাকে। আমি ও আমার দলও ব্যাতিক্রম নই। আমি জানি, প্রতিটা দিন আমাদের জন্য কঠিন হবে। তাই আরো পরিশ্রম করছি। এই শারীরিক ধকল নেয়ার জন্য মানসিক জোর থাকা প্রয়োজন। সেটা আমাদের মধ্যেও আছে। এবার সেটা প্রমাণ করার সময় এসেছে।’

২০০৭ সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে তিনটি সিরিজ খেলেও জয়ের দেখা পায়নি ভারত। রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে ওই তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতেছিলো ভারত। আর সর্বশেষ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে চার ম্যাচের সিরিজ খেলেছিলো দু’দল। নিজেদের মাঠে হওয়া চার ম্যাচের সিরিজটি ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিল ভারত।

ভারতের মতো ইনজুরির ধাক্কা না পেলেও, বেন স্টোকসকে হারানোর দুঃসংবাদ পায় ইংল্যান্ড। মানসিক অবসাদ ও আঙ্গুলের ইনজুরির জন্য ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতি নেন অলরাউন্ডার স্টোকস। ফলে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে খেলবেন না তিনি।

তবে নিজেদের কন্ডিশনে খেললেও ভারতকে শক্তিশালী মনে করছেন ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ পেসার জেমস এন্ডারসন। তিনি বলেন, ‘ভারত খুবই শক্তিশালী দল। বিদেশের কন্ডিশনে ভালো খেলা শিখে গেছে তারা। গেল তিন বছর ধরে ভারতের পারফরমন্সে চোখে পড়ার মতো। এছাড়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পর দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ডে আছে ভারত। এবার কন্ডিশন তাদের জন্য কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছি না । তবে সিরিজে ভালো করতে হলে আমাদের সেরাটা খেলতে হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’

ভারতের অধিনায়ক কোহলির উইকেট শিকারের জন্য মুখিয়ে আছেন এন্ডারসন। ইংল্যান্ডের হয়ে ৬১৭টি টেস্ট উইকেট নেয়া এন্ডারসন বলেন, ‘কোহলির উইকেটটা অবশ্যই আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে দারুণ ব্যাটসম্যান। ম্যাচে বড় প্রভাব ফেলতে পারে সে। তাই তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরাতে হবে। সাথে চেতেশ্বর পূজারাও আছে। সে উইকেটে জমে গেলে, তাকে থামানো কঠিন হবে।’

গেল ভারত সফরে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার ছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার জ্যাক লিচ। চার টেস্টে ১৮টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আসন্ন টেস্ট সিরিজে খেলতে নামতে চান অভিজ্ঞ স্পিনার। তিনি বলেন, ‘ভারতের মতো দলের বিপক্ষে কেমন খেলছি, তার উপরে নির্ভর করছে অনেক কিছু। দল হিসেবে আমরা কোন জায়গায় রয়েছি, সেটাও প্রমাণ হবে। গত সফরের অভিজ্ঞতা, আমাকে আত্মবিশ্বাসী রেখেছে। আর নিজেদের কন্ডিশনে আমরা সবসময়ই আত্মবিশ্বাসী। তারপর ভারতের বিপক্ষে ভালো খেললে আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়ে যায়।’

এখন পর্যন্ত ভারত-ইংল্যান্ড ১২৬টি টেস্ট খেলেছে। ইংল্যান্ডের জয় ৪৮টি, ভারতের জয় ২৯টিতে। ৪৯টি টেস্ট ড্র হয়েছে।

সূত্র : বাসস